মল্লিকবাড়ী পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণ (ভালুকা, ময়মনসিংহ)
মল্লিকবাড়ী পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণ (ভালুকা, ময়মনসিংহ) পরিচালিত হয় ৭ই নভেম্বর। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে টিকতে না পেরে পরের দিন রাতে পাকহানাদাররা ভালুকা থানা ক্যাম্পে পালিয়ে যায়। ৯ই নভেম্বর মল্লিকবাড়ী হানাদারমুক্ত হয়।
জুন মাসের শেষদিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মল্লিকবাড়ী বাজারে ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্প ছিল বেশ শক্তিশালী। অপরদিকে মল্লিকবাড়ী থেকেই ভালুকায় মুক্তিযুদ্ধের যাত্রা শুরু হয়। ১৭ই এপ্রিল মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ ৭ জন সদস্য নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করেন এবং মল্লিকবাড়ী স্কুলে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্ৰ স্থাপন করেন। তাছাড়া কৌশলগত কারণেও মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট মল্লিকবাড়ী অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মল্লিকবাড়ী ক্যাম্প দখল করা তাঁদের জন্য জরুরি হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা মল্লিকবাড়ী ক্যাম্পে প্রায় ৩৫ বার গেরিলা আক্রমণ করেন। তাঁরা ছোট-ছোট দলে বিভক্ত হয়ে আচমকা এ ক্যাম্পে আক্রমণ করে মুক্তাঞ্চলে ফিরে যেতেন। তাঁরা অনেক সময় ছদ্মবেশ ধারণ করে আক্রমণ করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকতেন। এসব গেরিলা অক্রমণ হতো মল্লিকবাড়ী বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জোকাদরা খালের উত্তর পাড়ে বয়রারটেক থেকে। মুক্তিযোদ্ধারা বয়রারটেকে বিভিন্ন টিলার ওপর অবস্থান নিয়ে থাকতেন এবং পাকবাহিনী দেখা মাত্রই আক্রমণ করতেন। তাছাড়া হানাদার বাহিনী ডিফেন্স ছেড়ে বাইরে এলেই হামলার শিকার হতো। পাকবাহিনী রাজাকাররা মল্লিকবাড়ী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার জনগণের ওপর বিভিন্ন সময়ে বর্বরোচিত নির্যাতন চালাত। তারা গ্রামের বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিত এবং মালামাল লুট করে নিয়ে যেত। নির্বিচারে অসহায় নিরীহ মানুজনকে হত্যা করত। এসব কারণে ঐ এলাকার সাধারণ মানুষ হানাদার বাহিনীর ওপর খুবই ক্ষিপ্ত ছিল।
৭ই নভেম্বর কোম্পানি কমান্ডার খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা মল্লিকবাড়ী পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণ করেন। তাঁরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে তিনদিক থেকে মল্লিকবাড়ী ক্যাম্পে হামলা চালান। থেমে-থেমে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলের আশ্রয় নেন। তাঁদের আক্রমণে পাকসেনারা অবরুদ্ধ হয়ে ক্যাম্পে আটকা পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে টিকতে না পেরে এবং উপায়ান্তর না দেখে পাকসেনারা ৮ই নভেম্বর রাতে পালিয়ে ভালুকা ক্যাম্পে চলে যায়। ৯ই নভেম্বর মল্লিকবাড়ী হানাদারমুক্ত হয়। এদিন সকালে মল্লিকবাড়ী বাজারে পাকবাহিনীর বন্দি শিবিরে চারজন অজ্ঞাতপরিচয় যুবতির লাশ পাওয়া যায়। তাদের দেহ ছিল ক্ষতবিক্ষত। ধারণা করা হয়, পলায়নের পূর্বে পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করে। [মো. শফিকুল ইসলাম কাদির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড