মদুনাঘাট পাওয়ার স্টেশন অপারেশন (রাউজান, চট্টগ্রাম)
মদুনাঘাট পাওয়ার স্টেশন অপারেশন (রাউজান, চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় ৩রা অক্টোবর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সুলতান মাহমুদ (ক্যাপ্টেন সুলতান নামে পরিচিত, পরবর্তীতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান)-এর নেতৃত্বে রাউজান উপজেলা সদর থেকে ১৮ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত এ পাওয়ার স্টেশনে অপারেশন পরিচালনার জন্য ১১ই সেপ্টেম্বর ক্যাপ্টেন সুলতান কয়েকজন সৈন্য ও গেরিলা যোদ্ধা নিয়ে ভারতের সাব্রুম থেকে রওনা দেন। তাঁর দলে ছিলেন কাজী মুহাম্মদ মহসিন (কাতিরহাট, ফটিকছড়ি), শাহাবুদ্দিন (কাট্টলী), নুরুল হক (বুড়িশ্চর), হালিম (বুড়িশ্চর), শামসুল আলম (বুড়িশ্চর), দিদার (বটতলী), কামাল (বটতলী), আব্দুল মান্নান (চট্টগ্রাম পুলিশ কনস্টেবল), বেলাল (পুলিশ সদস্য, নোয়াখালী), বাবুল বড়ুয়া (হাটহাজারী) প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা সাক্রম থেকে রওনা দিয়ে মধ্যমছড়া হয়ে মধ্যমগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাত্রিযাপন করেন এবং পরের দিন ১২ই সেপ্টেম্বর খিরামের বকিয়ত উল্লাহর খামারে আসেন। এর পরের দিন ১৩ই সেপ্টেম্বর জনৈক মমতাজ মিয়ার সহায়তায় বালুখালীর সামসু মেম্বারের বাড়িতে পৌঁছান। এদিনই তাঁরা এখান থেকে ডাবুয়ার অন্নদা বাবুর বাড়িতে এসে রাত্রিযাপন করে পরের দিন ১৪ই সেপ্টেম্বর নোয়াজিশপুর ফতেনগর রেলওয়ে অফিসার মো. ইসহাক শিকদারের বাড়িতে অবস্থান করেন। দুদিন পর ১৭ই সেপ্টেম্বর নোয়াজিশপুর মুক্তিসেনা সহায়ক সমিতির আহমেদ আমিন চৌধুরী (ভুক্তির লেখক), আবুল কাসেম চৌধুরী (পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক), আব্দুল গণি সওদাগর (দলইনগর) প্রমুখের সহযোগিতায় তাঁরা কুণ্ডেশ্বরী পার হয়ে সোনাইরমুখে জালিয়াপাড়া থেকে নৌকাযোগে দক্ষিণ মাদার্শা গ্রামের উবায়দুল হকের বাড়িতে অবস্থান করেন। পরদিন ১৮ তারিখ রাতে রফিক, মোজাম্মেল ও বিশ্বম্ভর বড়ুয়ার বাড়িতে তাঁরা অবস্থান নেন। এরপর নানা জায়গায় অবস্থান করে ৩রা অক্টোবর শেষরাতে তাঁরা একযোগে পাওয়ার স্টেশন আক্রমণ করেন। এতে শফি গ্রুপ ও কেদার গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের ছোড়া রকেট লঞ্চারে পাওয়ার স্টেশনটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এদিন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ১০-১২ জন পাকসেনা ও ৭ জন রাজাকার নিহত হয় এবং পাকসেনাদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান (পুলিশ কনস্টেবল) আহত হয়ে পরে মারা যান। তাঁকে আবুরখীলের বিশ্বম্ভর বড়ুয়া ও বৌদ্ধ ভূষণ বড়ুয়ার বাড়ির কাছে নদীর পাড়ে সমাহিত করা হয়।
মদুনাঘাট পাওয়ার স্টেশন অপারেশন ছিল রাউজানে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বপ্রথম সফল অপারেশন। বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এ অপারেশনের ফলে পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ে। [আহমেদ আমিন চৌধুরী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড