You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.14 | মনোহরপুর গণহত্যা (মান্দা, নওগাঁ) - সংগ্রামের নোটবুক

মনোহরপুর গণহত্যা (মান্দা, নওগাঁ)

মনোহরপুর গণহত্যা (মান্দা, নওগাঁ) সংঘটিত হয় ১৪ই ডিসেম্বর। নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে পাকবাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় সংঘটিত এ গণহত্যায় ১৬ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান।
ঘটনার দিন বিকেল ৩টার দিকে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা সদলপুর থেকে মনোহরপুরে হানা দেয়। পাকসেনাদের কাছে তথ্য ছিল যে, মজিরউদ্দিন প্রামাণিকের নেতৃত্বে মনোহরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্প রয়েছে। এ ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধাদের আটক করার জন্য পাকসেনারা কালিকাপুর ডাকবাংলো ক্যাম্প থেকে মনোহরপুরে আক্রমণ করে। তারা প্রথমে পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা খবর পেয়ে পূর্বে নিরাপদ স্থানে চলে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের না পেয়ে পাকসেনারা বিভিন্ন বাড়ি থেকে সাধারণ মানুষদের ধরে এনে মুক্তিবাহিনীর খোঁজ নেয়ার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে পার্শ্ববর্তী বিলে মাছ ধরতে আসা জেলেদের কয়েকজনকেও তারা ধরে আনে। এরপর ধৃত লোকদের লাইনে দাঁড় করায়। প্রথমে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অতঃপর দুজন করে এক সঙ্গে পিঠে পিঠ লাগিয়ে জোড়া করা হয় এবং সৈন্যরা সামনে থেকে তাদের লক্ষ করে গুলি ছুড়তে থাকে। গুলিতে একে-একে সবাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এভাবে এ স্থানে ১৬ জন নিহত হন ও একজন গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করে পাকসেনারা তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তাদের ওপর আমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড শেষে পাকসেনারা মজিরউদ্দিন প্রামাণিকের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। বিভিন্ন বাড়িতে তারা লুটপাট করে।
মনোহরপুর গণহত্যায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন- আছির উদ্দিন (পিতা আজগর, মনোহরপুর), অফির উদ্দিন (পিতা আছির উদ্দিন, মনোহরপুর), লহর উদ্দিন (পিতা ইনাতুল্লা প্রামাণিক, মনোহরপুর), ছবো মোল্লা (পিতা ফরিদ মোল্লা, মনোহরপুর), ছাইদুর রহমান (পিতা লাহার উদ্দিন, মনোহরপুর), দছন মোল্লা (পিতা ইস্তল মোল্লা, মনোহরপুর), ননী প্রামাণিক (পিতা খবির উদ্দিন মণ্ডল, মনোহরপুর), বদর উদ্দিন (পিতা বছির উদ্দিন, মনোহরপুর), বনি মোল্লা (পিতা মজো মোল্লা, মনোহরপুর), আফজাল হোসেন (তুডুকগ্রাম), শহর উদ্দিন (পিতা বছির মণ্ডল, তুডুকগ্রাম), রমজান আলী (পিতা খাতু মণ্ডল, তুডুকগ্রাম), মছির উদ্দিন মণ্ডল (পিতা বছির উদ্দিন মণ্ডল, তুডুকগ্রাম), অফির মণ্ডল (পিতা গোলাপ মণ্ডল, চকমনোহরপুর), কাছের আলী (গাংতা) ও সামির উদ্দিন মণ্ডল (পিতা জামির মণ্ডল, কুকরাইল)। গুরুতর আহত ব্যক্তির নাম লাহার উদ্দিন প্রামাণিক। মনোহরপুর গণহত্যায় শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনিতে যাদের রক্ত ঝরেছে’ শিরোনামে ১৬ জনের একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। [চিত্তরঞ্জন মিশ্র]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড