মুক্তিযুদ্ধে মধুখালী উপজেলা (ফরিদপুর)
মধুখালী উপজেলা (ফরিদপুর) ১৯৭১ সালে বোয়ালমারী ও বালিয়াকান্দি থানার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৮৩ সালে মধুখালী স্বতন্ত্র উপজেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৬৬-র ৬ দফা আন্দোলন ও পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহে এখানকার মানুষের মধ্যে গণসচেতনতা বৃদ্ধি পায়। তারা প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এরূপ রাজনৈতিক অন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এক সময় মধুখালীর মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ভাষণের পর ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন এমএনএ বোয়ালমারী ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। সেখানে একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মধুখালীর আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম মৃধা, আফজাল হোসেন মোল্লা, আমিনুল ইসলাম ওরফে বাশি মাস্টার, শচীন্দ্রনাথ বসু, কমিউনিস্ট পার্টি-র শ্যামেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, সাদেকুর রহমান, আব্দুল মালেক শিকদার, ছাত্রনেতা শরীফ এম আফজাল হোসেন (রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি), মির্জা আব্দুল কাইয়ুম, সৈয়দ কবিরুল ইসলাম মাও, সমরেন্দ্রনাথ বসু, মাজেদ আলী খান, আব্দুল হান্নান, ফারুকী, আজহার উদ্দিন প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ এর পর থেকেই মধুখালী ইউনিয়ন কাউন্সিল মাঠ এবং কামারখালী বান্ধবের মাঠে বাঁশের লাঠি ও ডামি রাইফেল দিয়ে ছাত্র-যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। আনসার কমান্ডার ও অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সেনা সদস্যরা প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে গ্রামে-গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের সাংগঠনিক তৎপরতাও শুরু হয়। ২৬শে মার্চের পর মধুখালী পুলিশ ফাঁড়ি থেকে উদ্ধার করা ৬টি রাইফেল দিয়ে ছাত্র-যুবকদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ছাত্রনেতা মির্জা আব্দুল কাইয়ুমকে কমান্ডার করে একটি মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতা আফজাল হোসেন মোল্লা দলের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে শেখ নজরুল ইসলাম, মহসিন উদ্দিন বাচ্চু প্রমুখের নেতৃত্বে ভারত থেকে মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে ছাত্র-যুবকরা মধুখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন।
২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর মধুখালীর মাসকান্দী, আড়কান্দী ব্রিজ ও কামারখালী ফেরিঘাটে এলাকার মুক্তিকামী জনতা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য অবস্থান গ্রহণ করে। তারা দা, কুড়াল, শাবল, হাতুড়ি ইত্যাদি দিয়ে মধুখালী থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পশ্চিমে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের আড়কান্দী ব্রিজ ভাঙ্গার চেষ্টা চালায়। ২১শে এপ্রিল গোয়ালন্দ ঘাট হয়ে হানাদার বাহিনী পেছন দিক দিয়ে কামারখালী পৌঁছলে প্রতিরোধকারীরা পিছু হটে।
২১শে এপ্রিল পাকবাহিনী ঢাকা ও যশোর সেনানিবাস থেকে মধুখালীতে অনুপ্রবেশ করে। তারা কামারখালী ফেরিঘাট সংলগ্ন সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডাকবাংলোতে ক্যাম্প স্থাপন করে। পরে বনমালীদিয়াতে একটি পাক ক্যাম্প এবং মধুখালী হাইস্কুল ও মান্দারতলী ব্রিজের পাশে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে।
মধুখালী উপজেলায় শান্তি কমিটি – ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। উভয় বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ছাকেন আলী মোল্লা (নওপাড়া), ডা. মজিবর রহমান (নওপাড়া), আব্দুর রহমান মোল্লা (নওপাড়া), আজিমুদ্দিন আহমেদ (গাজনা) আব্দুল মালেক (বাগাট), মজিদ বিশ্বাস (বাগাট), রুস্তম আলী খান (কামারখালী), কাজী ওহিদুর রহমান (কামারখালী), আব্দুল কাসেম মীর (রায়পুর), গোলাম হোসেন (রায়পুর), মনিরুদ্দিন মোল্লা (রায়পুর), আলাউদ্দিন মোল্লা (ডুমাইন), গিয়াস মৃধা (বৈকুণ্ঠপুর), ব্যাঙ্গা মৃধা (মেঘচামী), হান্নান ডাক্তার (কামালদিয়া), ফেলু মোল্লা (জাহাপুর) এদের নাম উল্লেখযোগ্য। কামারখালীর রুস্তম আলী খানকে ১৯৭২ সালে দালাল আইনে গ্রেফতার করা হয়।
ইউনিয়নভিত্তিক শান্তি কমিটিও গঠিত হয়। এর চেয়ারম্যান ও… সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করে যথাক্রমে মধুখালী ইউনিয়নে হোসেন আলী মোল্লা (মেছড়দিয়া) ও আ. মজিদ খান, নওপাড়া ইউনিয়নে মির্জা মোজাফ্ফর হোসেন (গোন্দারদিয়া) ও ডা. মুজিবুর রহমান (আলমপুর), কামারখালী ইউনিয়নে শামসুল হুদা ওরফে সোনা মিয়া (কামারখালী) ও কাজী আ. ওয়াহিদ (মচুলন্দপুর), গাজনা ইউনিয়নে আজিম উদ্দিন শেখ (চেয়ারম্যান, চরবাসপুর), বাগাট ইউনিয়নে মুন্সী জহুরুল হক (ঘোপঘাট) ও আ. মালেক ফকির (বাগাট) এবং রায়পুর ইউনিয়নে কোবাদ আলী মল্লিক (চেয়ারম্যান, রায়পুর)। মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন রাজাকার বাহিনীকে, অন্যান্য দায়িত্বের মধ্যে, বিশেষ করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের আড়কান্দী সেতু, ডগড়া সেতু ও মধুখালী রেল স্টেশনের উত্তরে মন্দারতলা রেল সেতুতে সার্বক্ষণিক পাহারার দায়িত্ব দেয় পাকহানাদাররা।
২১শে এপ্রিল হানাদার বাহিনী সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে মধুখালীতে প্রবেশ করে স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় কামারখালী বাজার, বাগাট ও মধুখালী বাজারে ব্যাপক লুটপাট চালায়। কামারখালী বাজার সংলগ্ন মচুলন্দপুরের বেশ কয়েকজন লোককে তারা হত্যা করে। মধুখালীর মথুরাপুরের অমূল্যচরণ পোদ্দার, অধীর কুমার পোদ্দার, প্রফুল্ল কুমার কুণ্ডু, অমূল্য কুণ্ডু, আশাপুরের অমল বসু ও বাগাটের বেলাল খাঁ সেদিন পাকবাহিনীর হত্যার শিকার হন। এদিন পাকবাহিনী কামারখালী ঘাটের উত্তরপাশে রামচন্দ্রপুর গ্রামের জেলেপল্লিটি জ্বালিয়ে দেয়।
পাকবাহিনীর ভয়ে পূর্ব গাড়াখোলা গ্রামের পঞ্চানন কুণ্ডু মধুখালীর পাঁচই গ্রামের বাহাদুর মাতুব্বরের বাড়িতে সপরিবার আশ্রয় নেন। ১৫ই মে রাজাকার শফিউল আলম (পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান, গোন্দারদিয়া) ও হান্নান ডাক্তার (কামালদিয়া)-এর নেতৃত্বে কয়েকজন অবাঙালি রাজাকার তাকে গুলি করে হত্যা করে। এদিন পূর্ব গাড়াখোলা গ্রামের পতিত পাবন কুণ্ডু ও তার কর্মচারী বীরবাহাদুরকে তারা গুলি করে হত্যা করে। তখন মণীন্দ্রনাথ সাহা নামে একজন আহত হন।
সেপ্টেম্বর মাসে পাকবাহিনী মধুখালী, পূর্ব গাড়াখোলা, বাগাট বাজার, বন্দর, শংকরপুর, মহিষাপুর, মচুলন্দপুর, রামচন্দ্রপুর, তারাপুর, রায়পুর, জাজনগর, কৃষ্ণনগর, সিধলাজুড়ী, বকশিপুর প্রভৃতি গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। বন্দর গ্রামে অগ্নিসংযোগের সময় এক কিশোরীসহ কয়েকজন নারী পাকসেনাদের দ্বারা ধর্ষিত হন। কামারখালী গ্রামেও কয়েকজন গৃহবধূ তাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন। মেছড়দিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক আব্দুল লতিফ ওরফে ট্যানা বিশ্বাস ও ডুমাইন গ্রামের রায়হান জোয়াদ্দারকে পাকবাহিনী গুলি করে হত্যা করে। রায়পুরের ধীরেন দাস, খগেন্দ্ৰ দাস ও বিনোদবিহারী দাসের স্ত্রী কালিদাসী দাসকে গুলি করে হত্যা করে। সুরেন দাসকে রাজাকারদের সহযোগিতায় কামারখালী বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। ৬ই অক্টোবর গোন্দারদিয়া গ্রামের ওহিদুজ্জামান ও তার ভাই আব্দুর রাজ্জাক ভারত থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি এলে রাজাকাররা তাদের বাড়ি ঘেরাও করে ওহিদুজ্জামানকে হত্যা করে। রাজাকারদের ছোড়া গুলিতে আব্দুর রাজ্জাক আহত হন।
অক্টোবর মাসে ঘোপঘাট কালীবাড়ির মনা গোসাঁই ও বাগবাড়ির কেষ্ট পালকে জবাই করে, উজানদিয়ার আব্দুল হাই মোল্লা, তোজাম্মেল হোসেন, ছোন্দাহ গ্রামের জালাল খাঁ ও ছবেদ খাঁকে পাকসেনারা গুলি করে হত্যা করে। আড়কান্দীর বিনোদবিহারী পোদ্দার, বন্দরের হরেন্দ্রনাথ সূত্রধর, গন্ধখালীর যুগল মাঝি, মচুলন্দপুরের অশ্বিনী ভূঁইয়া, কৃষ্ণ গোপাল সাহা ও বিরজা বালাকে পাকসেনারা গুলি করে হত্যা করে। ১২ই ডিসেম্বর বাগাট গ্রামের নটবর দাস ও প্রমথ দাস, বিশ্বাসপাড়ার আবু বিশ্বাস, পাইকপাড়ার নজরুল শেখ, তারা মিয়া ও মমিন উদ্দিন শেখ মিত্রবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালে শেলের আঘাতে শহীদ হন। এছাড়া ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে কুষ্টিয়ার ভাটই অঞ্চলে পাকবাহিনী কর্তৃক হত্যার শিকার হন মচুলন্দপুর গ্রামের পূর্ণচন্দ্র সরকার, শৈলেন্দ্র চন্দ্র সরকার, সুবাস চন্দ্র সরকার, মিতু সরকার, ললিত মোহন শিকদার, দুলাল চন্দ্র সরকার ও চান্দু ঠাকুর। ২১শে এপ্রিলের পর থেকে মধুখালীতে যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় তা মধুখালী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত।
কামারখালী ফেরিঘাট সংলগ্ন সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডাকবাংলোতে স্থাপিত হানাদার ক্যাম্প এবং মধুখালী হাইস্কুলে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে লোকজনকে ধরে এনে আটকে রেখে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা নির্যাতন চালাত।
মধুখালী উপজেলার জামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন আমবাগানের পশ্চিমে চন্দনা নদীর তীর, মচুলন্দপুর মধুমতি নদীর তীর ও কামালখালীতে বধ্যভূমি রয়েছে।
২০শে জুলাই মধুখালী থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পশ্চিমে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের আড়কান্দী ব্রিজের পাশে রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে ২ জন রাজাকার নিহত হয়। বাকিরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। এখান থেকে ৪টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও বেশকিছু গুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
সেপ্টেম্বর মাসে ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা মধুখালী রেলওয়ে স্টেশনের উত্তরে মান্দারতলী ব্রিজের পাশে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। এ আক্রমণে ৩ জন রাজাকার নিহত হয়। কয়েকজন অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। এখান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ৬টি রাইফেল উদ্ধার করেন। পাকবাহিনীর নির্বিঘ্নে চলাচল বন্ধ করতে মুক্তিযোদ্ধারা সেপ্টেম্বর মাসে আড়কান্দী ব্রিজ ও অক্টোবর মাসে মান্দারতলী ব্রিজ উড়িয়ে দেন। ১১ই নভেম্বর কামারখালী ঘাটে একটি ফেরিতে মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর ফেরিটি ডুবিয়ে দেন।
১২ই ডিসেম্বর মধুখালী উপজেলার ডুমাইনে হরিপদর (ফুলকুমারী) খালের দুই তীরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এটি ডুমাইন যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীর গুলিতে মফিজুর রহমান (ডুমাইন) ও হাফিজুর রহমান (নিশ্চিন্তপুর) নামে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১০ জন পাকসেনা এ-যুদ্ধে মারা যায় এবং অনেকে আহত হয়। ১২ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত কামারখালীতে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ১৬ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী পিছু হটে।
গড়াই নদীর পাড়ে ক্যাম্প করে। যৌথ বাহিনী গড়াইয়ের অপর পাড়ে মাগুরায় অবস্থান নেয়। এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে অবিরাম যুদ্ধ চলে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা এসে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়। জনতাও দলে-দলে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়। এরপর ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে সমগ্র এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে পাকবাহিনী এখান থেকেও পিছু হটলে ১৬ই ডিসেম্বর মধুখালী শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ, বীরশ্রেষ্ঠ- (পিতা মুন্সী মেহেদী হাসান, সালামতপুর) ও এস কে আজিজুর রহমান, বীর প্রতীক (পিতা শেখ আবদুল হাকিম, ডুমাইন)।
মধুখালী উপজেলায় ৬ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম জানা যায়। তাঁরা হলেন— ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ, বীরশ্রেষ্ঠ (২০শে এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামের বুড়িঘাট সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), ওহিদুজ্জমান (পিতা আ. মজিদ মোল্লা, গোন্দারদিয়া), মফিজুর রহমান (পিতা আ. হাকিম, ডুমাইন; ১২ই ডিসেম্বর ডুমাইন যুদ্ধে শহীদ), হাফিজুর রহমান (পিতা জুলমত মোল্লা, নিশ্চিন্তপুর; ১২ই ডিসেম্বর ডুমাইন যুদ্ধে শহীদ), খলিলুর রহমান (পিতা ইয়ারউদ্দিন মোল্লা, নিশ্চিন্তপুর; ১৪ই ডিসেম্বর কামারখালী যুদ্ধে শহীদ) ও সুশীল কুমার ঘোষ (পিতা ভুবন মোহন ঘোষ, বাগাট; ঝিনাইদহ এলাকায় শহীদ)।
মধুখালী রেলগেটের পাশে শহীদ ওহিদুজ্জামানের স্মরণে শহীদ ওহিদ স্মৃতি সংসদ নামে একটি ক্লাব, ডুমাইন গ্রামে শহীদ মফিজুর রহমানের নামে শহীদ মফিজ বালিকা বিদ্যালয়, কামারখালীতে শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ বীরশ্রেষ্ঠ-এর নামে মুন্সী আব্দুর রউফ বীরশ্রেষ্ঠ ডিগ্রি কলেজ, সালামতপুর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ জাদুঘর ও গ্রন্থগার স্থাপিত হয়েছে। জাদুঘর চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। কামারখালী থেকে আড়পাড়া পর্যন্ত সড়কের নাম দেয়া হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ সড়ক। [আকরাম খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড