You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে ভোলা সদর উপজেলা - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে ভোলা সদর উপজেলা

ভোলা সদর উপজেলা ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হলে ভোলা কলেজে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাশেষে একটি মিছিল বের করা হয়। ২রা মার্চ সকাল ১০টায় ‘বরিশাল দালান’-এর সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পতাকাটি তৈরি করেন ভোলার খলিফা গোলাম মাওলা। সেখান থেকে ছাত্র- জনতা মিছিল করে মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে এবং ছাত্রনেতা শাজাহান মিলন পাকিস্তানি পতাকায় অগ্নিসংযোগ করেন। এ-সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন আফসার উদ্দিন বাবুল, মানস দত্ত, মন্টুবাবু এবং কালাচাঁদ দেবনাথ। জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন ভোলায় হরতাল পালিত হয়। এরপর থেকে অসহযোগ আন্দোলন- চলাকালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী ভোলায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হতে থাকে।
৩রা মার্চ ছাত্রনেতা সালেহ আহম্মদকে আহ্বায়ক করে ভোলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন ফজলুল কাদের (মজনু মোল্যা) এবং সদস্য ছিলেন কাদের খান, ফরিদ হোসেন বাবুল, কার্তিক দেবনাথ, আবদুল লতিফ খদ্দর, শাজাহান লালু, আনোয়ার হোসেন, শাজাহান গোলদার, কালীপদ দে, আজিজুল ইসলাম, শেখ ফরিদ, গোলাম মোস্তফা, আবদুল মোমিন টুলু, এ কে এম জুলফিকুল আলম জুলু, মোস্তাকিম, শফিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, আবু তাহের, আবু হোসেন, মজিবর রহমান মুজিব, শহিদুল্লাহ, লুৎফর রহমান, শাহজাদা, শাজাহান, রাজু আহাম্মেদ, গিয়াস উদ্দিন আহাম্মেদ, আতিক উল্লাহ, শামছুল আলম, মো. রফিকুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।
৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর দিকনির্দেশনামূলক ভাষণের পর ভোলায় মুক্তিযুদ্ধের আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। ১০ই মার্চ ভোলা থানা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদের কর্মকর্তা ও সদস্যরা ছিলেন মো. শামছুদ্দিন আহাম্মেদ মিয়া (সভাপতি), মোশাররফ হোসেন শাজাহান মিয়া এমপিএ, কমরেড নলিনী দাস, মোস্তাফিজুর রহমান মাস্টার, রিয়াজ উদ্দিন মোক্তার, মোখলেছুর রহমান দরবেশ, আবুল ফারাহ চৌধুরী মোল্লা, মিয়া মমতাজুল করিম, আবদুল মন্নান মিয়া, মোফাজ্জল হোসেন শাহিন ও শেখ জয়নাল আবেদীন। ২৩শে মার্চ পাকিস্তান দিবসে ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বানে ভোলার সকল দোকানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় পাকবাহিনীর বর্বরোচিত হামলা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার খবর ঐ রাতেই ভোলা টিএন্ডটি অফিসের অপারেটর এলাহি বকস ফজলুল কাদেরকে অবহিত করেন। ফজলুল কাদের ও ওবায়েদুল হক বাবুল মাইকিং করে এ খবর প্রচার করেন এবং মুহূর্তের মধ্যে তা ভোলা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবাদী জনতা রাস্তায় নেমে আসে এবং বিভিন্ন দিক থেকে মিছিল নিয়ে ভোলা সদর রোডে জমায়েত হয়। পাকবাহিনীর ভোলা আসার সম্ভাব্য সকল পথে মুক্তিকামী জনতা ব্যারিকেড দেয়ার চেষ্টা করে।
২৬শে মার্চ মুসলিম ইনস্টিটিউট মাঠে একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৭শে মার্চ সকালে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ ছুটিতে থাকা আর্মি, ইপিআর, আনসার ও পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা মুসলিম ইনস্টিটিউট মাঠে সমবেত হন।
