You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে মনিরামপুর উপজেলা (যশোর)

মনিরামপুর উপজেলা (যশোর) বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য উপজেলাগুলোর মতো মনিরামপুরের জনগণেরও রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ১৯৭০-এর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করে ১লা মার্চ এক বেতার ভাষণে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য মূলতবী ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। মনিরামপুর উপজেলার মুক্তিকামী মানুষ এ আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। এরপর বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এ উদ্বুদ্ধ হয়ে সারাদেশের মতো এ অঞ্চলের স্বাধীনতাপ্রত্যাশী মানুষও ফুঁসে ওঠে আওয়ামী লীগ, পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি, পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল), কৃষক সমিতি এবং ছাত্র ইউনিয়ন-এর নেতৃত্বে এখানকার মানুষ মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ভারতে চলে যান এবং সেখানে মুক্তিযুদ্ধের তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধে এ অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর কমান্ডার খয়রাত হোসেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯শে এপ্রিল তাঁর নেতৃত্বে ২০ জন যুবকের একটি দল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মতিগঞ্জ মাঠে স্থাপিত প্ৰশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগদান করেন। এ দলে তাঁর সঙ্গে ছিলেন মনিরামপুরের মুজিব বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মান্নান। অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন আবুল হাসান, মতিয়ার রহমান, শামছুর রহমান, রতন কুমার রায়, বিকাশ চন্দ্র মল্লিক, রুহুল আমিন, মাস্টার ইমান আলী, আবু হোসেন প্রমুখ। প্রশিক্ষণ শেষে আগস্ট মাসের শেষদিকে তাঁরা দেশে ফিরে আসেন এবং অক্টোবর মাসের শেষদিকে মনিরামপুরে প্রবেশ করে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন।
মনিরামপুরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এখানকার বামপন্থী সংগঠনের নেতা-
কর্মীরা। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী মাশুকুর রহমান তোজো (পিতা এডভোকেট হাবিবুর রহমান, যশোর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা), ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের নেতা যশোর এম এম কলেজের ভিপি আসাদুজ্জামান আসাদ (পিতা শাহাদত আলী, খড়কি), জেলা শাখার সভাপতি আহসান উদ্দিন খান মানিক (পিতা আফাজ উদ্দিন, ডিসি বাংলো রোড), কৃষক সমিতি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শান্তি (পিতা আছির উদ্দিন, ষষ্টিতলা) ও ফজলুর রহমান (পিতা রজব আলী দফাদার, গোপালপুর)। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির যশোর এবং খুলনা জেলা কমিটির নেতা- কর্মীরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা না করে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন এবং দেশকে শুত্রুমুক্ত করার জন্য মাগুরা জেলার শালিখা থানার পুলুম ও খুলনা জেলার ডুমুরিয়া এলাকায় ঘাঁটি গড়ে তোলেন। তারা পার্টির অন্য কর্মীদের সংগঠিত করে একটি নিয়মিত বাহিনী এবং একটি গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলেন। যুদ্ধের শুরুতেই তাঁরা থানা ও ফাঁড়ি থেকে অস্ত্র সংগ্রহের পর হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী মাশুকুর রহমান তোজো- ভারতে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করার জন্য আলোচনা করেন। কলকাতায় কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। আগস্ট মাসে কমিউনিস্ট পার্টির পুলুম ঘাঁটি ভেঙ্গে গেলে এর প্রধান সংগঠক তোজো, শান্তি, মানিক, আসাদ ও ফজলু মনিরামপুরে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন।
মনিরামপুর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ফজলুল হক। মুজিব বাহিনী-র কমান্ডার ছিলেন খয়রাত হোসেন এবং ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন আব্দুল মান্নান।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মনিরামপুরের ঝাঁপার বাসিন্দা পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ফজলুল হক এপ্রিল মাসে নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে একটি গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলেন, যা এতদঞ্চলে ফজলু বাহিনী – নামে পরিচিত। তাঁর নেতৃত্বে এখানে বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়। মনিরামপুর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে যেসব গেরিলা যুদ্ধ হয় তার প্রায় সবকটিতেই তিনি নেতৃত্ব দেন। এপ্রিল মাসে পাকবাহিনী মনিরামপুরে অনুপ্রবেশ করে। তারা রাজগঞ্জ হাই স্কুল ও নেঙগুরা হাটে ক্যাম্প স্থাপন করে। এছাড়া গ্রিন্দবাবু নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে তারা রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে।
মনিরামপুর উপজেলায় পাকবাহিনীর দোসর হিসেবে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে যুদ্ধের পক্ষে কার্যকর প্রস্তুতি তেমন না থাকায় এখানে রাজাকারদের শক্ত ঘাঁটি গড়ে ওঠে। রাজাকাররা এ অঞ্চলে ব্যাপক তাণ্ডব ও নৃশংসতা চালায়। পাকবাহিনী ও রাজাকারদের তাণ্ডবে মনিরামপুরের পূর্বাঞ্চলের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা অনেকটা জনশূন্য হয়ে পড়ে। এতে নেতৃত্ব দেয় স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার আব্দুল মালেক ডাক্তার, রাজাকার বাহিনীর জল্লাদ মেহেরুল ইসলাম এবং রাজাকার ক্যাম্পের ওসি হিসেবে পরিচিত ডাক্তার মহিউদ্দিন। এ উপজেলার রাজাকার বাহিনীর অন্য সদস্যরা হলো— মেছের আলী মোড়ল (পাতনা), আব্দুর রহমান জয়দেবপুর), আব্দুল জলিল (সুবলকাটি), সোলেমান গাজি (সুবলকাটি), মাওলানা দীন মোহাম্মদ (হারাগাটি), হোসেন আলী গাজি (মাছিমনগর), মাওলানা নুরুল ইসলাম (মসুয়া), ফজলুর রহমান (চন্দনহাটি), আব্দুল আজিজ (কৃষ্ণহাটি), খোরশেদ আলী (শ্যামনগর), শামসুর রহমান (শ্যামনগর), শামছুর রহমান, (শ্যামনগর), শেখ আতিয়ার রহমান (মনিরামপুর), সফিউর রহমান (মনিরামপুর), ঈমান আলী (দুর্গাপুর), কেতাব আলী মোড়ল (হাকোবা), মোহাম্মদ উকিল (লক্ষণপুর), মুসা মোড়ল (হাজরাকাটি), আলতাফ হোসেন হাসেম (জালঝাড়া), আবুল (জালঝাড়া), আব্দুল মালিক মোড়ল (হাসাডাঙ্গা), দ্বীন আলী বিশ্বাস (মেহেরপুর), শওকত আলী (মেহেরপুর), আব্দুল মজিদ (বাকোশপোল), আফসার আলী (হাজরাকাটি), নেসার আলী (কপালিয়া), জাহিদ আলী বিশ্বাস (মনোহরপুর), ইরশাদ আলী (মাছুয়া), লিয়াকত আলী খান (মছিমনগর), আব্দুল হামিদ গাজি (বিজয়রামপুর), অশোক কুমার ঘোষ (ষোলোখাদা), আব্দুল হামিদ দফাদার (গোপালপুর), ফজর আলী দফাদার (গোপালপুর), মোকসেদ আলী (মনিরামপুর সদর), বজলুর রহমান ধাবক (হানুয়ার) ও আজিজুর রহমান (হানুয়ার)। আগস্ট মাসে মনিরামপুরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কমিউনিস্ট পার্টির তোজো, শান্তি, মানিক, আসাদ ও ফজলু রত্নেশ্বর গ্রামের আব্দুর রহমানের বাড়িতে অবস্থান নেন। এ খবর জানতে পেরে ২২শে অক্টোবর স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার আব্দুল মালেক ডাক্তারের নেতৃত্বে মেহেরুল ইসলাম ওরফে মেহের জল্লাদ, ইসাহাক ও আব্দুল মজিদসহ বেশ কয়েকজন রাজাকার চারদিক থেকে তাঁদের ঘিরে ফেলে আটক করে। এরপর রাজাকাররা তাদের হাত ও চোখ বেঁধে মনিরামপুরের সৈয়দ মাহমুদপুর গ্রাম সংলগ্ন চিনাটোলা বাজারের পূর্বপার্শ্বে হরিহর নদীর তীরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে। তাদের শরীরে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে রক্ত বের করে তাতে লবণ দেয় জল্লাদরা। এভাবে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্যাতনের পর ২৩শে অক্টোবর সকালে তাঁদের গুলি করে হত্যা করে। এটি হরিহর নদীরতীর হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত।
১০ই অক্টোবর রাজাকার ডাক্তার মহিউদ্দিনের নির্দেশে কুখ্যাত রাজাকার মেহের জল্লাদ ও তার ঘাতক বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা আকরামকে গ্রিন্দবাবুর বাড়িতে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে ৭ দিন যাবৎ তাঁর ওপর নির্যাতন চালায়। এরপর রাজাকাররা তাঁকে মনিরামপুর-রাজগঞ্জ সড়কের জুড়োনপুর- তাহেরপুর মোড়ে নিয়ে আসে এবং তাঁকে দিয়েই সেখানে বাঁশ পুঁতে তাতে একটি মাচা বানিয়ে হাত-পা বেঁধে তাঁকে উল্টা করে ঝুলিয়ে তাঁর ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরামের মৃত্যু হয়। এটি মুক্তিযোদ্ধা আকরাম হত্যাকাণ্ড হিসেবে পরিচিত।
১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পরও মনিরামপুরে রাজাকারদের নৃশংসতা বেশ কয়েকদিন অব্যাহত থাকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েকদিন পর আব্দুল হান্নান নামে ঝাঁপার এক মুক্তিযোদ্ধা ঝাঁপা বাওড় পার হওয়ার সময় ঐ অঞ্চলের রাজাকাররা তাঁকে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে।
মে মাসের শেষদিকে মনিরামপুরের মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে ফিরে এসে পাকবাহিনীর ব্যারাক এবং রাজাকারদের ক্যাম্প আক্রমণ করেন। এ উপজেলায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ৫ই আগস্ট চণ্ডিপুরে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারদের সঙ্গে একটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়। চণ্ডিপুর যুদ্ধএ ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং পাকসেনাদের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়। মে মাসের শেষদিকে নেঙগুরাহাটে পাকসেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। নেঙগুরাহাট যুদ্ধে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রেকি করার সময় দুজন মুক্তিযোদ্ধা রাজকারদের হাতে ধরা পড়লে রাজাকাররা তাঁদের হত্যা করে।
নেঙগুরাহাট যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন হানুয়ার গ্রামে। সেখানে জুন মাসের প্রথমদিকে রাজাকার ও পাকসেনাদের সঙ্গে তাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এটি হানুয়ার যুদ্ধ বলে পরিচিত। এ-যুদ্ধে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং রাজাকারদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। অক্টোবর মাসের শেষদিকে ডুমুরখালী গ্রামে রাজাকার ও পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের দু-দিনব্যাপী যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে ১০ জন রাজাকার নিহত হয় এবং ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এটি ডুমুরখালী যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। ৮ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজগঞ্জ হাই স্কুলের রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করলে সেখানে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। রাজগঞ্জ যুদ্ধএ বহুসংখ্যক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। অনেকে আত্মসমর্পণ করার পর জনতার গণপিটুনিতে প্রাণ হায়ায়।
। মনিরামপুরে মুক্তিযোদ্ধারা সাধারণত রাতের বেলা অপারেশন চালাতেন এবং দিনের বেলা আত্মগোপন করে থাকতেন। একদিন খয়রাত হোসেনসহ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল মদনপুর গ্রামে এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ঐ এলাকার রাজাকার সরদার মোসলেম আলী বিষয়টি জেনে রাজাকার ক্যাম্পে খবর দিলে রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা তখন খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাজাকারদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সহ-মুক্তিযোদ্ধাদের জানাতে একজন মুক্তিযোদ্ধা একটি গাছে উঠে ব্ল্যাংক ফায়ার করে বিপদ সংকেত দেন। সঙ্গে-সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা খাবার রেখে পজিশন নেন। এ-সময় রাজাকাররা তিনদিক থেকে তাদের আক্রমণ করলেও কোনোরকম ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধারা অন্যত্র সরে যেতে সক্ষম হন।
নভেম্বর মাসের শেষদিকে খয়রাত হোসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ মনিরামপুর থানা অপারেশন করেন। এখানে পাকবাহিনীর দোসরদের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে এক পর্যায়ে পাকবাহিনীর দোসররা থানা থেকে পালিয়ে যায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা মনিরামপুর থানা দখল করে অস্ত্রশস্ত্র র উদ্ধার করেন। ১৬ই ডিসেম্বর মনিরামপুর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
মনিরামপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- দুলাল চন্দ্ৰ হালদার (পিতা পাচু গোপাল হালদার, আলীপুর), শেখ আকরাম হোসেন (পিতা শেখ আলতাফ হোসেন, শেখপাড়া), মুকুন্দনাথ সরকার (পিতা দীননাথ সরকার, মহাদেবপুর), গোপালচন্দ্র মণ্ডল (পিতা শম্ভুনাথ মণ্ডল, শ্রীপুর), লুৎফর হোসেন (পিতা এনেজ মোল্লা, ব্রহ্মপুর), র নূরুল ইসলাম (পিতা করিম বিশ্বাস, রোহিতা), আব্দুর রাজ্জাক (পিতা নিজাম সরদার, হানুয়ার), জামসেদ আলী (পিতা মাহতাব সরদার, হানুয়ার), শাহাদত হোসেন (পিতা মাহতাব সরদার, ঝাঁপা), নসির আলী (পিতা লালচাঁদ গাজি, ঝাঁপা), জামাল উদ্দিন (পিতা মোহাম্মদ হোসেন খান, গৌরীপুর), আব্দুস সাত্তার (পিতা হিরাজতুল্লা মোল্লা, খালিয়া), আব্দুল মজিদ (পিতা গোলাম আলী দফাদার, মোবারকপুর), সেলিম রেজা (পিতা বুধই গাজি, চাকলা), ডা. আনিসুর রহমান (পিতা বাছতুল্লা গাজী, নোয়াখালী), অনীল রাজবংশী (পিতা নগীগিন্দর রাজবংশী, বাজিতপুর), মাশুকুর রহমান তোজো (পিতা এডভোকেট হাবিবুর রহমান, ষষ্টিতলা, যশোর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা), আসাদুজ্জামান আসাদ (পিতা শাহাদত আলী, খড়কি, যশোর), সিরাজুল ইসলাম শান্তি (পিতা আছিরউদ্দিন, ষষ্টিতলা, যশোর), আহসান উদ্দিন মানিক (পিতা আফাস উদ্দিন, বাংলো রোড, যশোর) এবং ফজলুর রহমান (পিতা রজব আলী দফাদার, গোপালপুর)। মনিরামপুর উপজেলার চিনেটোলা বাজারের পাশে হরিহর নদীর তীরে ৫ বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে। [আমিনুর রাহমান মামুন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!