You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী মনিমুল হক

মনিমুল হক (শহীদ ১৯৭১) বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী। তিনি ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন কৃতী সন্তান। তাঁর পিতার নাম এমাজউদ্দিন আহমেদ। তাঁর জন্ম সদর উপজেলার নামোশংকরবাটী গ্রামে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মনিমুল হককে স্বাধীনতাবিরোধীদের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলে হত্যা করা হয়। অধ্যাপক হক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহদাতা এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তাঁর ছোটভাই আওয়ামী লীগ-এর বিশিষ্ট নেতা সেরাজুল হক শনি মিয়া ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য। দুই ভাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাঠানপাড়াস্থ রামকৃষ্ণ মিশনের পাশে অবস্থিত বাড়িতে একত্রে বসবাস করতেন। তাঁদের সেই বাড়িতেই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সভা বসত। সংগ্রাম কমিটির সভা তাঁদের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হওয়ায় স্বাধীনতাবিরোধীরা তাঁদের প্রতি সব সময় দৃষ্টি রাখত। পাকহানাদার বাহিনীর বর্বরতা লক্ষ করে অধ্যাপক মনিমুল হক এপ্রিল মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ত্যাগ করে শিবগঞ্জ থানার চৈতন্যপুর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। কয়েকদিন সেখানে থাকার পর তিনি প্রত্যন্ত গ্রাম বিমর্ষিতে যান। কিছুদিন পর সেখান থেকে আবার তিনি চৈতন্যপুরে যান। এখান থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে শান্তি কমিটির লোকজন তাঁকে আটক করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে। এরপর তাঁকে বন্দি অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু ১৯শে অক্টোবর রাত ১০টায় ৪ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাঁকে আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়। পরদিন পাকবাহিনীর রাজশাহী সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল রিজভির সামনে তাঁকে উপস্থিত করা হয়। কর্নেল রিজভি তাঁর বিরুদ্ধে নৌকায় ভোটদান, তাঁর বাড়িতে সংগ্রাম কমিটির বৈঠক করতে দেয়া, ছাত্রলীগ-এর রাজনীতিতে মদদ দানসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে গুলি করে হত্যা করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এরপর তাঁর ওপর ৮ দিন ধরে বিভিন্ন ধরনের পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। তখন অধ্যাপক মনিমুল হকের দুহাত মোটা শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। বাঁধা অবস্থায় তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হতো।
২৭শে নভেম্বর ঈদ-উল ফেতরের আগের রাত ২টায় অধ্যাপক মনিমুল হকসহ ১১ জনকে পিঠমোড়া করে হাত ও চোখ বেঁধে জোহা হল থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। জোহা হলে তাঁর সহবন্দি ছিলেন চাঁপইনবাবগঞ্জের হাজী কশিমুদ্দিন মিয়া। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে ছাড়া পাবার পর হাজী কশিমুদ্দিন অধ্যাপক হকের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করে অধ্যাপক মনিমুল হকের ওপর হানাদারদের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। [মাযহারুল ইসলাম তরু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!