You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক মমতাজ উদ্দিন

মমতাজ উদ্দিন, বীর প্রতীক (১৯৩০-২০০৪) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩০ সালে রংপুর সদর থানার মুন্সিপাড়া (বর্তমান নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়া)-য় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ওমর আলী এবং মাতার নাম করিমন নেছা। তিনি রংপুর জেলা স্কুলে পড়াশোনা করেন।
মমতাজ উদ্দিনের কর্মজীবন শুরু হয় ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)-এ যোগদানের মাধ্যমে। চাকরি লাভের পর ঢাকার পিলখানায় তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে হাবিলদার হিসেবে তিনি ঠাকুরগাঁ ইপিআর হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ ইপিআর-এর বাঙালি সৈনিকদের অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি সে অনুযায়ী অস্ত্র জমা দিতে গেলে হঠাৎ ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্দি হয়েছেন এটা বুঝতে পেরে তিনি সাহস ও কৌশল প্রয়োগ করে জানালা ভেঙ্গে পাকসেনাদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদের আক্রমণ করেন এবং কয়েকজন পাকসেনাকে হতাহত করে পালাতে সক্ষম হন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের দায়িত্ব পালন করেন। পরে মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে ৩নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে এই সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা যখন সিলেট শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তখন টিলার ওপর পাকসেনাদের একটি ক্যাম্প দখলে আনা খুব জরুরি হয়ে পড়ে। মমতাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা টিলার নিচ থেকে ক্রলিং করে ওপরে গিয়ে ঐ ক্যাম্প আক্রমণ করেন। এখানে পাকসেনাদের সঙ্গে তাঁদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৪ জনকে বন্দি করে সেক্টর কমান্ডারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পাকক্যাম্প দখল করার পর মমতাজ উদ্দিন টিলার ওপর বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এ-যুদ্ধে মমতাজ উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁকে ভারতে চিকিৎসা দেয়া হয়। স্বাধীনতার প্রায় এক মাস পর তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্যসাধারণ অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার মমতাজ উদ্দিনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৪০, খেতাবের সনদ নং ১৯০)। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যোগদান করেন এবং ১৯৮১ সালে সুবেদার মেজর হিসেবে চট্টগ্রামের রামগড় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর জীবনে তিনি পারিবারিক ব্যবসা পরিচালনা করেন। স্থানীয়ভাবে তিনি একজন সমাজদরদি ও পরোপকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি তিন কন্যা ও চার পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মোছা. জোহরা বেগম। ২০০৪ সালের ২১শে জুন মমতাজ উদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!