সেখানে ক্যাপ্টেন মেহেদীর আহ্বানে খুলনা ও সদর বরিশালে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ২৮শে মার্চ মোশাররফ হোসেন শাজাহান মিয়ার নেতৃত্বে ভোলা মহকুমার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক সামসুল হুদা (বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক)-র সহায়তায় ট্রেজারি থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে ৫০ জনের একটি দল সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও জব্বারের নেতৃত্বে খুলনা ও বরিশালে পাঠানো হয় ২৫শে এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বরিশালে অনুপ্রবেশ করে। এ মাসের শেষদিকে বাকেরগঞ্জ-৭ আসন থেকে নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ডা. আজাহার উদ্দিন আহমেদ বরিশালে পাকবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেন। ভোলার পাকিস্তানপন্থীরা বরিশালে অবস্থানরত পাকসেনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গোপনে সংগঠিত হতে থাকে।
বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্ব থেকেই ভোলায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ চলছিল। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে টাউন স্কুল মাঠে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ৯ই মার্চ মোশাররফ হোসেন শাজাহান এমপিএ-এর আহ্বানে তাঁর গদিঘরের পেছনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তিনিসহ উপস্থিত ছিলেন মোখলেছুর রহমান মাস্টার, শফিউল্লাহ মিয়া, সালেহ আহাম্মদ, সাইফুল্লাহ মাস্টার, আবদুল ওয়াদুদ (রতনপুর), সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার ফিরোজ আহাম্মদ, সুবেদার গাজী জয়নাল আবেদীন, আবুল বশার, মাহফুজুর রহমান, আজাহার (ব্যাংকের হাট) প্রমুখ। সভায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য ফিরোজ আহাম্মদকে কমান্ডার এবং সুবেদার গাজী জয়নাল আবেদীনকে সহকারী কমান্ডার মনোনীত করা হয়।
মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পুরুষদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় আলতাজের রহমান মিয়ার গদিঘরের পেছনে, আলিয়া মাদ্রাসা, সরকারি স্কুল, বাংলা স্কুল, টাউন টনির হাট মাদ্রাসা মাঠে এবং নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বারেক মিয়া উকিল ও আলতাজের রহমান মিয়ার বাসা ও মোল্লা বাড়িতে। প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সিপাহি মো. আলী হোসেন, সুবেদার আবদুল মন্নান, সেনাসদস্য আবদুর রব, সুবেদার গাজী জয়নাল আবেদীন, হাবিলদার চান মিয়া, সুবেদার কাদের, শাহ আলম, হাবিলদার আফসার উদ্দিন, ল্যান্স নায়েক সিদ্দিকুর রহমান, ল্যান্স নায়েক আবদুল হাদি, আবদুল বারি, সিপাহি কাঞ্চন মিয়া এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সৈয়দ মাকসুদুর রহমান।
প্রথমে বাঁশের লাঠি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পরবর্তীতে ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় ভোলা সরকারি স্কুল ও ভোলা কলেজ থেকে ডামি রাইফেল এবং ভোলা ট্রেজারি থেকে সংগৃহীত অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ট্রেজারি থেকে অস্ত্র প্রদানের জন্য এপ্রিলের ১ম সপ্তাহে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সামসুল হুদাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে অনেকে মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যান। ভোলা সদরে মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক ব্যাপারে ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ।
ভোলায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সালেহ আহম্মদ, গাজী জয়নাল আবেদীন, মাওলানা মাকসুদ, এ কে এম নাসিরউদ্দিন, সামছুদ্দিন আহাম্মেদ মিয়া, সাইফুল্লাহ, শাজাহান গোলদার, সিদ্দিক মিয়া, ফিরোজ আহাম্মেদ, মোস্তাফিজ মাস্টার, জুলু, ওবায়েদুল হক বাবুল, জহুরুল ইসলাম মোল্লা, ওয়াহিদা রহমান প্রমুখ। আর কামান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন ফিরোজ আহাম্মদ, ল্যান্স নায়েক আবদুল ওয়াদুদ, ল্যান্স নায়েক নুরুল ইসলাম এবং সুবেদার গাজী জয়নাল আবেদীন।
৭ই এপ্রিল থেকে ভোলায় পাকবাহিনীর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কয়েকটি পাহারা চৌকি বসানো হয়। শান্তির হাটে ল্যান্স নায়েক আবদুল ওয়াদুদ, কাডির মাথায় ল্যান্স নায়েক নুরুল ইসলাম এবং খেয়াঘাটে আবদুল মালেককে কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রত্যেকের সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ জন সহযোগী সদস্য ছিল। কিন্তু বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে এপ্রিল মাসের শেষদিকে পাহারা চৌকি গুটিয়ে ফেলা হয়। ১৬ই এপ্রিল পাকবাহিনীর দুটি ফাইটার জেট ভোলার কাডির মাথায় মুক্তিযোদ্ধাদের পাহারা চৌকি এবং গাজীপুরে প্রায় ১০-১৫ মিনিট গোলাবর্ষণ করে উত্তর দিকে চলে যায়। এতে হরিনারায়ণ ও চিন্তাহরণ শীল নামে দুজন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। শাহ্য়াদা নামে অন্য একজন গুরুতর আহত হয় এবং তাকে ভোলা সদরে এনে চিকিৎসা দেয়া হয়। এর কয়েকদিন পর ৬ই মে ক্যাপ্টেন কায়ানি ও সুবেদার নওয়াব হোসেনের নেতৃত্বে পাকবাহিনী গানবোটে করে ভোলা খেয়াঘাটে পৌছায়। সেখানে তাদের অভ্যর্থনা জানায় স্বাধীনতাবিরোধী ইলিয়াস মিয়া মাস্টার, শাহ আলম চৌধুরী, খোরশেদ হাজী, বাদশা মিয়া, আমিনুল একরাম প্রমুখ। ভোলা শহরে প্রবেশ করে পাকবাহিনী ওয়াপদা অফিসে ক্যাম্প স্থাপন করে। তারা ওয়াপদার সামনে ও বরিশাল দালানের সামনে মেশিনগান বসিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করে এবং ওয়াপদা অফিসের চারপাশে বাঙ্কার খনন করে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে।
ভোলায় মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র সংঘ স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এসব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সহায়তায় শান্তি কমিটি রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠিত হয়। শান্তি কমিটির সদস্য ছিল ইলিয়াস মিয়া মাস্টার, হাজী খোরশেদ আলম, আমিনুল ইকরাম উকিল, আবদুল মন্নান হেকিম, শাহ মতিউর রহমান, ফজলুর রহমান (বাদশা মিয়া), মো. টনি, শাহ আলম চৌধুরী, ইউনুস কন্ট্রাক্টর, ওয়ারেস মাস্টার, নেজামল হক, মাহমুদুল হক, হাসমত হাওলাদার, মোতাহার কমান্ডার, আবুল কাশেম, মন্নান ডাক্তার, ফরহাদ হাজী, মাওলানা ওবায়েদুল্লাহ, মুসলেম মিয়া, বাসু হাওলাদার, মাওলানা রুহুল আমিন, ধনীয়ার সিদ্দিক কমান্ডার, আবদুল লতিফ হেকিম, মালেক মেম্বার ও মোখলেছুর রহমান। রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিল আবদুল্লাহ মৌলভী (কমান্ডার), মফিজুল ইসলাম, পি এন জি কালু, নুরু দফাদার, মুচু ড্রাইভার, মজিবল বিহারি, জয়নাল মাতব্বর, আবু কালাম, দুলাল ড্রাইভার, আবদুর রশিদ, মোজাম্মেল, আবদুল বারেক, সুবেদার আবদুল কাদের, সৈয়দ আহাম্মদ দালাল, মোতাহার দালাল, আবদুল মন্নান, আবদুল মালেক, আবদুল খালেক, আবু তাহের, বেলায়েত, ইয়াছিন মুন্সী, কলিমুল্লাহ, হোসেন পাটোয়ারী, সালেম পাটোয়ারী, সিরাজুল হক, আবুল কালাম ফরাজি, মকবুল কমান্ডার, শাজাহান, আনসার উদ্দিন, রহমান মেম্বার, সামছুল হক ওরফে পাকিস্তান মৌলভী, হানিফ প্রমুখ। আলবদর বাহিনীতে ছিল মফিজুল ইসলাম, কবি ম আবদুল মালেক, মো. শাজাহান, মো. হোসেন, আবদুল্লাহ, আবদুল কাদের হাওলাদার, মো. খাকান, লোকমান মৌলভী, আবদুল লতিফ হাওলাদার প্রমুখ। আর আলশামস বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল আবদুল কাদের, আবদুল হক, আবদুস সোবাহান, কামাল প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা হলো- আবদুল্লাহ মৌলভী (উকিল পাড়া, গোরস্থান রোড), মজিবল বিহারি (চকবাজার, ভোলা), পি এন জি কালু (কালীবাড়ি), জয়নাল মাতব্বর (ইলিশা বাসস্ট্যান্ড), দুলাল ড্রাইভার (মহকুমা প্রশাসক অফিস), মোহাম্মদ টনি (দক্ষিণ দিঘলদী), সৈয়দ আহাম্মদ দালাল (অফিসার পাড়া), মোতাহার দালাল (অফিসার পাড়া), নুরু দফাদার (তুলাতলি) এবং মাওলানা নুরুল্লাহ (ভোলা আলিয়া মাদ্রাসার তৎকালীন ছাত্র)।
পাকবাহিনী ভোলায় প্রবেশ করেই ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সামসুল হুদাকে তাঁর স্ত্রীসহ হত্যা করে। এরপর মুক্তিযুদ্ধের সময় উপর্যুক্ত সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে পাকবাহিনীকে সহযোগিতা করে। তারা ভোলা সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর অপারেশন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে। অনেক নিরীহ মানুষকে বিনা অপরাধে হত্যা করে। রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান, হিন্দুপ্রধান এলাকা, মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের সহায়তাকারী এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বসতবাড়ির তালিকা পাকবাহিনীকে সরবরাহ করত। তারা পাকদোসর হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি নারকীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত করত। এসব কাজের জন্য তারা মে মাসে ভোলায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ইলিয়াছ মাস্টারের সদর রোডের গদিঘরে রাজাকার বাহিনীর থাকার ব্যবস্থা করা হয় এবং আলবদর ও আলশামস বাহিনীর জন্য ডাকবাংলো ও সাধনা দালানে ক্যাম্প করে দেয়া হয়।
পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভোলা খেয়াঘাটে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে আনা নিরীহ লোকদের হত্যা করত। ভোলা ওয়াপদা অফিসের পূর্ব পাশের মাঠেও অনেককে হত্যা করে গণকবর দিয়েছে। ভোলায় শহীদদের কয়েকজন হলেন- হরিনারায়ণ (১৬ই এপ্রিল কাডির মাথায় পাকবাহিনীর গোলাবর্ষণে শহীদ), চিন্তাহরণ শীল (ঐ), খোরশেদ (কাঠালী), বাসুদেব (সদর রোড), গৌরাঙ্গ (রতনপুর), খালেক, আজিজল হক (সাহেবের চর), মতি সাজি ও তার স্ত্রী (গাজীপুর রোড), আতাউর রহমান (ওয়াপদার স্পীডবোটের চালক), মো. আবুল হোসেন (দক্ষিণ দিঘলদী), মো. সালেম (মুসলিম পাড়া), কালাচাঁদ (ওয়েস্টার্ন পাড়া), শংকর, শচীন্দ্র লাল কর্মকার, কেতু সাহা, রঘুনাথ কর্মকার, ভবতোষ কর্মকার, প্রফুল্ল বালা (করঞ্জাই), শ্যামল ডাক্তার, বিরেন পোদ্দার, রঘুনাথ পোদ্দার, কাজল (সাহেবের চর), মোফাজ্জল হোসেন, ইয়াসিন (চর ছীফুলী), আশুতোষ কর্মকার (দরগা রোড), ভুলু কুমার দাস (দরগা রোড), সুবোধ সাহা (পাচ তহবিল সড়ক), মনোরঞ্জন দেবনাথ (পাচ তহবিল সড়ক), রুহুল আমিন, আবু তাহের দফাদার (ইলিশা), সেকান্দার হাওলাদার (বাংলাবাজার যুদ্ধে শহীদ), বারেক হাওলাদার (ঐ), মুনাফ (ঐ), গফুর সর্দার (ঘুইঙ্গার হাটের যুদ্ধএ শহীদ), মন্নান চাপরাশি (ঐ), জবেদ আলী (ঐ; দোকানদার), আলী ইসলাম প্রমুখ।
পাকবাহিনী ভোলা সদর উপজেলায় অনেক নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। একাজে তাদের সহায়তা করে মুচু ড্রাইভার, নুরু দফাদার, মো. টনি, দুলাল ড্রাইভার, মো. ইউনুছ, পি এন জি কালু, সৈয়দ আহাম্মদ দালাল, মোতাহার দালাল প্রমুখ। নির্যাতিতদের অধিকাংশই ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। সামাজিক নিরাপত্তার কারণে অনেকে তাদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন- লুৎফা, ডেইজি, শেফালি, সাধনা দত্ত, কাজল ব্যানার্জী, লাভলি, অলকা রাণী পাল, শোভা রাণী এবং আলো রাণী দত্ত (২০১০ সালে ভোলা কোর্টে এমপি ১০৯/১০ নং মামলা হয়, মামলার বাদি শান্তি রঞ্জন দত্ত এবং বিবাদি জয়নাল আবেদীন গং)। কয়েকজন নারীকে নিয়মিত পাকসেনাদের ক্যাম্পে যেতে ও রাত্রিযাপনে বাধ্য করা হয়। পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা উপজেলার অনেক বাড়িঘর ও বাজারে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন করে। যেসব বাড়িঘর ও বাজারে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন চালানো হয়েছে, সেগুলো হলো— মোল্লাবাড়ি (কালীনাথ রায়ের বাজার), খন্দকার বাড়ি (কালীবাড়ি রোড), কালা মিয়া হাওলাদারের বাড়ি (বাপ্তা), ধোপাবাড়ি (চর শামাইয়া), ভেলুমিয়া রায়মন করঞ্জাইর বাড়ি, শশী ডাক্তারের বাড়ি (আলীনগর), জলিল হাওলাদারের বাড়ি (কাঠালী), ওমর আলী ব্যাপারীর বাড়ি (কাঠালী), শান্তিরঞ্জন দত্তের বাড়ি (ইলিশা বাসস্ট্যান্ড), ঘুইঙ্গার হাট, বাংলাবাজার ও তালতলি বাজার। এছাড়া বাপ্তার নমকান্দি, ভোলা শহরের হিন্দুপ্রধান ওয়েস্টার্ন পাড়ার বণিকবাড়ি, ঘোষবাড়ি, জেরন কর্মকারের বাড়ি, দত্তবাড়ি, সাহাবাড়ি, গুরুদাস পোদ্দারের বাড়ি, কালীবাড়ি রোড, কালীনাথ রায়ের বাজারস্থ হিন্দুদের বাড়িঘর, ভোলা শহরের প্রায় সকল হিন্দু দোকান, চকবাজারের কেদারি মোহন সাহার দোকান, সাধনা দালানের রমেশ সাহার কাপড়ের দোকান, কাঠালীর জলিল হাওলাদারের চালের আড়ত, আমানত পাড়ার হেলাল উদ্দিন মিয়ার বাড়ি, ইলিশা বাসস্ট্যান্ডের মাধব পালের বাড়ি, বাংলাবাজারের সিদ্দিক মিয়ার বাড়ি প্রভৃতিও তারা লুট করে এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
ভোলায় পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির হিসেবে ওয়াপদা কার্যালয় ব্যবহার করা হয়, যা ভোলা ওয়াপদা ক্যাম্প নির্যাতনকেন্দ্র নামে পরিচিত|
ভোলা সদর উপজেলায় দুটি বধ্যভূমি ও একটি গণকবর রয়েছে— ভোলা খেয়াঘাট বধ্যভূমি এবং যোগীরঘোল বধ্যভূমি ও গণকবর।
ভোলায় মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় বিশেষ বাহিনী হিসেবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলা স্কুল মাঠে ওবায়েদুল হক বাবুলকে আহ্বায়ক করে যুবমুক্তি বাহিনী গঠন করা হয়। এর অন্য সদস্যরা ছিলেন- আবুল কালাম আজাদ (যুগ্ম আহ্বায়ক), সালেহ আহম্মদ, ফরিদ হোসেন বাবুল, মোস্তাকিম, মো. শফিকুল ইসলাম, টুলু, মজনু মোল্লা, রফিকুল ইসলাম, আলমগীর গোলদার, হুমায়ুন, শহিদুল্লাহ, নাগর, রফিক, নুরন্নবী মিন্টু, ফজলে হোসেন, সাদেক, কার্তিক দেবনাথ, শেখ ফরিদ, কাদের খান, অসিত বাবু প্রমুখ। পরবর্তীতে এ বাহিনী মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। ১৫ই নভেম্বর টারজান বাহিনী নামে আরেকটি বাহিনী গঠিত হয়। এ বাহিনীর সদস্য ছিলেন- ফিরোজ আহাম্মদ, গাজী জয়নাল আবেদীন, এছাহাক জমাদ্দার, বারেক, সাদেক, মাহফুজ, কাঞ্চন, সফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম, আবু তাহের, রফিক, নূরুল ইসলাম, রুহুল আমিন, আবদুল মোমিন টুলু, ওবায়েদুল হক বাবুল, শহিদুল্লাহ, নুরন্নবী মিন্টু প্রমুখ। ভোলায় মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি নকশাল হিসেবে পরিচিত সিরাজ সিকদারের বাহিনীর সদস্যরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন- মাওলানা মাকসুদুর রহমান, রিয়াজুর রহমান খোকন, মাকসুদ হেলালি, জিয়াউল কুদ্দুস, লিয়াকত হোসেন, হাসান ইমাম, মিজান, হিরন, মাসুদ প্রমুখ।
ভোলা সদর উপজেলায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হচ্ছে ঘুইঙ্গার হাটের যুদ্ধ। ২৭শে অক্টোবর মোহাম্মদ ফারুক, জমশেদ খন্দকার, আবু তাহের প্রমুখের নেতৃত্বে সংঘটিত এ-যুদ্ধে ১২ জন পাকসেনা ও তাদের দোসর নিহত হয় এবং ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৪ জন সাধারণ লোক শহীদ হন।
নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পাকবাহিনীর কার্যক্রম ভোলা, দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন থানার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এর আগে লালমোহন, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশন থানা মুক্ত হয়ে যায়। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বেড়ে যায়। এমতাবস্থায় ভোলার বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা ভোলার চারদিকে সমবেত হতে থাকেন। টারজান বাহিনী বিভিন্ন চোরাগোপ্তা আক্রমণের মাধ্যমে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের আতঙ্কিত করে তোলে। এ গ্রুপটি কয়েকজন পাক দোসরকে বন্দি ও হত্যা করে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা আলী আকবর বড়ভাইর গ্রুপ চরপাতায়, সিদ্দিক মিয়ার গ্রুপ ধনিয়ায়, কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান শিশুর গ্রুপ বাপ্তায় এবং রতন চৌধুরীর গ্রুপ রামাদাশপুরে অবস্থান নিয়ে বিভিন্নভাবে পাকবাহিনীকে আতঙ্কিত করে রাখে। ডিসেম্বর মাসে পাকবাহিনীর কার্যক্রম ভোলা শহর ও ওয়াপদার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। পাকবাহিনী যাতে ভোলা ত্যাগ করতে না পারে সেজন্য মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা নেন। কিন্তু ১০ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সকল প্রতিরোধ অতিক্রম করে ভোলা শহর ত্যাগ করে এবং এদিনই উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, বীর প্রতীক (পিতা আব্দুল ওয়াজেদ, উকিলপাড়া), মো. সিদ্দিক, বীর প্রতীক (পিতা মৌলবি গোলাম রহমান, চরনোয়াবাদ)।
ভোলা সদর উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- সৈয়দ মাকসুদুর রহমান (পিতা সৈয়দ শামসুল হক, ভোলা সদর; পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ছিলেন), ডা. আমিনউদ্দিন (পিতা মৌ. হাবিবুর রহমান), মো. ইউনুছ (পিতা আব্দুল খালেক, দক্ষিণ দিঘলদী), মো. ছালেক (পিতা ওয়াহেদ আলী, মুসলিম পাড়া; আনসার সদস্য), মো. রফিকুল ইসলাম (পিতা মো. ইউনুছ হাওলাদার, ছোট আলগী), খলিলুর রহমান (পিতা আব্দুস সোবহান হাওলাদার, চরকুমারীয়া), মো. সিরাজ (পিতা আবদুল বারেক, ১নংওয়ার্ড, উত্তর দিঘলদী), মো. সালাম (পিতা রশিদ, ৩নং ওয়ার্ড, উত্তর দিঘলদী), মো. শাহে আলম (পিতা আবদুল মুনাফ সরদার, চরকুমারীয়া), মাওলানা আ. ছোবাহান (পিতা ইসমাইল মুন্সী, নবীপুর ধনিয়া), আজহার উদ্দিন (পিতা আনামিয়া দালাল, ৩নং ওয়ার্ড, ভেদুরিয়া), মো. হোসেন (পিতা এসাহাক ব্যাপারী, আলীনগর), আমিনুল ইসলাম (পিতা মো. রফিকুল হক চৌধুরী, ২নং ওয়ার্ড, রাজাপুর), বিল্লাল (পিতা আ. মজিদ, দক্ষিণ দিঘলদী), আ. হক (পিতা গেদু ডাক্তার, দক্ষিণ দিঘলদী), আ. জব্বার বেপারী (পিতা আলহাজউদ্দিন, দক্ষিণ দিঘলদী), ডা. সৈয়দ আহম্মদ (পিতা গেদু ডাক্তার, দক্ষিণ দিঘলদী), মো. ইয়াছিন সিকদার (পিতা কোব্বত আলী সিকদার, দক্ষিণ দিঘলদী), মুনাব আলী (পিতা আলতাজ বেপারী, দক্ষিণ দিঘলদী), ডা. আবুল হোসেন (পিতা আলী আকবর ব্যাপারী, দক্ষিণ দিঘলদী), মো. হানিফ (পিতা শাদর আলী, পশ্চিম চরনোয়াবাদ, বাপ্তা), সেকান্দর আলী (পিতা অহেদ হাওলাদার, দক্ষিণ দিঘলদী), আ. গফুর (পিতা হানেফ জান ফরাজী, চরকুমারীয়া), আ. মন্নান (পিতা মোবারক আলী, চরকুমারীয়া), হাবিলদার আবদুল ওয়াদুদ (পিতা মোজাফ্ফর হোসেন, রতনপুর, ভোলা সদর), ফরিদ উদ্দিন (পিতা মো. মোসলেউদ্দিন মাস্টার, রতনপুর, ভোলা সদর), হরিমোহন কর্মকার (পিতা বসন্ত সাধু, দক্ষিণ দিঘলদী), আবদুর রাজ্জাক (পিতা বেলায়েত হোসেন, কাচিয়া), ওমর ফারুক (পিতা আব্দুল ওয়াদুদ ‘পণ্ডিত, চরকালী), হারুন-অর-রশিদ (পিতা মৌলবি মো. নুরুল ইসলাম, চরকুমাইয়া, উত্তর দিঘলদী), মো. ইয়াছিন (বলরামপুর ধনিয়া), দিলীপ চন্দ্র দাস (বাপ্তা), তানসেন মৃধা (পিতা হাসন আলী বয়াতী, দেবীরচর; বাংলাবাজার যুদ্ধএ শহীদ), আব্দুল জলিল বেপারী, পিতা বাগমআলী বেপারী, দেবীরচর; ঐ), সেনাসদস্য ছলেমন (পিতা নজির আহম্মদ, পাঙ্গাসিয়া; ১৭ই মে ঘুইংগারহাট যুদ্ধে শহীদ), সেনাবাহিনীর হাবিলদার নুর ইসলাম (পিতা একাব্বর, মুন্সিবাড়ী, পাকারমাথা, লালমোহন পৌরসভা), পুলিশ কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম (পিতা আরশাদ মিয়া, বালুরচর; ২৬শে মার্চ শহীদ), ল্যান্স লায়েক মো. জামালউদ্দিন (পিতা মাওলানা মনসুর আহম্মদ, চতলা; ইপিআর ওয়ারলেস ওপারেটর, ২৫শে মার্চ ঢাকার পিলখানা থেকে পাকবাহিনী তুলে নিয়ে যায়, তারপরে তাঁর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি), আনসার সদস্য আবদুস সহিদ (পিতা মো. ছাবেদ আলী, ফুলবাগিচা; পাকবাহিনী বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে), আবুল হোসেন (পিতা আজাহার উদ্দিন হাওলাদার, পাঙ্গাসিয়া; অবসরপ্রাপ্ত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সদস্য, পশ্চিমচর উমেদ আদমজী জুট মিলে কর্মরত ছিলেন, ২৬শে মার্চ পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ) এবং আবু সায়েদ (২১শে জুন পাকবাহিনী ভোলা খেয়াঘাটে গুলি করে হত্যা করে)।
ভোলা সদর উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংগ্রহশালা (পুরাতন ডাকবাংলো), মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক (জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে), তোফায়েল আহমেদ প্রতিষ্ঠিত স্বাধীনতা জাদুঘর (বাংলাবাজার), বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টারমিনাল, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল কলেজ (আলীনগর), বীরশ্রেষ্ঠ জাদুঘর (আলীনগর), শহীদ আবদুস সালাম স্কুল (উত্তর দিঘলদী), সাইফুল্লাহ-সালেহ আহমদ সড়ক (নতুন বাজার) এবং বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল কিন্ডারগার্টেন (পরানগঞ্জ) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। [মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড