You dont have javascript enabled! Please enable it!

মঠবাড়ি-বনবাড়ি-খোরট গণহত্যা (মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ)

মঠবাড়ি-বনবাড়ি-খোরট গণহত্যা (মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৭ই মে। এতে ২৩ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদারদের ধংসযজ্ঞ ও গণহত্যার নৃশংস থাবা থেকে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার দক্ষিণ অঞ্চল বহুগ্রাম ইউনিয়নের মঠবাড়ি, বনবাড়ি ও খোরট গ্রামও রেহাই পায়নি। ১৭ই মে পাকসেনা ও তাদের দোসররা এ তিনটি গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও বর্বরোচিত গণহত্যা চালায়। খান্দারপাড়ার পাকসেনাদের দালাল আ. খালেক মুন্সি ও জলিন চৌকিদার, গোয়ালের ইউসুফ মুন্সি, এবং ওড়াকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনারউদ্দিন মোল্লা (আড়য়াকান্দি)- র নেতৃত্বে মুকসুদপুর সদর থেকে পাকহানাদার বাহিনীর একটি দল এসে হত্যাকাণ্ড ও ধংসলীলা চালায়। সেদিন বহুগ্রামে যাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়, তারা হলেন— গোকুল চন্দ্র বাইন, ভূপেন চন্দ্র রায়, হারাধন মজুমদার, চিত্ত রঞ্জন মজুমদার প্রমুখ। মঠবাড়ি গ্রামে যাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়, তারা হলেন— হরসিত মজুমদার, চিত্ত টিকাদার, শিশির মজুমদার, বিনয় মজুমদার ও শ্যামল মজুমদার। বনবাড়ি গ্রামের মাখন চন্দ্র বিশ্বাসের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের খোরট গ্রামে যাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়, তারা হলেন— জগদীশ চন্দ্র বিশ্বাস, সতীশ চন্দ্ৰ মণ্ডল, সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, সুকুমার বালা, অম্বিকা চরণ ও সুখহরণ বিশ্বাস। এসব বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার পূর্বে লুটপাট করা হয়।
পাকহানাদার ও দালালরাজাকারদের আক্রমণ থেকে জীবন রক্ষার জন্য সাধারণ মানুষ বনবাড়ি গ্রামের গাছপালা বেষ্টিত একটি ভিটায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু পাকহানাদাররা সেখানে গিয়ে তাদের ওপর নির্বিকারে গুলি চালায়। কয়েকজন পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লে সেখান থেকে তুলে এনে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে তাদের নৃশংশভাবে হত্যা করা হয়। এখানে যারা শহীদ হন, তারা হলেন— গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাস বিএ (প্রধান শিক্ষক, সাতপাড় উচ্চ বিদ্যালয়; এখানে আত্মীয় বাড়িতে পালাতে এসে শহীদ হন), সন্তোষ কুমার ঢালী (শুয়াসুর, নবম শ্রেণির ছাত্র), গোকুল মজুমদার (বহুগ্রাম), খগেন্দ্র নাথ সরকার (বহুগ্রাম), মতিলাল বিশ্বাস (বনবাড়ি), আদিত্য মণ্ডল (মাঝিগাতী), পঞ্চানন সরকার (উজানী)-সহ ২৩ জন। শহীদদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান উভয় শ্রেণির লোক ছিল। সকল শহীদকে বনবাড়ি গণকবরে দাফন করা হয়। এখানে শহীদদের একটি নামফলক রয়েছে। [মো. ফিরোজ খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!