মধুখালী হত্যাকাণ্ড (মধুখালী, ফরিদপুর)
মধুখালী হত্যাকাণ্ড (মধুখালী, ফরিদপুর) সংঘটিত হয় ২১শে এপ্রিলের পর থেকে। এতে বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়।
১৯৭১ সালে মধুখালী থানা বোয়ালমারী ও বালিয়াকান্দি থানার অংশ ছিল। ফরিদপুর-কামারখালী সড়কের দুপাশে অবস্থিত এ উপজেলায় পাকসেনাদের হত্যা-নির্যাতন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস জুড়েই এ এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিকাণ্ডসহ নানা নির্যাতন সংঘটিত হয়।
২১শে এপ্রিল ফরিদপুরের পতনের পর পাকিস্তানি সেনারা শেলিং করতে-করতে কামারখালীর দিকে অগ্রসর হয়। এদিন বিভিন্ন গ্রাম তারা আগুনে পুড়িয়ে দেয়। কামারখালীতে তারা ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এখানে ক্যাম্প করার পর লুটপাটের মাত্রা বেড়ে যায়। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে ব্যাপক লুটপাট করত। নারীদের অপহরণ করত। এ-সময় পাকিস্তানি সেনারা রাজাকারদের সহায়তায় বর্তমান মধুখালী থানার গাজনায় গিয়ে একই দিনে ১৩ জনকে গুলি করে হত্যা করে। গ্রামের কালীমন্দির ও প্রায় প্রতিটি বাড়িতে লুটপাট করে। কামারখালী বাজার সংলগ্ন মছলেন্দুপুরের অনেক লোককে ধরে নিয়ে হত্যা করে। মধুখালীতে নিহতদের মধ্যে ছিলেন মধুরাপুরের অমূল্য চরণ পোদ্দার, অধীর কুমার পোদ্দার, প্রফুল্ল কুমার কুণ্ডু, অমূল্য কুণ্ডু, আশাপুরের অমল বসু, বাগাটের বেলাল খাঁ প্রমুখ।
এক পর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা মধুখালী হাইস্কুলে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্পে তারা লুটের জিনিসপত্র ও রসদ রাখার ভাণ্ডার গড়ে তোলে। তারা অনেক যুবককে এখানে নির্যাতন ও হত্যা করে। বহু নারীর ওপর এ ক্যাম্পে নির্যাতন চালানো হয়। পাকিস্তানি সেনারা পরীক্ষিত গ্রামের বাদি খাঁর স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যায়। আটক অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নভেম্বরে যশোর থেকে পালিয়ে আসা পাকিস্তানি সেনারা মধুমতী নদীর এপারে আশ্রয় নেয়। তখন তারা বিভিন্ন গ্রামে লুটপাট ও নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। [আবু সাঈদ খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড