যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক মতিউর রহমান
মতিউর রহমান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫২) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫২ সালে জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার কামলপুর ইউনিয়নের ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম তছলিমউদ্দিন সরকার, মাতার নাম সখিনা বেগম। মতিউর রহমান ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন।
মতিউর রহমান ১৯৭১ সালে ছিলেন ১৯ বছরের যুবক। রাজনৈতিভাবে সচেতন মতিউর রহমান ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙালিদের ওপর গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রথমে এলাকার ছাত্র-যুবকদের সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। ৭ই এপ্রিল তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান। ভারতের তুরায় এক মাস মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১১নং সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব- সেক্টরে যোগদান করেন। এখানে সাব-সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট আবদুল মান্নানের অধীনে কামালপুর, ধানুয়া কামালপুর, বশিরউল্লা, মার্দা, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার আন্ডার চর, কাঠার বিল, জিগাবাড়ি, শ্রীবর্দী উপজেলার কর্ণজোড়া ও বাট্টাজোড় যুদ্ধে অংশ নিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দেন। এর মধ্যে কামালপুর যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
সীমান্তবর্তী কামালপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। মুক্তিযুদ্ধকালে কামালপুরে হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিক যুদ্ধ হয়। ২৯শে নভেম্বর মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে কামালপুর হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করেন। তাঁদের একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মতিউর রহমান। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে- দিতে এবং গ্রেনেড চার্জ ও গুলি করতে-করতে কামালপুর ঘাঁটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনী তাঁদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন। মতিউর রহমান আহত হন। সহযোদ্ধারা তাঁকে উদ্ধার করে মহেন্দ্রগঞ্জ ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের তুরা ও পুনা হাসপতালে পাঠানো হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতার পর তিনি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে চাকরিতে নিয়োজিত হন। এ-সময় তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের মৃত্যুর পর তিনি সৈজুন নাহার ডালিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সাইদুর রহমান ৩ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড