You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে ভৈরব উপজেলা (কিশোরগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে ভৈরব উপজেলা (কিশোরগঞ্জ)

ভৈরব উপজেলা (কিশোরগঞ্জ) ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নিরঙ্কুশভাবে জয়যুক্ত করে। নবনির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল ৩রা মার্চ। কিন্তু এর দুদিন আগে ১লা মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এতে সারা দেশের মানুষ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ভৈরবের সর্বস্তরের জনগণও স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ মিছিল করে। তারা গগনবিদারী স্লোগান দেয়, ‘ইয়াহিয়ার ঘোষণা – মানি না, মানি না; জাগো, জাগো বাঙালী জাগো; তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’ ইত্যাদি। পরের দিন ২রা মার্চ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। তাতে ছাত্র- যুবক-কৃষক-শ্রমিক ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ব্যবসায়ীরা যোগ দেন। মিছিলে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দেয়া হয়।
৩রা মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর আহ্বানে সমগ্র দেশের ন্যায় ভৈরবেও হরতাল পালিত হয়। এদিন সন্ধ্যায় আগরতলা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত কমান্ডার (অব.) আবদুর রউফ ভৈরবে এক সভা করেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পরের দিন সকাল ১১টায় পৌরসভা চত্বরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুক্তিপাগল জনতা যথাসময়ে পৌরসভা প্রাঙ্গণে সমবেত হয়। অতঃপর একজন শ্রমিক (শ্রমিকনেতা মোন্তাজ উদ্দিন), একজন কৃষক (সায়েদ হোসেন) ও একজন ছাত্র (শেখ জসিম উদ্দিন আহমদ, হাজী আসমত কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি) দ্বারা ভৈরবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য ভৈরবের শতাধিক তরুণ ঢাকায় পৌঁছায়। ভাষণ শুনে তারা স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়। ২৩শে মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ-এর আহ্বানে ভৈরবে পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়। ২৬শে মার্চ ভোরে ভৈরব টেলিফোন অফিস থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়াসহ অন্যান্যদের ঢাকার অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়। ছাত্রনেতা ফখরুল আলম আক্কাছ মাইকযোগে ঢাকায় ২৫শে মার্চের হত্যাকাণ্ড ও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। মুহূর্তে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে ভৈরবসহ আশপাশের গ্রামে-গঞ্জে। মুক্তিকামী জনতা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এভাবেই ভৈরবে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্ব।
১৯৭১ সালের ২৮শে মার্চ জয়দেবপুর সেনানিবাস থেকে মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে বাঙালি সৈনিকদের একটি দল বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ২রা এপ্রিল তরুণ অফিসার ক্যাপ্টেন নাসিমের (সাবেক সেনাপ্রধান) নেতৃত্বে কতিপয় সৈনিক ভৈরবে –এসে এম পি গার্লস হাইস্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করেন। তাঁদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পেরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দুটি জঙ্গিবিমান নিয়ে ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আকাশে চক্কর দেয়। তাই বিদ্রোহী সেনাদল অধিকতর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ভৈরব থেকে ক্যাম্প আশুগঞ্জে স্থানান্তর করে। সেখান থেকেই ক্যাপ্টেন নাসিম ভৈরব থানার ওসি কুতুবুর রহমান ও ভৈরবের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্থানীয় ছাত্র- যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করেন। সেনাবাহিনীর এক প্রশিক্ষক তাদের ৭ দিন প্রশিক্ষণ দেন। এই প্রশিক্ষিত যুবকরা পাকিস্তানি বাহিনীর সম্ভাব্য হামলা মোকাবেলার জন্য স্থানীয় আনসার ও পুলিশের কাছ থেকে বেশকিছু থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল সংগ্রহ করেন। ভৈরবের এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের কয়েকজন সদস্য নিয়ে ভৈরব ও আশুগঞ্জে একটি শক্তিশালী মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলা হয়।
ভৈরবে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরা হলেন- তৎকালীন এমএনএ এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান (প্রয়াত), এস বি জামান এমপিএ (বীরকাশিম), ভৈরব আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আলাউদ্দিন (জগন্নাথপুর) ও সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক (ভৈরবপুর), ভৈরব থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মির্জা সুলায়মান (চণ্ডিবেড়) ও সাধারণ সম্পাদক রইছ উদ্দিন চনু (জগন্নাথপুর), হাজী আসমত কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি শেখ জসিম উদ্দিন আহমদ (আশুগঞ্জ) ও জিএস ফখরুল আলম আক্কাছ (ভৈরবপুর), ছাত্রনেতা ও ভৈরবে মুজিব বাহিনীর প্রধান ফয়সুল আলম (ভৈরবপুর), সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (চণ্ডিবেড়), মো. আব্দুল হামিদ (রসুলপুর), নাছির উদ্দিন আহমেদ (শ্রীনগর), মো. তারেক (পঞ্চবটি), মোল্লা হুমায়ূন কবির (কমলপুর), মো. ছাইদুর রহমান (জগন্নাথপুর), মো. আজাদ মিয়া (কমলপুর), মো. সায়দুল্লাহ মিয়া (ভৈরবপুর) প্রমুখ।
ঢাকায় ২৫শে মার্চের মর্মান্তিক ঘটনার পর ২৬শে মার্চ ভৈরবের স্বাধীনতাকামী জনতা ভৈরবের কাছে রেললাইন উপড়ে ফেলে। তারা স্থল ও নৌ-পথেও প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ক্যাপ্টেন নাসিম আশুগঞ্জের লালপুর, ভৈরবের জব্বার জুট মিলস জেটি ও রামনগর ব্রিজের কাছে বাংকার স্থাপন করে সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করেন। ফলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে এই তিন পথে ভৈরবে আসার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তাই তারা আকাশ পথকে বেছে নেয়। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পাকবাহিনীর ৪টি বোমারু বিমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বোমা বর্ষণ করে ভৈরবের আকাশসীমায় প্রবেশ করলে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা সেগুলোকে আক্রমণ করে। ভৈরব গার্লস হাইস্কুলের বিপরীতে অবস্থিত হাফিজ ম্যানশনের ছাদ থেকে তারা বিমান লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। এর ফলে বিমানগুলো পালিয়ে যায়। ভৈরবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রথম প্রবেশ করে ১৪ই এপ্রিল (১লা বৈশাখ)। এদিন পাকসেনাদের এক বিশাল বহর হেলিকপ্টারযোগে ভৈরব থানাধীন শিমুলকান্দি ইউনিয়নের মধ্যেরচর গ্রামে অবতরণ করে। দক্ষিণ দিক থেকে গোলন্দাজ ও নৌ-বাহিনী এবং উত্তর দিক থেকে ছত্রীবাহিনী একযোগে আক্রমণ করে বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেয়। এভাবে ভৈরব দখল করে তারা মেঘনার তীরবর্তী বাংলাদেশ রেলওয়ে হাইস্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভৈরবে ক্যাম্প স্থাপনের পর স্থানীয় লোকদের সহায়তায় শান্তি কমিটি গঠনে তৎপর হয়। এর ফলে কালিকাপ্রসাদ গ্রামের শীর্ষস্থানীয় দালাল মোমতাজ পাগলার নেতৃত্বে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। কমিটির চেয়ারম্যান হয় ভৈরবপুরের এম এ মন্নান। পরবর্তীতে সে পদত্যাগ করলে চণ্ডিবেড় গ্রামের লায়েছ মিয়াকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলো— চায়না নুরু (ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া), ইসমাঈল ব্যানার্জি (জগন্নাথপুর দক্ষিণপাড়া), মোন্তাজ মিয়া (ভৈরবপুর উত্তরপাড়া), কেরামত আলী ওরফে কেরাত্যা (চণ্ডিবেড় দক্ষিণপাড়া), মোবারক আলী (জগন্নাথপুর মধ্যপাড়া), জমির হোসেন (জগন্নাথপুর উত্তরপাড়া), ফিরোজ মাস্টার (ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া), রহমত আলী (ভৈরবপুর উত্তরপাড়া), মো. ছাকি (কালিকাপ্রসাদ), মো. শাফি (কালিকাপ্রসাদ) এবং আব্দুল গণি (শম্ভুপুর)। এছাড়া মোমতাজ পাগলার ছেলে মো. আবদুল হাদীর নেতৃত্বে একটি কিলার বাহিনী গড়ে উঠেছিল, যার নাম ছিল হাদী বাহিনী। এ বাহিনীর অন্য সদস্যরা ছিল- জাকির হোসেন (ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া), সাদেক হোসেন (ভৈরবপুর উত্তরপাড়া), মানিক মিয়া (ভৈরবপুর উত্তরপাড়া), মুকুল মিয়া (ভৈরবপুর উত্তরপাড়া), মিজান মিয়া (ভৈরবপুর উত্তরপাড়া), জিলু মিয়া (ভৈরবপুর উত্তরপাড়া), আব্দুস ছাদেক (ভৈরবপুর উত্তরপাড়া) ও ছাদেক মিয়া (শম্ভুপুর)। এদের মধ্যে আব্দুস ছাদেক মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। ১৪ই এপ্রিল মধ্যেরচর গ্রামে পাকবাহিনীর অবতরণের খবরে আশপাশের গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভীত-সন্ত্রস্ত গ্রামবাসী জীবন বাঁচাতে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হওয়ার জন্য পানাউল্লারচর গ্রামের হালগড়া খেয়াঘাটে জড় হয়। এ সংবাদ পেয়ে পাকবাহিনী সেখানে গিয়ে নির্বিচারে গুলি চালায় এতে তিনশতাধিক নিরস্ত্র-নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারায়। এ ঘটনা পানাউল্লারচর গণহত্যা নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে পাকসেনারা তাদের দালাল সাত্তার মাস্টারের সহায়তায় মানিকদী গ্রামে অভিযান চালায়। এ-সময় নিরীহ জনসাধারণ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে মধ্যপাড়া মসজিদে আশ্রয় নেয়। কিন্তু হানাদাররা মসজিদে ঢুকে নিমর্মভাবে তাদের হত্যা করে। ভৈরবের ইতিহাসে এ ঘটনা মধ্যপাড়া মসজিদ গণহত্যা নামে পরিচিত। এছাড়া পাকসেনা ও তাদের দোসররা ভৈরববাজার, ভৈরবপুর, লক্ষ্মীপুর, কালীপুর, কমলপুর, গোছামারা, চণ্ডিবেড়সহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।
মেঘনা নদীর পারে আশুগঞ্জের সাইলো ছিল পাকবাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র। এখানে মুক্তিকামী নিরীহ বাঙালিদের ধরে এনে নির্মম নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনের পর হত্যা করে তাদের লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হতো।
ভৈরব উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধারা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন চালান এবং পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভৈরব বিদ্যুৎ টাওয়ার অপারেশন- মোমতাজ পাগলা অপারেশন- কালিকাপ্রসাদ রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন নন্দনপুর যুদ্ধ ও ভৈরব রেলব্রিজ অপারেশন। ভৈরবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার উদ্দেশ্যে ২রা জুলাই মুক্তিযোদ্ধারা ভৈরব বিদ্যুৎ টাওয়ার ধ্বংস করে দেন। ৪ঠা জুলাই ভৈরবের ত্রাস মোমতাজ পাগলাকে ছবিঘর সিনেমা হলের সামনে হত্যা করা হয়। এ সময় আতিক নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। অক্টোবর মাসের প্রথমদিকে মুক্তিযোদ্ধারা কালিকাপ্রসাদ রাজাকার ক্যাম্প দখল করে নেন। এতে বেশ কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়। ২৪শে অক্টোবর নন্দনপুর গ্রামের কাছে পাঞ্জাবি মিলিটারির সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে সিদ্দিক ও মুজিবুর নামে দুজন মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থলে শহীদ হন এবং আশুরঞ্জন দেব নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। ২৯শে অক্টোবর পাকবাহিনী তাঁকে হত্যা করে। ২৫শে অক্টোবর রাতে ভৈরব রেল ব্রিজে সফল অপারেশন পরিচালনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ টি এম হায়দার (পাকিস্তান এসএসজি স্পেশাল সার্ভিস কমান্ডো গ্রুপের ক্যাপ্টেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ২নং সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিনায়ক)।
১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও ভৈরবে অবস্থানরত পাকসেনারা তখনও আত্মসমর্পণ করেনি। এমতাবস্থায় পূর্বাঞ্চলের এক ডিভিশন সৈন্য নিয়ে ব্রিগেডিয়ার সাদুল্লাহ ভৈরবে ঘাঁটি স্থাপন করেন এবং ১৯শে ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানে ভৈরব শত্রুমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন– আমির হোসেন, বীর প্রতীক (পিতা আনসার আলী সরকার, কালিকা প্রসাদ)। ভৈরব উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আমির হোসেন, বীর প্রতীক (৪ঠা ডিসেম্বর আজমপুর যুদ্ধে শহীদ), ক্যাডেট খোরশেদ আলম (পিতা হেলালউদ্দিন সরকার, শম্ভুপুর; বেলাব বাজার যুদ্ধে শহীদ), আশুরঞ্জন দেব (পিতা উমেশচন্দ্র দেব, আজমিরিগঞ্জ; ২৩শে অক্টোবর নন্দনপুরের যুদ্ধে শহীদ), মো. লায়েছ মিয়া (পিতা তোতা মিয়া, জগন্নাথপুর; নরসিংদীর কোহিনূর জুট মিলস এলাকার যুদ্ধে শহীদ), আলকাছ মিয়া (পিতা আব্দুল বারিক মিয়া, শম্ভুপুর; বাজিতপুর ব্যাংক অপারেশনে শহীদ), নায়েক আলী আকবর (পিতা আব্দুল বারিক, কালিকাপ্রসাদ; সিলেটের কানাইঘাট যুদ্ধে শহীদ), গিয়াস উদ্দিন (পিতা আব্দুল খালেক, মধ্যেরচর; সাচনা বাজার যুদ্ধে শহীদ), মজিবুর রহমান (বাঁশগাড়ি; সাচনা বাজার যুদ্ধে শহীদ), রইছ উদ্দিন (পিতা তাইবুদ্দিন, ছোট রাজাকাটা; সাচনা বাজার যুদ্ধে শহীদ), মোস্তফা কামাল আক্তার (পিতা সিরাজ মিয়া সিরু, ভৈরবপুর), মো. নোয়াজ মিয়া (পিতা আব্দুল কাদির, ভৈরবপুর), মো. শহীদ মিয়া (পিতা আব্দুস সোবাহান মিয়া, কমলপুর) এবং হাবিলদার জি এম আউয়াল (পিতা মো. আফতাব উদ্দিন, জগন্নাথপুর; ঢাকার পিলখানা যুদ্ধে শহীদ)।
ভৈরবে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পানাউল্লারচর গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিফলক। ঢাকা- সিলেট মহাসড়ক থেকে ভৈরব বাজারে প্রবেশের পথটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু সরণি’। ভৈরব বাজার প্রবেশদ্বারে মুক্তিযুদ্ধ স্মরণে নির্মিত হয়েছে ভাষ্কর্য ‘দুর্জয় ভৈরব’। এ রাস্তার প্রবেশদ্বারে জাতির জনকের একটি ম্যুরালও স্থাপন করা হয়েছে। ভৈরব বাজারের একটি সড়কের নাম রাখা হয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আশুরঞ্জন সড়ক’। ভৈরবে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ফয়সুল আলমের নামে ভৈরব পৌরসভার উদ্যোগে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যার নাম ‘মুক্তিযোদ্ধা ফয়সুল আলম স্মৃতি পাঠশালা’। এছাড়া ভৈরবের দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে পৌর পাঠাগারের নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ আতিক-নুরু পৌর পাঠাগার’। [ইমরান হোসাইন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড