You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.10 | মকরমপুর ঘাট যুদ্ধ (ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

মকরমপুর ঘাট যুদ্ধ (ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

মকরমপুর ঘাট যুদ্ধ (ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১০ই আগস্ট। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর ৯-১০ জন সৈন্য হতাহত হয়৷
মকরমপুর ঘাট মহানন্দা নদীর পাড়ে অবস্থিত। দখলদার পাকবাহিনী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার অধিকাংশ অঞ্চল করায়ত্ত করার পর অবশিষ্ট অঞ্চল এবং ভোলাহাট উপজেলা দখলে নিতে এ ঘাট দিয়ে যাতায়াত করত। তারা মকরমপুর কলঘরে ক্যাম্প ও পাইকড় গাছে এলএমজি স্থাপন করে এবং পর্যবেক্ষণের জন্য গাছটিতে বাইনোকুলার বসায়।
৪ঠা আগস্ট দুর্গাপুর গ্রামের নেজাম মণ্ডল শত্রুবাহিনী কর্তৃক অপহৃত হলে মুক্তিবাহিনীর এমএফ গ্রুপ ঘাইবাড়িতে অবস্থান নেয় এবং ৫ই আগস্ট কালুপুরে ঠাকুরের আমবাগানে ডিফেন্স স্থাপন করে। ৫ দিন অবস্থান করার পর ৯ই আগস্ট রাত প্রায় ১২টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা মকরমপুর ঘাটে ২টি স্পিডবোটের শব্দ শুনতে পান। শত্রুবাহিনী দালালদের সহায়তায় রহনপুর এ বি হাইস্কুল ঘাঁটি থেকে মকরমপুর ঘাট পার হয়ে কালুপুরের পার্শ্বস্থ গ্রাম কাঞ্চনতলায় জমায়েত হয়। তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫-৬শ। কিন্তু মুক্তিবাহিনী এ বিষয়টি অনুমান করতে পারেনি।
১০ই আগস্ট ফজরের আযানের পর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাবকে কাঞ্চনতলা অভিমুখে রেকিতে পাঠানো হয়। তিনি পাকবাহিনী অগ্রসর হচ্ছে বলে রিপোর্ট দেন। মুক্তিবাহিনী দ্রুত পজিশন নেয়। এ-যুদ্ধে ৭১ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। আরো ৩০ জন কাশিয়াবাড়ি প্রতিরক্ষা জোরদার করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। এখানে মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার ছিলেন ইপিআর সুবেদার গফুর মণ্ডল। অন্যান্য কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন কুতুবউদ্দিন, সুবেদার কফিলউদ্দিন, সুবেদার মীর মোকাদ্দেশ, আনসার এডজুট্যান্ট গোলাম মোস্তফা, আনসার পিসি সৈয়দ আ. রাজ্জাক রাজা মিয়া প্রমুখ এবং আর্টিলারির ছিলেন আ. মান্নান। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে শত্রুবাহিনীর প্রচণ্ড গুলি বিনিময় শুরু হয়। সকাল প্রায় ১০টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। শত্রুরা রহনপুর এ বি উচ্চ বিদ্যালয় সেনাঘাঁটি থেকে তিন ইঞ্চ মর্টার, মকরমপুর কলঘর থেকে রকেট লাঞ্চার ও পাইকড় গাছ থেকে এসএমজি-র গোলা নিক্ষেপ করে। এ-যুদ্ধে শত্রুপক্ষের হামলা এতই ভয়াবহ ছিল যে, মুক্তিবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। তা সত্ত্বেও শত্রুপক্ষের ৯-১০ জন সেনা হতাহত হয়। এ-যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনী বোয়ালিয়া থেকে চৌডালা পর্যন্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিবাহিনীর একটি টহল দল দুর্গাপুর অবদা ক্যানেলে অবস্থান নেয়। মুক্তিবাহিনী দলদলীতে ক্যাম্প স্থাপন করে। এখান থেকে পরে অনেক যুদ্ধ ও অপারেশন পরিচালিত হয়। [মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড