মহেশপুর গণহত্যা (দেবীদ্বার, কুমিল্লা)
মহেশপুর গণহত্যা (দেবীদ্বার, কুমিল্লা) সংঘটিত হয় ১৭ই সেপ্টেম্বর। এতে ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর ও দেবীদ্বার উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে পাকসেনারা কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসে কুমিল্লা-সিলেট সড়কে মুরাদনগর ও দেবীদ্বারের বিভিন্ন রাস্তায় টহল দিত। টহল দেয়ার তৎপরতা ক্রমশই বাড়তে থাকে। স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান করত। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান পেতে স্থানীয়দের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাত। বিভিন্ন ইউনিয়নে রাজাকার কমান্ডাররা দলবলসহ গিয়ে সাধারণ লোকদের বাড়িতে লুটপাট করত এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিত। রাজাকাররা প্রায়ই পাকবাহিনীর জন্য গ্রামবাসীদের গরু-ছাগল ইত্যাদি নিয়ে যেত। বিশেষ করে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে তারা নির্মম অত্যাচার চালাত। ফলে বেশিরভাগ হিন্দু জীবন বাঁচাতে ভারতে চলে যায়। মুরাদনগরসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন নিরাপত্তার জন্য দেবীদ্ধার উপজেলার মহেশপুর গ্রামটিকে বেছে নেয়। গ্রামটি দেবীদ্বার উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিমি এবং ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৩৫ কিমি দূরে অবস্থিত। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে গ্রামটি অন্যান্য এলাকা থেকে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ছিল। তাই বিভিন্ন এলাকার নানা বয়সের মানুষ এ গ্রামে এসে আশ্রয় নিত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সোর্সদের সহায়তায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে উঠত|
১২ই সেপ্টেম্বর মুরাদনগর উপজেলার বাইরা গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোর বেশকিছু নারী ভারতের শরণার্থী ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য মহেশপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে সিএন্ডবি ব্রিজ পার হওয়ার সময় দেবীদ্বার উপজেলার রসুলপুরের লিল মিয়া রাজাকার (লিলা চোর) এবং মুরাদনগর উপজেলার বাইরার ফুল মিয়া রাজাকারের নেতৃত্বে একদল রাজাকার তাদের আটক করে এবং তাদের সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা, অলঙ্কার ও মূল্যবান সামগ্রী সবকিছু লুটে নেয়। এ-সময় মহিলারা তাদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য সবকিছু ফেলে দ্রুত মহেশপুর গ্রামে এসে আশ্রয় নেয়। রাজাকাররা মহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা থেকে তাদের বলপূর্বক নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা ৩ জন রাজাকারকে আটক করে জবাই করে হত্যা করে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য পাকসেনারা ১৭ই সেপ্টেম্বর মহেশপুর গ্রামে নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায় এবং লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ-সময় আব্দুল বারেক, মঞ্জুর আলী, আব্দুর রাজ্জাক, ছাফর আলী, আব্দুল জলিল (দুলু মিয়া), আনু মিয়া, সামসু মিয়া, আব্দুল মালেক, আব্দুল জলিল ও জনৈক রাজ্জাক মাস্টারের ভাইগ্লাসহ ১৪ নিহত হয়। [নাহিদ মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড