You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.01 | ভেল্কা বিল ব্রিজ যুদ্ধ (কালিয়াকৈর, গাজীপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

ভেল্কা বিল ব্রিজ যুদ্ধ (কালিয়াকৈর, গাজীপুর)

ভেল্কা বিল ব্রিজ যুদ্ধ (কালিয়াকৈর, গাজীপুর) সংঘটিত হয় দুবার – ১লা অক্টোবর ও ২০শে নভেম্বর। প্রথম যুদ্ধে ৬ জন রাজাকার ধরা পড়ে। তাদের দুজন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। দ্বিতীয় যুদ্ধে ৪ জন রাজাকার অস্ত্রসহ ধরা পড়ে, বাকিরা পালিয়ে যায়। তাদের কিছু অস্ত্র ও গুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
কালিয়াকৈর বাজার থেকে প্রায় ১ কিমি পূর্বদিকে লতিফপুর গ্রামের পূর্বপাশে ভেল্কা বিলের অবস্থান। বিলের মাঝখানে ঢাকা-টাঙ্গাইল রোডে ছোট একটি কালভার্ট ছিল। বিলের পূর্ব-দক্ষিণ ও উত্তর দিকে গজারি বন ও টিএন্ডটি অফিস। বিস্তীর্ণ জলাভূমির মধ্যে কালভার্টটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কালভার্টকে কেন্দ্র করে এখানে পরপর ২ বার মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। প্রথম যুদ্ধ হয় ১লা অক্টোবর। কাদেরিয়া বাহিনী-র কমান্ডার আজাদ কামাল ও তাঁর সহযোগী লালটু মিয়া ৪০ জন সদস্য নিয়ে কালভার্টটি ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নেন। ৩০শে সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে তাঁরা বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে বিলঘেঁষা গজারি বনে অবস্থান নেন। রাত আড়াইটার দিকে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ডিনামাইট দিয়ে কালভার্ট ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়। ৬ জন রাজাকার কালভার্টে পাহারায় ছিল। কিন্তু তারা ঐ সময় ঘুমিয়ে পড়েছিল। মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত সাবধানে পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে কালভার্টের নিকট পৌঁছান এবং ঘুমন্ত রাজাকারদের ধরে ২ জনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেন। এরপর তাঁরা ডিনামাইট দিয়ে কালভার্টটি উড়িয়ে দেন এবং ৪ জন রাজাকারকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।
ভেল্কা বিলের ২য় যুদ্ধ হয় ২০শে নভেম্বর। কাদেরিয়া বাহিনী কর্তৃক কালভার্ট ধ্বংস হবার পর পাকসেনারা চলাচলের জন্য দ্রুত কালভার্টটি মেরামত করে তাতে পাহারার ব্যবস্থা করে। আফছার বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার মো. আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে ৫৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ২০শে নভেম্বর রাত ৩টার দিকে কালভার্টে পাহারারত রাজাকারদের হত্যা করার জন্য আক্রমণ চালান। তাঁরা পাহারারত ৪ জন রাজাকারকে অস্ত্রসহ ধরে ফেলেন এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা দিলদার আলী, মিজানুর রহমান, সুবেদার (অব.) দেওয়ান মো. সিদ্দিক হোসেন, আবুল হোসেন প্রমুখ এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। রাজাকারদের নিকট থেকে ৬টি ম্যাক থ্রি রাইফেল ও বহু গুলি উদ্ধার করা হয়। [মো. মোয়াজ্জেম হোসেন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড