যুদ্ধকালীন কোম্পানি কমান্ডার বীর বিক্রম মতিউর রহমান
মতিউর রহমান, বীর বিক্রম (১৯৫১-২০১১) ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী, যুদ্ধকালীন কোম্পানি কমান্ডার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫১ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার বানিয়াহাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. কিনু মিয়া এবং মাতার নাম হীরা বানু। মতিউর রহমান ১৯৭১ সালে ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রথমে তিনি নিজ এলাকায় গিয়ে ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করেন। পরে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ৫নং সেক্টরে যোগদান করেন এবং বড়ছড়া সাব-সেক্টরের অধীন ‘কোবরা’ কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পান। সাচনা বাজারের যুদ্ধ তাঁর প্রথম অভিযান। সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজারে পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা এ ঘাঁটি ধ্বংস করার জন্য ৮ই আগস্ট একটি অভিযান পরিচালনা করেন। দীর্ঘ সময়ব্যাপী চলা এ-যুদ্ধে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হলেও মতিউর রহমান সহযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে বীর বিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যান। সিরাজুল ইসলাম বেশ কয়েকটি গ্রেনেড নিয়ে শত্রুদের অবস্থানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে মতিউর রহমান এলএমজি-র গুলি চালিয়ে তাঁকে কাভার দেন। সিরাজুল ইসলাম যথাস্থানে পৌঁছে সফলতার সঙ্গে গ্রেনেড চার্জ করে দুটি বাংকার ধ্বংস করে তৃতীয় বাংকারে গেনেড চার্জ করার মুহূর্তে শত্রুসেনাদের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন। এ অবস্থায় মতিউর রহমান অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে গুলিবর্ষণ করতে-করতে এগিয়ে যান এবং মুমূর্ষু সিরাজুল ইসলামকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ভারতে প্রেরণকালে পথিমধ্যে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। এরপর মতিউর রহমান সুরমা নদী এবং তাহিরপুর উপজেলার কাউকান্দি বাজারে যুদ্ধ শেষে তাঁর কোম্পানি নিয়ে কিশোরগঞ্জে চলে যান। সেখানে ২০শে অক্টোবর নিকলী এবং ৯ই নভেম্বর ইটনায় যুদ্ধ করেন। ২৭শে নভেম্বর তাঁর কোম্পানি এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মাধ্যমে অষ্টগ্রাম মুক্ত করে কিশোরগঞ্জের ভাটি এলাকায় এক বিরাট মুক্তাঞ্চল গড়ে তোলে।
মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মতিউর রহমানকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম রাবেয়া রহমান। ২০১১ সালের ৬ই অক্টোবর মতিউর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড