You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.17 | মহুয়াগাঁ গণহত্যা (বীরগঞ্জ, দিনাজপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

মহুয়াগাঁ গণহত্যা (বীরগঞ্জ, দিনাজপুর)

মহুয়াগাঁ গণহত্যা (বীরগঞ্জ, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় ১৭ই মে। এতে ১০ জন কৃষক নিহত হয়।
বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম মহুয়াগাঁ। গ্রামটি বীরগঞ্জ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। অধিবাসীরা ধনাঢ্য হওয়ায় মহুয়াগাঁ গ্রামটি সাহাপাড়া নামে বেশি পরিচিত। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত একটি গ্রাম। একটি বিশেষ ধর্মীয় দিবসে এ গ্রামের পার্শ্ববর্তী পুনর্ভবা নদীর উত্তর দিকে প্রবাহিত জলরাশিকে পবিত্র বিবেচনা করা হয় এবং ঐ জল নিয়ে সনাতন ধর্মের হাজার-হাজার মানুষ দিনাজপুর অভিমুখে যাত্রা করে। এ কারণে মহুয়াগাঁকে পবিত্র গাঁ বলে মনে করা হয়।
মহুয়াগাঁ গ্রামে বর্ষাপাড়া, দাসপাড়া, নওপাড়া, মহুয়াগাঁ সাহাপাড়াসহ আরো কয়েকটি পাড়া আছে। ১৭ই মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা শান্তি কমিটি গঠনের কথা বলে এ গ্রাম থেকে ১০ জন নিরীহ কৃষককে ধরে নিয়ে হত্যা করে। গণহত্যার দু-তিন দিন আগে বিহারি রাজাকার সলিম গ্রামবাসীদের বলে যায় যে, গ্রামে একটি শান্তি কমিটি গঠন করা হবে এবং পাকিস্তানি সেনাদের জন্য চাঁদা তোলা হবে। তাহলে তারা আর কারো ক্ষতি করবে না।
সলিমের কথা অনুযায়ী ঘটনার দিন সকালে সাধ্যমতো চাঁদা নিয়ে লোকজন জনৈক হৃদয় রায়ের বাড়িতে জড়ো হয়। অনেকে চাঁদা জমা দিয়ে কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়, অনেকে অপেক্ষা করতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে বিহারিরা একটি পিকআপসহ পাকসেনাদের নিয়ে আসে এবং লোকজনকে পিকআপে উঠতে বলে। পিকআপটি ছোট বলে তাতে ১০ জন উঠতে পারে। এরপর পিকআপটি মহুয়াগাঁ বাজারে গিয়ে থামে। বাজারের পাশে একটি পুকুর আছে, যা জলাপুকুর নামে পরিচিত। উক্ত ১০ জনকে জলাপুকুর পাড়ে নিয়ে লাইনে দাঁড় করানোর পর ব্রাশ ফায়ার করলে সবাই নিহত হয়। হৃদয় রায়ের বাড়িতে জড়ো হওয়া বাকি লোকজন দূর থেকে তা দেখতে পেয়ে পালিয়ে যায়। এরপর বিহারি ও পাকসেনারা পিকআপ নিয়ে আবার এলেও হৃদয় রায়ের বাড়িতে আর কাউকে পায়নি। এ-সময় তারা অনেক নারীকে পাশবিক নির্যাতন করে।
মহৃয়াগাঁ গণহত্যায় নিহতরা সকলেই ছিল পেশায় কৃষক। তারা হলো— হৃদয় চন্দ্র রায় (৫৮) (পিতা দুর্গা প্রসাদ রায়, মহুয়াগাঁ সাহাপাড়া), নগর চাঁদ রায় (৫২) (পিতা টুনকু চন্দ্ৰ রায়, ঐ), হীরালাল রায় (৪৪) (পিতা রজনীকান্ত রায়, ঐ), প্রভাত চন্দ্র রায় (৪৩) (পিতা চন্দ্র মোহন রায়, ঐ), কৈলাশ চন্দ্র রায় (৩৮) (পিতা চন্দ্র মোহন রায়, ঐ), ভবানন্দ দাস (৩২) (পিতা শ্যামলাল দাস, দাসপাড়া), নেকেরু দাস (৩৯) (পিতা কেতর দাস, দাসপাড়া), বিজয় রায় (২৫) (পিতা হরসুন্দর রায়, চৌপুকুরিয়া), চিকান্দী দাই (পিতা নিচুপা দাই, বর্ষাপাড়া) ও টুকুরু দাস (পিতা ভটর দাস, দাসপাড়া)। নিহতদের মধ্যে দুজন কৈলাশ চন্দ্র ও প্রভাত চন্দ্র আপন সহদোর। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড