You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে মহেশপুর উপজেলা (ঝিনাইদহ)

মহেশপুর উপজেলা (ঝিনাইদহ) ছিল ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টরভুক্ত। তবে উপজেলার খালিশপুর ইউনিয়নটি ছিল পার্শ্ববর্তী বানপুর সাব-সেক্টরের অধীন। বয়রা সাব-সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদা। এ সাব-সেক্টরের আওতাভুক্ত অঞ্চল ছিল দক্ষিণে বেনাপোল সড়ক থেকে বামে মহেশপুর উপজেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত। এ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ভৈরব, কপোতাক্ষ, ইছামতি, কোদলা, বেতনা ও করতোয়া নদী। নদীগুলো যুদ্ধে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সাতই মার্চের ভাষণ পরের দিন সকালে মহেশপুর বাজারের অশ্বত্থতলায় শতশত লোক জড়ো হয়ে রেডিওতে তা শোনে। ভাষণে বঙ্গবন্ধুর সুস্পষ্ট ঘোষণা ছিল, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এ ভাষণ শোনার পর উপস্থিত জনতার বুঝতে বাকি থাকে না যে, পাকিস্তানের সঙ্গে বাঙালিদের আর থাকা সম্ভব হবে না, দেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণে স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ ছিল। তাই ১১ই মার্চ পান্তাপাড়া হাইস্কুল মাঠে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিকল্পে মাস্টার গিয়াসউদ্দিন (ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর)-এর নেতৃত্বে পান্তাপাড়ার সোনা গাজী, শামসুল হক মুন্সী, ডা. বিল্লাল হোসেন, হযরত আলী মোল্লা, জিন্নাত আলী (জিনু মোল্লা), পীরগাছার রবিউল মাস্টার, ইর্শালডাঙ্গার ডা. দেলোয়ার হোসেন, সামান্তপাড়ার আবদুস সাত্তার মণ্ডল প্রমুখ মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করেন। তাঁরা অন্যদেরও প্রশিক্ষণ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন। মহেশপুর থানা আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুর রহমানও যুবকদের মুক্তিসংগ্রামে প্রস্তুতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেন। যুবকরা লাঠি-সোঁটা, ইট- পাটকেল, দা-বল্লম ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাত্রিবেলা পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিতে শুরু করে।
আসন্ন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে সামাউল বিশ্বাস (বাথানগাছি) শেখ সাদউল্লাহ (মহেশপুর), শেখ নিজামউদ্দিন আহম্মদ (ভালাইপুর), দেবাশীষ দাস (মহেশপুর), ডা. নিয়ামত আলী ওরফে নিমাই ডাক্তার (মহেশপুর), কিসমত আলী বিশ্বাস (জলিলপুর), খালেক ব্যাপারী (জলিলপুর), আবুল হোসেন (বাজেখাঁপুর) প্রমুখ একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেন। পরে এঁরাই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। মহেশপুর থানা কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান চৌধুরী।
২৭শে মার্চ ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে শেখ নিজামউদ্দিন আহমদ ও শফিউদ্দিন বাবুসহ মুক্তিকামী জনতা মহেশপুর থানা অস্ত্রাগার থেকে বিভিন্ন প্রকারের ৩৭টি অস্ত্র হস্তগত করেন। পরে সেগুলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আনসার ও মুজাহিদদের মাধ্যমে চৌগাছায় অবস্থানরত মেজর হাফিজউদ্দিনের নিকট পাঠিয়ে দেয়া হয়। এসব অস্ত্র দিয়ে তাঁরা চৌগাছার শোলুয়াতে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিলের শেষদিকে মহেশপুরের কয়েকজন যুবক এবং মুজিব বাহিনী-র কয়েকজন সদস্য উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যান। ভারতের টালিখোলা (বনগাঁ), মতিগঞ্জ হাইস্কুল, চাঁপাবেড়ে, রানাঘাট, টাকিপুর, হাসনাবাদ, কল্যাণী, চাকুলিয়া প্রভৃতি স্থানে তাঁরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মুজিব বাহিনীর সদস্যরা দেরাদুন, হাফলং (আসাম) প্রভৃতি স্থানেও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
মহেশপুর উপজেলা সদরের দক্ষিণে যাদবপুর ইউনিয়ন বাজারে ইপিআর-এর একটি ক্যাম্প ছিল। ক্যাম্পের বাঙালি সদস্যরা ২৬শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং ২৭শে মার্চ নূরুল ইসলামের নেতৃত্বে ক্যাম্পে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এদিন সকালে যাদবপুর ক্যাম্পে কর্মরত দুজন অবাঙালি ইপিআর সদস্য পাঠান নেওয়াজ ও পাঞ্জাবি হাবিলদার আশরাফ খানকে বাঙালি কোম্পানি কমান্ডার নিরস্ত্র করেন। এরপর তারা দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করলে আমজনতা মাঠের মধ্যে তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলে।
বাঙালি ইপিআর সদস্যদের বিদ্রোহের খবর শুনে ২৭শে মার্চ যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন সাদেক যাদবপুর ক্যাম্পে আসেন। তিনি বাঙালি ইপিআরদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি আঁচ করতে পারেন এবং দ্রুত নিজ গাড়িতে চালকের আসনে গিয়ে বসেন। এ অবস্থায় ক্যাপ্টেন সাদেকের মনোভাব বুঝতে পেরে ইপিআর সিপাহি আশরাফ ক্যাপ্টেন সাদেকের কোমরে রাখা পিস্তল চেপে ধরেন এবং অপর এক বাঙালি সিপাহি ক্যাপ্টেন সাদেককে গুলি করেন। ঐ গুলি সাদেকের মাথা ভেদ করে আশরাফের বুকে বিদ্ধ হয়। ক্যাপ্টেন সাদেক ও আশরাফ উভয়ই ঘটনাস্থলে মারা যান। এটাই ছিল এ উপজেলায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ।
মহেশপুর উপজেলায় পাকবাহিনী প্রথম অনুপ্রবেশ করে ১৫ই এপ্রিল। যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে তারা কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও খালিশপুর হয়ে মহেশপুর আসে এবং মহেশপুর থানা হাসপাতালে ঘাঁটি স্থাপন করে। ১৫০ জন পাকিস্তানি সৈন্য এখানে অবস্থান নেয়। দত্তনগর কৃষি ফার্মের মসজিদ ও অফিসারদের আবাসিক ভবনে তারা আরেকটি ঘাঁটি স্থাপন করে। জীবননগর-কোটচাঁদপুর সড়কের পাশে হাসাদহ হাইস্কুলেও পাকসেনা ও রাজাকাররা অবস্থান করত। এ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে রবিউল হোসেন (মান্দারবাড়িয়া শান্তি কমিটির সভাপতি), আজিজুল হক খান (মহেশপুর পৌর এলাকার শান্তি কমিটির সম্পাদক), ইব্রাহিম মাস্টার (রুলি; রাজাকার প্রধান), মইনুল ইসলাম মাস্টার (বাঘাডাঙ্গা; থানার রাজাকার কমান্ডার), শামছুল আলম ধাবক (ফতেহপুর; রাজাকার কমান্ডার), আনসার আলী (রামকৃষ্ণপুর; কুখ্যাত রাজাকার, পাকিস্তানে পলাতক), আবদুল আজিজ (কাজির বেড়; কুখ্যাত রাজাকার), আবদুর রহমান হাজি (নেপা; রাজাকার), হাজি খেলাফত হোসেন (সামান্তা; রাজাকার), বাচ্চু হাজি (সামান্তা; রাজাকার), আবদুল ওহাব (পাথড়া; রাজাকার), আবদুল ওয়াহাব (হুদোপাড়া; রাজাকার), আবদুল মান্নান (পাতিবিলা, মহেশপুর পৌরসভা; রাজাকার), মনসুর ধাবক (ফতেহপুর; রাজাকার), মতিন শেখ (ফতেহপুর; রাজাকার) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এরা পাকবাহিনীর সহযোগী হিসেবে তৎপর ছিল। প্রতিটি ইউনিয়নে এরা শান্তি কমিটি গঠন করে। মহেশপুর থানা স্কুল ও বৈঁচিতলা জুনিয়র হাই স্কুলে রাজাকারদের ক্যাম্প ছিল।
রাজাকাররা পাকবাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধা, হিন্দু ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের ঘরবাড়ি চিনিয়ে দিত এবং তাদের ধরে নিয়ে যেতে সহায়তা করত। তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নারীধর্ষণ ও নারীদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করত। নিরীহ বাঙালিদের হত্যাকাণ্ডে তারা পাকবাহিনীকে সাহায্য করত এবং নিজেরাও হত্যাকাণ্ড চালাত। পাকবাহিনী রাজাকরদের সহযোগিতায় যাদবপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বিশ্বাস, তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র নূরুল ইসলাম (২৭শে মার্চ যাদবপুর ইপিআর ক্যাম্পে পতাকা উত্তোলনকারী) ও মেজ ছেলে নজরুলকে ধরে নিয়ে যায়। মেজ ছেলেকে দিয়ে বর্ণি ক্যাম্পের পাশে কবর খোঁড়ায়। আবুল হোসেন ও নূরুল ইসলামকে হাত-পা বেঁধে কাঁটাবিছানো কবরে জীবন্ত কবর দেয়।
পাকসেনারা গাড়াবাড়িয়া গ্রামের রাজাকার মোতালেব, হান্নান, মান্নান, মাজেদ, জলিল, খলিল, কাদের, নূর ইসলামসহ অন্যদের সহযোগিতায় দুজন নারীকে ধর্ষণ করে। তারা মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিনের বাড়িতে লুণ্ঠন চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। হুশোরখালী ও উজ্জ্বলপুর গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে। মহেশপুরের শিববাড়ি মন্দির গানপাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং অনেক বাড়িতে লুটপাট করে। সত্য বোষ্টমীর বাড়ি থেকে ১১০ বস্তা সিমেন্ট লুট করে নিয়ে যায়। আবদুল গণি হাজি ও লাল দেওয়ান (পান্তাপাড়া) পাকিস্তানি ক্যাম্পে দেখা করতে গেলে তাদের ক্যাম্পেই মেরে ফেলে। মংলা সুতোর (জলিলপুর), অবিনাশ মালো (জলিলপুর), খোকা প্রামাণিক, গোবিন্দ প্রামাণিক ও দুলাল দত্ত (মহেশপুর)-কে রাজারকাদের সহযোগিতায় জিপের সঙ্গে বেঁধে নিয়ে যায়। তাদের ভালাইপুর নিয়ে দা দিয়ে গলায় কোপ দেয় এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করে।
এ উপজেলায় পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির ছিল মহেশপুর থানা হাসপাতালে। এখানে স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের ধরে এনে নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো। যুবতী মেয়েদের ধরে এনে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে হত্যা করা হতো। পাকবাহিনীর দত্তনগর কৃষি ফার্ম ক্যাম্পে হুশোরখালী যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা সানাউরকে ধরে এনে বটগাছে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
মহেশপুর উপজেলার টিপপাকশিতে একটি গণহত্যা সংঘটিত হয়। এতে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে ভারতগামী ১৮ জন হিন্দু শরণার্থী নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়। এছাড়া এ উপজেলায় একটি বধ্যভূমি ও একটি গণকবর রয়েছে মহেশপুর থানা হাসপাতাল সংলগ্ন বধ্যভূমি ও নোয়ানীপাড়া আমবাগান গণকবর। মহেশপুর থানা হাসপাতালের পূর্বপাশে এ বধ্যভূমিতে তিন থেকে চারশ লোককে হত্যা করা হয়। আর টিপপাকশির গণহত্যায় শহীদদের নোয়ানীপাড়া বাজারের পাশের আমবাগানে কবর দেয়া হয়
এ উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর বেশ কয়েকটি স্থানে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তন্মধ্যে দত্তনগর যুদ্ধ যাদবপুর যুদ্ধ উজ্জ্বলপুর যুদ্ধ মহেশপুর থানা রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন-, মথুরানগর যুদ্ধ, শ্রীরামপুর যুদ্ধ, হুশোরখালী যুদ্ধ, কৃষ্ণপুর যুদ্ধ ও সূর্যদিয়া- মুড়োতলা যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
দত্তনগর যুদ্ধ হয় নভেম্বরের শেষদিকে। এ-যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। যাদবপুর যুদ্ধ হয় ২০ ও ২১শে সেপ্টেম্বর। এতে ১০-১২ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরপক্ষে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৩ জন সাধারণ মানুষ শহীদ এবং ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। উজ্জ্বলপুর যুদ্ধ সংঘটিত হয় সেপ্টেম্বর মাসে। এ-যুদ্ধে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং বাকিরা পশ্চাদপসরণ করে। মহেশপুর থানা রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন পরিচালিত হয় দুবার – সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে এবং ১লা অক্টোবর। এতে ২ জন পাকসেনা ও ২ জন রাজাকার নিহত হয়। অপরপক্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। ৮ই অক্টোবর মথুরানগর যুদ্ধে ন্যূনপক্ষে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। অক্টোবর মাসের শেষদিকে শ্রীরামপুর যুদ্ধে ৩ জন পাকসেনা ও ১৪ জন রাজাকার নিহত হয়। হুশোরখালী যুদ্ধ হয় দুবার। প্রথমবার আগস্ট মাসের শেষদিকে এবং দ্বিতীয়বার ১৯-২১শে অক্টোবর। এ-যুদ্ধে বহু সংখ্যক পাকসেনা নিহত হয় এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৩ জন আহত হন। ২৯শে অক্টোবর কৃষ্ণপুর যুদ্ধে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৫ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। নভেম্বরের শেষদিকে সংঘটিত সূর্যদিয়া-মুড়োতলা যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও একজন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। এছাড়া মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ফতেহপুরের শিশুতলা বাসস্ট্যান্ড ও খালিশপুরে পাকবাহিনীর যুদ্ধ হয়। ৪ঠা ডিসেম্বর মহেশপুর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন- সিপাহি হামিদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ- (পিতা আক্কাস আলী, খোর্দ খালিশপুর)। উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- সিপাহি হামিদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ (২৮শে অক্টোবর শ্রীমঙ্গলের ধলই সীমান্ত চৌকি দখলের যুদ্ধে শহীদ), তবদীর হোসেন মোল্লা (পিতা আক্কেল আলী মোল্লা, পিরগাছা; ৩১শে মার্চ বিষয়খালীর যুদ্ধে শহীদ), সেকেন্দার আলী (পিতা জাফর আলী, পান্তাপাড়া ৩১শে মার্চ বিষয়খালীর যুদ্ধে শহীদ), বাচ্চু মিয়া (পিতা এবাদত ব্যাপারী, ঘুঘারি; জুলাই মাসে বেগমপুরের কুমড়োডাঙ্গা বিলের বটতলার যুদ্ধে শহীদ), তোফাজ্জেল হোসেন (পিতা ফজলুল হক গাজী, পান্তাপাড়া; আগস্ট মাসে ঘুঘারি গ্রামের যুদ্ধে শহীদ), আইয়ুব হোসেন (পিতা কিনুমদ্দিন শেখ, সেজিয়া; ২১শে সেপ্টেম্বর বর্ণি-যাদবপুর যুদ্ধে শহীদ), সানাউর রহমান (পিতা কালু মণ্ডল, মান্দারবাড়িয়া; ২৭শে অক্টোবর হুশোরখালীর যুদ্ধে পাকবাহিনীর হাতে ধৃত, পরে শহীদ), কবির হোসেন (রামকৃষ্ণপুর; ২৭শে অক্টোবর কুলিয়ার কৃষ্ণপুর যুদ্ধে শহীদ), ময়েনউদ্দিন (পিতা দীন মোহাম্মদ, বড়বাড়ি; ২৭শে অক্টোবর বর্ণি-যাদবপুর যুদ্ধে শহীদ), মফিজুর রহমান (পিতা রাজা মিয়া, ফতেহপুর; ৬ই নভেম্বর কোটচাঁদপুরের সাবদালপুর যুদ্ধে শহীদ) এবং রওশান আলী বিশ্বাস (পিতা মোবারক আলী বিশ্বাস, ভালাইপুর; নভেম্বরের শেষদিকে সূর্যদিয়া-মুড়োতলার সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ)
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ২০১১ সালে সরকারি অর্থায়নে এডভোকেট শফিকুল আজম খান চঞ্চল এমপি-র নেতৃত্বে মহেশপুর শহরের বাসস্ট্যান্ডে একটি ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নিজগ্রাম খোর্দ খালিশপুরের নাম পরিবর্তন করে ‘হামিদপুর’ রাখা হয়েছে। এছাড়া খালিশপুরে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান কলেজ ও মহেশপুরে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান জাদুঘর স্থাপিত হয়েছে। শহীদ মফিজুর রহমানের নামে তিনটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে ফতেহপুর বাজার থেকে মহেশপুর সরকারি কলেজ পর্যন্ত সড়ক, শিশুতলা বাজার থেকে ফতেহপুর বকুলতলা পর্যন্ত সড়ক এবং কোটচাঁদপুরের বলুহর বাসস্ট্যান্ড থেকে সাবদালপুর পর্যন্ত সড়ক। তাঁর নামে সাবদালপুরে ‘চারুকারু বিদ্যাপীঠ’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [অশোক বিশ্বাস]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!