You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভোলা খেয়াঘাট বধ্যভূমি (ভোলা সদর)

ভোলা খেয়াঘাট বধ্যভূমি (ভোলা সদর) ভোলা সদর উপজেলায় অবস্থিত। তেঁতুলিয়া নদী, ভোলা খাল ও বেতুয়া খালের ত্রিমোহনীতে এর অবস্থান। এটি ভোলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। এখান থেকে সড়ক ও নৌপথে ভোলা শহরে প্রবেশ করা যায়। পাকবাহিনী এ ঘাট হয়েই ভোলায় প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে নিরীহ মানুষ হত্যার স্থান হিসেবে একে ব্যবহার করে। জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এখানে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
পাকবাহিনী সাধারণত ভোলা থানা ও ওয়াপদা অফিস থেকে গভীর রাতে বন্দিদের রশি দিয়ে পিছমোড়া করে হাত ও কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে খেয়াঘাটে নিয়ে আসত। তারপর কোমর সমান পানিতে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে তাদের হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দিত। নদীতে স্রোত কম থাকলে বেয়নেট দিয়ে পেট চিড়ে নদীতে ফেলে দিত। অনেক সময় নদীর পাড়ে দাঁড় করিয়েও ব্রাশ ফায়ার করা হতো। বন্দিদের চিৎকার বন্ধ করার জন্য মুখও বেঁধে দেয়া হতো। অর্থাৎ পাকবাহিনী এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালাবার আগে নানাবিধ অমানবিক ও পৈশাচিক কৌশল অবলম্বন করত। এভাবে প্রায় প্রতিরাতেই এখানে ব্রাশ ফায়ার করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। গুলির শব্দে এলাকার মানুষের ঘুম ভেঙ্গে যেত। স্থানীয়দের মতে ভোলা খেয়াঘাটে কয়েকশ মানুষকে হত্যা করা হয়। তবে তাদের সকলের পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন- জালাল আহম্মদ (দুলারহাট, চরফ্যাশন), নাসিরউদ্দিন (চরফ্যাশন), ওমর আলী (ভোলা), আজিজুল বেপারী (দুলারহাট, চরফ্যাশন), বিনোদ বিহারী দাস (চরফ্যাশন), রাধাগোবিন্দ দেব (চরফ্যাশন), মো. সায়েদ মিয়া (লালমোহন), আবদুস শহীদ (লালমোহন), মৃণাল চন্দ্র দে (লালমোহন), রজনীকান্ত মহাজন (লর্ডহার্ডিঞ্জ, লালমোহন), হাফেজ মিয়া (তজুমদ্দিন), ননী মজুমদার (তজুমদ্দিন), বীরেন কর্মকার (তজুমদ্দিন), আবদুর রহিম (তজুমদ্দিন), আলতাফ (তজুমদ্দিন), অনিল চন্দ্ৰ দে (বোরহানউদ্দিন), নির্মল চন্দ্ৰ দে (বোরহানউদ্দিন), মুনাফ (চরছিফুলী, ভোলা), আবুল হোসেন (দক্ষিণ দিঘলদী, ভোলা), কালাচান (ভোলা), সুবোধ সাহা (ভোলা), মনোরঞ্জন দেবনাথ (ভোলা), বীরেন পোদ্দার (ভোলা), সেরাজুল হক (ভোলা), ভবতোষ কর্মকার (আলীনগর, ভোলা), আবদুল লতিফ (চরসামাইয়া, ভোলা), কাঞ্চন (চরসামাইয়া, ভোলা), মো. ইয়াছিন মুহুরী (চরনোয়াবাদ, ভোলা), আবু তাহের (ভোলা), রুহুল আমিন (ভোলা), মনিরউদ্দিন (মির্জাকালু, বোরহানউদ্দিন), আব্দুল লতিফ (ভোলা), সুবোধ সাহা (ভোলা) এবং কিশোরী মোহন দে মাস্টার (বাপ্তা, ভোলা)।
ভোলা খেয়াঘাটে পাকবাহিনীর গুলিতে আহত হয়েও যারা বেঁচে গেছেন, তাদের কয়েকজন হলেন- বিজয় ডাক্তার (ভোলা), সৈয়দ মাল (উত্তর দিঘলদী, ভোলা), প্রিয়লাল দাস (লর্ডহার্ডিঞ্জ, লালমোহন), অরুণ চন্দ্র (গজারিয়া, লালমোহন) এবং শিপন চন্দ্র দাস (লালমোহন)।
খেয়াঘাট গণহত্যায় যেসব রাজাকার পাকসেনাদের সহায়তা করেছে, তারা হলো- কমান্ডার আবদুল্লাহ মৌলভী, নুরু দফাদার (ভোলা), পিএনজি কালু (ভোলা), মোহাম্মদ টনি (ভোলা, পরে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত), সাধু (ভোলা), মজিবল বিহারি (ভোলা শহর) প্রমুখ। [মো. রফিকুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!