You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.07 | মনাকষা গণহত্যা (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

মনাকষা গণহত্যা (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

মনাকষা গণহত্যা (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৭ই অক্টোবর। ঘটনার স্থানটি শিবগঞ্জ উপজেলার অধীন। ১৯শে এপ্রিল নবাবগঞ্জ শহর হানাদার বাহিনীর দখলে চলে যাওয়ার পর ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ এমপিএ ভারতে চলে যান। এই সুযোগে পাকবাহিনীর স্থানীয় দালালরা এলাকায় হত্যা-নির্যাতন শুরু করে। তাদের নৃশংসতার প্রথম শিকার হন মনাকষা চৌধুরী পাড়ার জিল্লুর রহমান (পিতা মোকসেদ আলী) ও রফিক উদ্দীন (পিতা সেতাব উদ্দীন)। শান্তি কমিটির লোকেরা এ দুজনকে ধরে নবাবগঞ্জ পাকসেনা ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করে। এ খবর শুনে ডা. মইন উদ্দীন আহমদ দেশে আসেন। ১৩ই মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তিনি একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মনাকষা আসেন এবং পাকিস্তানি দালাল আফসার আলী বিশ্বাস ও রকিব বিশ্বাসকে হত্যা করেন। মাহিদুর রহমান, দীন মোহাম্মদ দেনা প্রমুখ রাজাকার এর প্রতিশোধ নেয়ার অপেক্ষায় থাকে। ৬ই অক্টোবর তারা পাকবাহিনীর সহায়তায় বিনোদপুর মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটমেন্ট ক্যাম্প দখল এবং চাঁদশিকারি গণহত্যা সংঘটিত করে দুর্লভপুরে মুক্তিযোদ্ধা ডিফেন্সে আক্রমণ চালাতে যায়। পথে মনাকষায় অভিযান চালাতে ব্যর্থ হয়ে শিবগঞ্জ ফিরে আসে।
৭ই অক্টোবর মাহিদুর রহমান পাকবাহিনীর শিবগঞ্জ ক্যাম্পের একজন সুবেদারের নেতৃত্বে মনাকষা ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রাম অভিযানে যায়। তাদের সঙ্গে ছিল নন- কমিশন্ড অফিসার, সেনা ও রাজাকার। তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বনকুল, হাউসনগর, রাণীনগর, পাচৌকা, পিয়ালিমারী, শিংনগর প্রভৃতি গ্রামে অপারেশন চালিয়ে ১৭ জন গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে ১৪ জন হলেন- মো. ফরিদ উদ্দীন (পিতা মো. আব্দুল মজিদ), মো. আরশাদ (পিতা আব্দুর রহমান মণ্ডল), মো. ফাইজুল ইসলাম (পিতা মো. আরশাদ আলী), আব্দুর রশীদ মেম্বর (পিতা মাওলা বক্স), মো. আরশাদ আলী (পিতা মাদারি মণ্ডল), আব্দুস সালাম (পিতা ডা. কাজিবুল্লাহ), গুদোড় বিশ্বাস (পিতা মো. আবুল মুন্সী), মো. জোনাব আলী (পিতা মো. কলিমুদ্দীন), মো. আবুল হোসেন (পিতা দোস মোহাম্মদ), মো. এসলাম (পিতা নেশ মোহাম্মদ), মো. মসলিম উদ্দীন (পিতা দোস মোহাম্মদ), আমজাদ আলী, মো. খোকা বিশ্বাস (পিতা খোশ মোহাম্মদ) এবং মো. তোবজুল হক (পিতা খোসদিল পাইকার)। এঁদের ভদু বিশ্বাসের বাড়িতে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে। এ সময় নির্যাতনকারীদের সঙ্গে এসে যোগ দেয় হাউসনগরের মো. হাবিবুর রহমান-সহ শান্তি কমিটির আরো কয়েকজন। বিকেলে আরেক দফা নির্যাতনের পর তারা বন্দিদের হুমায়ন রেজা উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে নদীর ধারে নিয়ে যায়। তখন নিকটস্থ কবরস্থানে মো. মুনসুর আলী (মনু ডিলার) নামে একজন গ্রামবাসী আরো দুজন লোক নিয়ে তার মায়ের লাশ দাফন করার জন্য কবর খুঁড়ছিল। তাদের কবর খোঁড়া বন্ধ করে কিছুটা দূরে তাদের দিয়ে একটি গর্ত করার নির্দেশ দেয়। গ্রাম থেকে আরো ৩ জনকে ধরে এনে এ কাজে নিযুক্ত করে। গর্ত খোঁড়া শেষ হলে প্রথমে ৬ জন এবং পরে ৭ জনকে ধাক্কা দিয়ে গর্তে ফেলে গুলি করে এবং অর্ধমৃত অবস্থায় তাদের মাটিচাপা দেয়। আব্দুস সালামসহ ৪ জন বৃদ্ধকে ছেড়ে দেয়। এ সময় মাহিদুর রহমান, মোয়াজ্জেম হোসেন, দীন মোহাম্মদ দেনা, কুবা কাতারি, আমিন উদ্দীন চুটু, ইয়াসিন প্রমুখ রাজাকার উপস্থিত ছিল। [তামিজ উদ্দীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড