বীর বিক্রম মজিবুর রহমান
মজিবুর রহমান, বীর বিক্রম (১৯৫০-১৯৭১) সিপাহি, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর জন্ম ১৯৫০ সালে বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার দাসেরহাট ইউনিয়নের অন্তর্গত কমলাপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম সিরাজ উদ্দিন এবং মাতার নাম মোসা. হাসনা ভানু।
মজিবুর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে তিনি জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্টে সিপাহি পদে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চের কালরাতের পর তিনি মেজর সফিউল্লার নেতৃত্বে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ময়মনসিংহে যান। সেখান থেকে ক্যাপ্টেন এ এস এম নাসিমের নেতৃত্বে আশুগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তীতে সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে সিপাহি মজিবুর রহমান ক্যাপ্টেন নাসিমের নেতৃত্বে হবিগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকায় বিভিন্ন গেরিলা অপারেশন, রেইড ও এম্বুশে অংশ নিয়ে পাকবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেন। ব্রিগেড হিসেবে ‘এস’ ফোর্স গঠিত হলে তাঁকে ১১শ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করে এ ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ‘এস’ ফোর্সের প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি বীর বিক্রমে লড়াই করেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ৬ই ডিসেম্বর ভোরে তাঁর কোম্পানি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চান্দুরা নামক স্থানে পৌঁছায়। এ-সময় হঠাৎ পাকবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের ২টি লরি এবং ১টি বাসভর্তি সৈন্য সেখানে উপস্থিত হলে|
উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সিপাহি মজিবুর তাঁর প্লাটুন নিয়ে নদীর অপর পাড়ে অবস্থান নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন। হঠাৎ শত্রুপক্ষের ব্রাশফায়ারের গুলি এসে তাঁর বুকে লাগলে তিনি তৎক্ষণাৎ শাহাদাত বরণ করেন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান এবং আত্মোৎসর্গের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মজিবুর রহমান ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত হন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড