বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমাজসেবী ও রাজনীতিবিদ মওলানা আবদুল লতিফ
মওলানা আবদুল লতিফ (১৯২২-১৯৯০) ভারতের সমাজসেবী ও রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯২২ সালে ত্রিপুরার কৈলাসহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ মুছিম মিয়া এবং মাতার নাম আবিরা বেগম। তিনি টিলাবাজার মাদ্রাসা থেকে জুনিয়র মাদ্রাসা এবং সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা থেকে সিনিয়র মাদ্রাসা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৩৪ সালে কলকাতার টাইটেল মাদ্রাসা থেকে টাইটেল সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি ১৯৩৮ সালে কৈলাশহরে ব্যবসা শুরু করেন।
ভারতে প্রথম মাইনরিটি বোর্ড গঠিত হলে তিনি এর সদস্য নিযুক্ত হন (১৯৫০) এবং তখন থেকেই সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ১৯৫২ সালে ত্রিপুরা আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য, ১৯৫৬-৬২ সময়ে ত্রিপুরা থেকে ভারতের রাজ্যসভায় প্রথম কংগ্রেস দলীয় সদস্য এবং ১৯৭২ সালে ত্রিপুরা বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় উত্তর ত্রিপুরা জেলার পরিকল্পনা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং রাধিকা রঞ্জনের মন্ত্রিসভায় কৃষি দপ্তরের পূর্ণমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত হন। ১৯৮২ সালে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সারাজীবন অজস্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। ১৯৯০ সালের ৩০শে ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে বিশিষ্ট আলেম মওলানা আবদুল লতিফ ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী শরণার্থী শিবিরগুলোতে শরণার্থীদের সেবাযত্ন, খাদ্য সরবরাহ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেন। তিনি অসংখ্য শরণার্থী, মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক নেতাদের তাঁর বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তাঁর নিজ টিলাভূমিতে পঁচিশ হাজার শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের ২০শে অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মওলানা আবদুল লতিফ-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড