ভৈরব বিদ্যুৎ টাওয়ার অপারেশন (ভৈরব, কিশোরগঞ্জ)
ভৈরব বিদ্যুৎ টাওয়ার অপারেশন (ভৈরব, কিশোরগঞ্জ) পরিচালিত হয় ২রা জুলাই। এতে নেতৃত্ব দেন ভৈরব হাজী আসমত কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম আক্কাছ। এ অপারেশনের ফলে ভৈরবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
১লা জুলাই রাতে ফখরুল আলম আক্কাছের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা আতিক, নূরু, গোলাপ ও সুলতান নারায়ণপুর বাজারে বসে ভৈরবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার : সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এজন্য তাঁরা রামনগর রেলব্রিজের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের বিদ্যুৎ টাওয়ারটি ভেঙ্গে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা শেষে সকলে রাতের খাবার খেয়ে বিস্ফোরকসহ যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে রাত ১টার দিকে পায়ে হেঁটে রওনা দেন। রাইফেল ও স্টেনগানসহ নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রও সঙ্গে নেয়া হয়। রাত ২টার দিকে তাঁরা মাহমুদাবাদ গ্রামে পৌঁছে স্থানীয় মিস্ত্রী বাড়িতে অবস্থান নেন। ভোর ৫টার দিকে তাঁরা রামনগর গ্রামে গিয়ে অপারেশনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে টার্গেটের দিকে অগ্রসর হন। উঁচু রেল সড়কে যাওয়ামাত্রই সকলের চোখে পড়ে বিদ্যুতের টাওয়ারটি পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। ওখানে যেতে হবে সাঁতার কেটে। রেল সড়কে হঠাৎ শত্রু এলে তাদের প্রতিহত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সুলতান ও গোলাপকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অতঃপর সকলে পানিতে নেমে সাঁতার কেটে টাওয়ারে পৌঁছান এবং ফখরুল আলম আক্কাছ গলাপানিতে দাঁড়িয়ে টাওয়ারের গায়ে বিস্ফোরক লাগান। বিস্ফোরকের মধ্যে প্রাইমা কর্ডের সংযোগ দিয়ে তাঁরা সাঁতার কেটে রেল সড়কের ওপরে উঠে আসেন। এরপর প্রাইমা কর্ডের মাথায় সেফটি ফিউজ লাগিয়ে আগুন দেয়া হয়। আগুন ধীরে-ধীরে টাওয়ারের দিকে এগুতে থাকে। এই ফাঁকে মুক্তিযোদ্ধারা রেল সড়ক ডিঙ্গিয়ে নিরাপদ দুরত্বে চলে যান। অগ্নিসংযোগের মাত্র ৪ মিনিট পর বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। সঙ্গে-সঙ্গে টাওয়ারটি পানির মধ্যে ভেঙ্গে পড়ে। অপারেশন সফল হলে আনন্দে তাঁরা ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দেন। [ইমরান হোসাইন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড