মদুনাঘাট পাওয়ার হাউস অপারেশন (হাটহাজারী, চট্টগ্রাম)
মদুনাঘাট পাওয়ার হাউস অপারেশন (হাটহাজারী, চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় ৩রা অক্টোবর। এতে ১১ জন পাকিস্তানি সৈন্য ও ৭ জন রাজাকার নিহত হয়। অপরদিকে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়ে পরে মারা যান। মদুনাঘাট পাওয়ার হাউস থেকে চট্টগ্রাম শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পগুলোতেও এখান থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ হতো। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সুলতান মাহমুদ (পরবর্তীতে এয়ার ভাইস মার্শাল)-এর নেতৃত্বে একদল সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা মদুনাঘাট পাওয়ার হাউস অপারেশনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফটিকছড়ি উপজেলার হিরামে বকিয়ত উল্লাহর খামার বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন- কাজী মুহাম্মদ মহসিন (কাটিরহাট, ফটিকছড়ি), শাহাবুদ্দিন (কাট্টলী), নূরুল হক (বুড়িশ্চর), আবদুল হালিম (বুড়িশ্চর), শামসুল আলম (বুড়িশ্চর), দিদারুল আলম (বটতলী, হাটহাজারী), কামাল উদ্দিন (বটতলী, হাটহাজারী), আবদুল মান্নান (ইপিআর-এর গার্নার, দাউদকান্দি, কুমিল্লা), বেলাল হোসেন (পুলিশ, নোয়াখালী), বাবুল বড়ুয়া (হাটহাজারী), পরিমল (হাটহাজারী), মো. আয়ুব (বটতলী, হাটহাজারী), মো. ইউসুফ (মাদার্শা) প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা। এঁরা খামার বাড়ি থেকে হাটহাজারীর বালুখালিতে পৌঁছে সামশু মেম্বারের বাড়িতে অবস্থান নেন। এ-সময় কমান্ডার মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে ১৭ জনের আরেক গ্রুপ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। এরপর তাঁরা উক্ত আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করে রাউজান উপজেলার আবুরখীল গ্রামের বিশ্বম্ভর বড়ুয়ার বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে অবস্থানকালে তাঁরা অপারেশন স্থলটি রেকি করেন। এই আশ্রয়স্থলে শফি গ্রুপ ও কেদার গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারাও এসে যোগ দেন।
৩রা অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা রাতের আঁধারে আশ্রস্থল ত্যাগ করে মদুনাঘাট পাওয়ার হাউসের উদ্দেশে রওনা দেন এবং শেষরাতের দিকে পাওয়ার হাউসের নিকট পৌছান। সেখানে নিয়মিতভাবে অবস্থান করছিল এক প্লাটুন পাঞ্জাবি সৈনিক ও ২ প্লাটুন রাজাকার। অপারেশন কমান্ডার সুলতান মাহমুদ মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি গ্রুপে বিভক্ত করে সুবিধামতো স্থানে পজিশন নেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর তিনি প্রথম ফায়ার করার সঙ্গে-সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রগুলো একযোগে গর্জে ওঠে। বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণে কর্তব্যরত ১১ জন পাঞ্জাবি সৈন্য ও ৭ জন রাজাকার মুহূর্তেই প্রাণ হারায় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ছোড়া রকেট লান্সারের আঘাতে পাওয়ার স্টেশনটি ধূলিসাৎ হয়ে যায়। এমন সময় হানাদারদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান (ইপিআর) গুরুতর আহত হন। অপারেশন শেষে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে নিয়ে আবুরখীল আশ্রয়স্থলে পৌঁছার আগে পথিমধ্যে তিনি প্রাণ হারান। পরদিন দুপুরের দিকে আবুরখীলের ভূষণ বড়ুয়ার বাড়ির পেছনে নদীর পাড়ে তাঁকে সমাহিত করা হয়। [জামাল উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড