You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর উত্তম মতিউর রহমান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর উত্তম মতিউর রহমান

মতিউর রহমান, বীর উত্তম (১৯৩০-১৯৯৬) একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নৌকমান্ডো। তাঁর জন্ম ১৯৩০ সালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার এক দরিদ্র পরিবারে। তাঁর পিতা জয়নুদ্দিন ডাক্তার এবং মাতা জমিলা। মুক্তিযুদ্ধের সময় মতিউর রহমান ঢাকায় বেবিট্যাক্সি চালাতেন। ঢাকায় সাধারণ মানুষের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা ও পৈচাশিকতা সরাসরি তিনি প্রত্যক্ষ করেন এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আকাঙ্ক্ষা থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে তিনি ভারতের আগরতলা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যান। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে জুলাই মাসে তিনি নৌকমান্ডো হিসেবে মনোনীত হন। এরপর মুর্শিদাবাদের পলাশীতে তিন মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সুইসাইড স্কোয়াডের একজন চৌকস কমান্ডো হয়ে ওঠেন এবং স্বেচ্ছামৃত্যুর নির্দায়ী অনাপত্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। ক্যাম্পে প্রশিক্ষণকালে মতিউর কর্মনিষ্ঠা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। এ কারণে ক্যাম্প কমান্ডার জর্জ মার্টিন ও পেটি অফিসার গাজী মো. রহমত উল্লাহ তাঁকে ৬০ জন নৌকমান্ডো বাহিনীর দায়িত্ব দিয়ে আরিচা, বরিশাল ও নগরবাড়ি ঘাট অপারেশনের জন্য পাঠান। প্রথমে তিনি তাঁর বাহিনী নিয়ে বনগাঁ টালিখোলায় ক্যাপ্টেন নাজমুলের নিকট রিপোর্ট করেন। পরে সেখান থেকে স্থলবাহিনীর আরো ৬০ জন গেরিলা নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। মতিউর কমান্ডোদের ৩টি গ্রুপে ভাগ করে অপারেশনের প্রস্তুতি নেন। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে তিনি তাঁর গ্রুপের সহযোদ্ধাদের নিয়ে বরিশালের কির্তনখোলা নদীতে পাকিস্তানি বাহিনীর বিশাল এক খাদ্যবাহী জাহাজ এবং নভেম্বর মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে কাঁচপুর ফেরিঘাটে পারাপারকারী একটি ফেরি ডুবিয়ে দেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। মহিউর রহমান ৪ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মোছা. আমেনা বেগম। ১৯৯৬ সালের ১৮ই ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [হারুন রশীদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড