মতিগঞ্জ সিও অফিস অপারেশন (সোনাগাজী, ফেনী)
মতিগঞ্জ সিও অফিস অপারেশন (সোনাগাজী, ফেনী) পরিচালিত হয় ১৫ই সেপ্টেম্বর। এতে কয়েকজন রাজাকার হতাহত হয়। অপরপক্ষে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
সোনাগাজী উপজেলায় রাজাকারদের শক্ত ঘাঁটি ছিল মতিগঞ্জ সিও অফিসে। এখান থেকে তারা চারদিকে অপারেশন চালাত। কুখ্যাত দালাল ও ফেনী মহকুমা (বর্তমান জেলা) শান্তি কমিটির প্রভাবশালী নেতা আবদুল্লা চৌধুরী ছিল এই রাজাকারদের সকল কুকর্মের প্রধান মদদ দাতা। এই ক্যাম্পের রাজাকারদের অত্যাচার, লুটপাট, ধর্ষণ ইত্যাদি কারণে এলাকাবাসী চরম অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধাদের হাইকমান্ডের নজরে এলে তাঁরা এই ক্যাম্পে অপারেশন পরিচালনার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ১৫ই সেপ্টেম্বর কমান্ডার হাফিজুর রহমান গ্রুপ, কমান্ডার এম এ কাইয়ুম গ্রুপসহ আরো ২-৩টি মুক্তিযোদ্ধা দল গভীর রাতে সিও অফিসের কাছাকাছি এসে অবস্থান নেয়। ক্যাম্পের রাজাকাররা সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি লুটের মালামাল ভাগ-বাটোয়ারা শেষে মানুষের বাড়ি থেকে আনা হাঁস-মুরগি ও ছাগলের মাংস দিয়ে ভোজন শেষে গেইটে ২ জন সেন্ট্রি রেখে খোশ গল্পে মত্ত ছিল। তারা বুঝতে পারেনি যে, তাদের ওপর আক্রমণ হতে পারে। এমন অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে সিও অফিসে হামলা চালান। তাঁদের ত্রিমুখী আক্রমণ ও গুলীবর্ষণে সঙ্গে-সঙ্গে কয়েকজন রাজাকার হতাহত হয়। তবে রাজাকারদের কাছে ভারী ও অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকায় তাদের পাল্টা জবাবে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হন।
এ অপারেশনে স্থানীয় গাজীপুর নিবাসী মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ও নুরুল করিম শত্রুবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে যাওয়ার সময় তাঁদের লাশ নিয়ে গিয়ে নিজ-নিজ বাড়িতে দাফন করেন। এ অভিযানের কয়েক দিন আগে মুক্তিযোদ্ধারা সোনাগাজী থানায় অপারেশন চালিয়ে রাজাকারদের পরাস্ত করে ৩ দিন পর্যন্ত থানা নিজেদের দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। [মো. ফখরুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড