You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.18 | মহামায়া যুদ্ধ (ঝিনাইদহ সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

মহামায়া যুদ্ধ (ঝিনাইদহ সদর)

মহামায়া যুদ্ধ (ঝিনাইদহ সদর) সংঘটিত হয় ১৮ই সেপ্টেম্বর। এতে ৪ জন রাজাকার নিহত হয়। অন্যরা পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামবাসীর সহায়তায় তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়।
মহামায়া মধুহাটি ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি গ্রাম। সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা ১৭ই সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ভারতের বানপুর সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এ দলের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র ছিল। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দলটির মহামায়া গ্রামে পৌঁছতে ভোর হয়ে যায়। ভোর হওয়ায় তাঁরা কৌশলগত কারণে সম্মুখভাগে অগ্রসর না হয়ে ছোট-ছোট দলে বিভক্ত হয়ে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে অবস্থান নেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের এ অবস্থানের খবর গ্রামের নিকটবর্তী আনসারবাড়িয়া (কোটচাঁদপুর) ক্যাম্পের রাজাকাররা জেনে যায়। ১৮ই সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় তারা মহামায়া গ্রামের যেসব বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করছিলেন সেদিকে কাঁচা রাস্তা দিয়ে অগ্রসর হয়। এতে গ্রামবাসীরা ভীত হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারাও রাজাকারদের আগমনের সংবাদ জানতে পারেন। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারগণ যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, রাজাকার বাহিনী সেখানে পৌঁছামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গে-সঙ্গে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধারা বাড়ির গেইটের আড়ালে অবস্থান নিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। রাজাকাররাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে রাজাকারদের ঘিরে ফেলেন। এতে ৪ জন রাজাকার নিহত হয়। অন্যরা আক্রমণে টিকতে না পেরে পশ্চাদপসরণ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু গ্রামবাসীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ধরে ফেলেন। এরপর তাদেরও হত্যা করা হয়।
মহামায়া গ্রামের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় অর্জন শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আক্রমণ রচনায় তাঁদের মনোবল বাড়িয়ে দেয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বেশ কয়েকজন কমান্ডার নেতৃত্ব দেন। তাঁরা হলেন- দবিরউদ্দিন জোয়ার্দার, নজরুল ইসলাম, মশিউর রহমান ও আবু বকর। বানপুর সীমান্ত থেকে মহামায়া গ্রাম পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের পথপ্রদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন রুস্তম আলী। [মীর ইউসুফ আলী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড