You dont have javascript enabled! Please enable it! ময়মনসিংহ ডাকবাংলো বধ্যভূমি (ময়মনসিংহ সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

ময়মনসিংহ ডাকবাংলো বধ্যভূমি (ময়মনসিংহ সদর)

ময়মনসিংহ ডাকবাংলো বধ্যভূমি (ময়মনসিংহ সদর) ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের ডাকবাংলোকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার আলবদররা নির্যাতনকেন্দ্র ও বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করত। এখানে অসংখ্য মানুষ নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন। এপ্রিলে ময়মনসিংহ শহর পাকহানাদার বাহিনীর দখলে যাওয়ার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ ডাকবাংলোকে জেলা শান্তি কমিটির কার্যালয়ে রূপান্তরিত করে। এভাবে তারা ডাকবাংলোকে জেলা শান্তি কমিটির সভাপতি ও নেজামে ইসলামী দলের ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান মওলানা ফয়জুর রহমান, তার পুত্র অস্ত্রধারী রাজাকার তৈয়ুবুর রহমান, ইসলামী ছাত্র সংঘ, মোমেনশাহীর প্রেসিডেন্ট মো. আশরাফ হোসেন, সেক্রেটারি মো. কামারুজ্জামান (যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারে ২১শে এপ্রিল ২০১৫ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর) প্রমুখের আস্তানায় পরিণত করে। তারা এ ডাকবাংলো থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তৎপরতা চালাতে থাকে। তারা ডাকবাংলোর নিচতলায় একটি ঘরে বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করত। নির্যাতনে অনেকের হাত-পা ভেঙ্গে দিত, রক্তাক্ত অবস্থায় অনেককে ফেলে রাখত। নির্যাতিত অনেককে তারা গুলি করে হত্যা করে। কোনো-কোনো দিন নির্যাতিত মানুষদের রশি দিয়ে বেঁধে ডাকবাংলো সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে যেত। সেখানে নির্মমভাবে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করত। এসব কাজে রাজাকার ও আলবদরদের সহায়তা করত স্থানীয় বিহারি ও মুসলিম লীগ-এর কর্মীরা। ডাকবাংলো বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত নদের পাড়ে অসংখ্য মানুষের লাশ পড়ে থাকত। অনেক লাশ নদের জলে ভেসে যেত। স্বাধীনতার পর ডাকবাংলোর পেছনে গণহত্যা স্মারকস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। প্রতিবছর ২৫শে মার্চ ও ৯ই ডিসেম্বর অসংখ্য মানুষ এখানে এসে শহীদদের উদ্দেশে পুস্পস্তবক অর্পণ করে। [বিমল পাল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড