You dont have javascript enabled! Please enable it!

স্থানীয় মুক্তিবাহিনী মন্ত বাহিনী (জুড়ী, মৌলভীবাজার)

মন্ত বাহিনী (জুড়ী, মৌলভীবাজার) একটি স্থানীয় মুক্তিবাহিনী। এ বাহিনীর প্রধান ছিলেন শ্রীমন্ত রায় চৌধুরী। ফেঞ্চুগঞ্জ কলেজে ছাত্র থাকাকালে তিনি বাম রাজনীতির প্রতি ঝুঁকে পড়েন। কমরেড তোয়াহা, কমরেড আবদুল হক, কাজী জাফর আহমদ, হায়দার আকবর খান রনো প্রমুখ কেন্দ্রীয় নেতা এবং হবিগঞ্জ মহকুমার বাহুবলের সুনীল লৌহ, মৌলভীবাজার মহকুমার কুলাউড়ার সৈয়দ আকমল হোসেন, কমলগঞ্জের আবু কায়ছার খান, সিলেটের পঙ্কজচন্দ্ৰ দেবনাথ, মফিজ আলী প্রমুখের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ফেঞ্চুগঞ্জে গোপনে একটি সশস্ত্র দল গঠন করেন, যা মন্ত বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করে। তাঁদের সঙ্গে পরবর্তীকালে যুক্ত হন শিলুয়ার মখলিস, ধামাই চা- বাগানের মাখন রুদ্রপাল প্রমুখ। হাওড় কড়াইয়ার কৃষক আন্দোলন এবং ধামাই চা-বাগানের ১৪ দিনের সফল কর্মবিরতিতে তাঁদের মুখ্য ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মন্ত বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে প্রশিক্ষণে যোগ দেন। শ্রীমন্ত রায় চৌধুরী কয়েকজনকে নিয়ে কৈলাশহর চলে যান এবং উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য লোহারবন্দে রিক্রুট হন। সেখানে তজমুল আলী ও মখলিসসহ তিনি জুনিয়র লিডারশিপ ট্রেনিং সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন। তাঁদের তখন কমলপুর সাব- সেক্টরে পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘ হতে পারে এবং দেশের ভেতরে অবস্থান করে গেরিলা পদ্ধতিতে মুক্তিযুদ্ধ অধিক কার্যকর হবে এ যুক্তি তিনি কমলপুর সাব-সেক্টরের ইনচার্জ সুবেদার মঞ্জুরকে বোঝাতে সক্ষম হন এবং মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে পরিণত করার লক্ষ্যে সুবেদার মঞ্জুরের নিকট থেকে কিছু অস্ত্রশস্ত্র ও গোলা-বারুদ নিয়ে শিলুয়া চা-বাগান সংলগ্ন মন্ত্রিগাঁও-এ অবস্থান নেন। দিনের বেলা আত্মগোপন করে থেকে রাতের আঁধারে স্থানীয় যুবসমাজকে তিনি সংগঠিত করে হালকা প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোদ্ধায় পরিণত করতে থাকেন। আগের সঙ্গী-সাথীদের অনেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে নানা সাব-সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলেও তাঁর সহ-অধিনায়ক হিসেবে মখলিস সার্বক্ষণিক ছিলেন। নতুনদের নিয়ে তিনি আবার তাঁর বাহিনীকে দাঁড় করান এবং শিলুয়া, কলাবাড়ি, গোয়ালবাড়ী, জুড়ী প্রভৃতি এলাকায় ঝটিকা হামলা চালিয়ে পাকবাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত ও সন্ত্রস্ত রাখার কৌশল নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন।
মন্ত বাহিনীর উল্লেখযোগ্য দুটি যুদ্ধ হচ্ছে জুড়ী বাজার ও শিলুয়া চা-বাগান ফ্যাক্টরিতে আক্রমণ। শিলুয়া চা-বাগান ফ্যাক্টরিতে আক্রমণের পূর্বে শ্রীমন্ত রায় চৌধুরী রাঘনা- রানীবাড়ি ক্যাম্পের অধিনায়ক এম এ মোমিত আসুকের নিকট থেকে অস্ত্র, গোলা-বারুদ ও সৈন্য চেয়ে নেন। এ- যুদ্ধে ভোকতেরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদুল নূর আহত অবস্থায় ধরা পড়ে কঠোর নির্যাতনের পর শাহাদাৎ বরণ করেন। তাঁকে জুড়ী সাব-সেক্টরে এনে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় এবং জুড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনের পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। [হাসনাইন সাজ্জাদী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!