You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মতিউর রহমান - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মতিউর রহমান

মতিউর রহমান (১৯৩০-২০০৩) রাজনীতিবিদ, জননেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং স্বাধীনতোত্তর বঙ্গবন্ধুর প্রথম মন্ত্রিসভার পূর্তমন্ত্রী। তিনি ১৯৩০ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ৪নং কমেদপুর ইউনিয়নের বড় রসুলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌ. মো. মশিউর রহমান, মাতার নাম মোছা. রহিমা খাতুন। তিনি রসুলপুর জুনিয়র মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর গাইবান্ধা ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে মেট্রিক এবং ১৯৫০ সালে রংপুর কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৫২ সালে একই কলেজ থেকে তিনি বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৫৮ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মতিউর রহমান স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগ-এর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কলেজ জীবনে জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হন। পরে জেলা আওয়ামী লীগ-এর সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালের ভাষা- আন্দোলন-এ তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং কারাবন্দি হন। জেল থেকেই বিএ পরীক্ষা দিয়ে তিনি পাস করেন। দীর্ঘ ১১ মাস পর তিনি জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। আইয়ুব খানের শাসন আমলে ১৯৫৯ সালে তিনি পুনরায় জেলে যান। এবার দেড় বছর পর জেল থেকে মুক্তি পান। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি এমএনএ নির্বাচিত হন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬নং সেক্টরের অধীন বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে অসামান্য অবদান রাখেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠিত হলে তিনি পূর্তমন্ত্রী হিসেবে তাতে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে পীরগঞ্জ থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী হন। ১৯৭৬ সালে জেনারেল জিয়ার শাসন আমলে তাঁকে পুনরায় জেলে যতে হয় এবং এক বছর তিনি জেলে বন্দি থাকেন। ১৯৭৮ সালে তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং ১৯৮৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য নির্বাচিত হন।
মতিউর রহমান বহু সমাজসেবা এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮০ সালে তাঁর প্রথম স্ত্রী আনু রহমান মৃত্যুবরণ করলে তিনি মিলন রহমানকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। তাঁর দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। [হারুন-অর-রশিদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড