You dont have javascript enabled! Please enable it! মধুপুর বধ্যভূমি (নোয়াখালী সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

মধুপুর বধ্যভূমি (নোয়াখালী সদর)

মধুপুর বধ্যভূমি (নোয়াখালী সদর) নোয়াখালী সদর উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু লোককে হত্যা করা হয়।
মধুপুর (স্থানীয়ভাবে মধুসুধনপুর নামে পরিচিত) গ্রামটি নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলাধীন জেলা হেডকোয়ার্টার্স মাইজদী পিটিআই থেকে শুরু করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। মাইজদী পিটিআই ছিল বৃহত্তর নোয়াখালীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতির প্রধান প্রশিক্ষণ কেন্দ্ৰ।
২৩শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে সড়ক ও রেলপথে লাকসাম হয়ে নোয়াখালীর প্রবেশপথ বেগমগঞ্জ চৌরাস্তায় অবস্থিত টেকনিক্যাল হাইস্কুলে ঘাঁটি স্থাপন করে। ২৪শে এপ্রিল তারা মাইজদীতে প্রবেশ করে। মাইজদীতে প্রবেশ করেই তারা পিটিআইতে তাদের প্রধান ক্যাম্প স্থাপন করে। প্রথমে পাকবাহিনী হিন্দু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এরপর তারা ছাত্র, যুবক ও বৃদ্ধসহ ৫০ জনের মতো মানুষকে পিটিআই ক্যাম্পে ধরে আনে। ক্যাম্পের পশ্চিম দেয়াল সংলগ্ন মধুপুর গ্রামে তমির আহম্মদ, ফজল ও মজলদের বাড়ির কাছে পুকুরপাড়ে মেশিনগান দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে তাদের হত্যা করে সেখানেই মৃতদেহগুলো পুঁতে রাখে। মাইজদী পিটিআই ক্যাম্পে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার বাহিনী ২৪শে এপ্রিল থেকে ৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করে। এ সময়ের মধ্যে তারা অগণিত মানুষকে মধুপুর গ্রামের পুকুরপাড়ে এনে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়।
মধুপুর গ্রামের বাসিন্দা এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন মিন্টু পাকবাহিনী ও রাজাকারদের এসব হত্যাকাণ্ডের একজন প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন একজন কিশোর। পাকসেনাদের ভয়ে যখন এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ পালিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়, তখন তিনিসহ কয়েকজন কিশোর এবং বৃদ্ধ বাড়িতে থেকে যান। ফজল ও মজলদের বাড়ি সংলগ্ন পুকুড়পাড়ে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় পাকবাহিনী যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়, কাছ থেকে তিনি তা প্রত্যক্ষ করেন। পিটিআই সংলগ্ন মধুপুরের সেই পুকুরটি পরিণত হয় রক্তের পুকুরে। হাত-পা বাঁধা হানাদার বাহিনীর গুলির আঘাতে মৃত্যুযন্ত্রণায় গোঙানির শব্দ কোনো দিন তারা ভুলতে পারেনি। এ বধ্যভূমির হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যান মাইজদী ল’ইয়ার্স কলোনির বাসিন্দা কৃষকনেতা আবুল খায়েরের ছোটভাই আবদুল মতিন (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী), নোয়াখালী পৌরসভার কমিশনার নৃপেন্দ্র কুমার পাল ও তাঁর ভাই শিরেন্দ্র কুমার পাল। [মো. ফখরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড