ভোলাব যুদ্ধ (রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ)
ভোলাব যুদ্ধ (রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ) পরিচালিত হয় ২৮শে নভেম্বর। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব প্রাইমারি স্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্প ছিল। কালীগঞ্জ, নরসিংদী, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার প্রভৃতি এলাকার কয়েকশ মুক্তিযোদ্ধা এ ক্যাম্পে অবস্থান করতেন এবং এখান থেকেই তাঁরা বিভিন্ন স্থানে অপারেশনে যেতেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ক্যাম্পের পাশ দিয়ে চারতালু গ্রামের এক রাজাকার মতিউর রহমান বোরখা পরে মহিলা সেজে যাচ্ছিল। সন্দেহ হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা তাকে চ্যালেঞ্জ করেন। জেরার মুখে সে স্বীকার করে যে, সে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে এখানে এসেছিল। আগের দিন সে ক্যাম্প রেকি করে নরসিংদীর পাকবাহিনীর ক্যাম্পে সংবাদ দেয়। তার সংবাদের ভিত্তিতেই ২৮শে নভেম্বর রাত ১২টার দিকে পাকসেনারা ভোলাব ক্যাম্প আক্রমণ করে। তখন ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মো. গোলাম রশিদ বকুল (রূপসী বাগবাড়ি, রূপগঞ্জ)। পাকসেনাদের ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে ক্রলিং করে এগিয়ে আসতে দেখেই তিনি তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলির শব্দে ঘুমন্ত মুক্তিযোদ্ধারা জেগে উঠে দ্রুত অস্ত্রগুলো সরিয়ে ফেলেন। কালীগঞ্জের নাগরী গ্রামের অগাস্টিন প্যারেলা, সাইম সরকার, মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. ফকির চান মৃধা, পরিমল ডি কস্তা, লুইস পালমা, হেমেন্দ্র চন্দ্র নাগ, কমল রোজারিও, আড়াইহাজারের হাইজাদী ইউনিয়নের আতাদি গ্রামের মো. রেজাউল করিম, ডেভিড রোজারিও, মো. নাছিরউল্লা খান, মো. আবুল বাসার, মো. সোবেদ আলী, জোসেফ গোমেজ, কালীগঞ্জের তুমুলিয়া ইউনিয়নের বান্ধাখোলা গ্রামের মো. কাজী শাহজাহান, রামচন্দ্র দত্ত, আলাউদ্দিন মিয়াসহ মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণে লড়াই করে শত্রুর মোকাবেলা করেন। পাকসেনারা শক্তিশালী অস্ত্র দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর প্রচণ্ড গোলাগুলি করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর সঙ্গে না পেরে পানির মধ্যে অস্ত্রগুলো ডুবিয়ে রেখে আত্মগোপন করতে বাধ্য হন। কিন্তু অগাস্টিন প্যারেলা পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়েন। পাকসেনারা তাকে নরসিংদী নিয়ে অনেক নির্যাতন করে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থান ছুরি দিয়ে কেটে লবণ লাগিয়ে দেয়। তারপরও তাঁর মুখ থেকে সহযোদ্ধাদের একটি নামও বের হয় না দেখে আরো নির্যাতনের পর তাঁকে হত্যা করা হয়। [রীতা ভৌমিক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড