মঙ্গলকোট ব্রিজ বধ্যভূমি (কেশবপুর, যশোর)
মঙ্গলকোট ব্রিজ বধ্যভূমি (কেশবপুর, যশোর) যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলায় অবস্থিত। ৫নং মঙ্গলকোট ইউনিয়নের মঙ্গলকোট বাজার সংলগ্ন বুড়িভদ্রা নদীর ওপর মঙ্গলকোট ব্রিজের অবস্থান। যশোর-চুকনগর রোডের এ ব্রিজটিকে পাকহানাদার বাহিনী বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করে। পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনী কেশবপুর থানার বিভিন্ন গ্রামসহ আশপাশের থানা থেকে অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে এ বধ্যভূমিতে হত্যা করে। প্রথমে তারা লোকজন ধরে মঙ্গলকোট ব্রিজের ওপর এনে নির্যাতন করত। তারপর জবাই করে তাদের লাশ নদীতে ফেলে দিত।
কেশবপুর থানা রাজাকার ক্যাম্পের গ্রুপ কমান্ডার এবং পরবর্তীতে ভান্ডারখোলা ও চিংড়া বাজার রাজাকার ক্যাম্পের প্রধান মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বাধীন রাজাকার বাহিনী কেশবপুর থানার মহাদেবপুর, জাহানপুর, নেহালপুর, সেনপুর, মোমিনপুর, রেজাকা, ত্রিমোহনী ও সাগড়দাড়িসহ আশপাশের ২৭টির মতো গ্রামে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নারীনির্যাতন চালায়। রাজাকার বাহিনী মহাদেবপুর গ্রাম সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেয় এবং গ্রামের করিম মাস্টারের বড়ভাই গাফফার মাস্টার ও তার চাচাতো ভাই শেখ কাওসার আলীকে ধরে ত্রিমোহনী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতলেব এবং বগা গ্রামের তসিক গোলদারকে ধরে মঙ্গলকোট ব্রিজে নিয়ে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। পাইলট বালিকা বিদ্যালয় রাজাকার ক্যাম্পের কমান্ডার আমিন উদ্দিন মাস্টার ও ডেপুটি কমান্ডার দীন মোহাম্মদের নেতৃত্বে রাজাকাররা জাহানপুর গ্রামের ওমর আলীকে ধরে এনে দীর্ঘদিন ধরে অমানুষিক নির্যাতন করার পর মঙ্গলকোট ব্রিজে এনে গুলি করে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার অভিযোগে রাজাকররা পাচরই গ্রামের আনছার আলীকে বাড়ি থেকে তুলে এনে পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের টর্চার সেলে নির্যাতন করার পর একদিন দুপুরে মঙ্গলকোট ব্রিজের ওপর নিয়ে হত্যা করে। রাজাকারদের অত্যাচারে আতঙ্কিত হয়ে বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়ার জন্য পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের অনেককে পাকসেনারা গাড়িতে তুলে মঙ্গলকোট ব্রিজে নিয়ে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। [ঈশিতা আক্তার মুক্তি]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড