You dont have javascript enabled! Please enable it!

স্থানীয় মুক্তিবাহিনী ভূঁইয়া বাহিনী (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর)

ভূঁইয়া বাহিনী (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর) একটি স্থানীয় মুক্তিবাহিনী। এর অধিনায়ক ছিলেন বি এম কলিমউল্যা ভূঁইয়া (হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ)। মহান মুক্তিযুদ্ধে যে-সকল অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা
পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, বি এম কলিমউল্যা ভূঁইয়া তাঁদের অন্যতম। তাঁর নিত্য নতুন রণকৌশল ও সাংগঠনিক দক্ষতা পাকিস্তানি জেনারেল রহিম খানকে নাস্তানাবুদ করে তুলেছিল।
বি এম কলিমউল্যা ভূঁইয়া ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাজীগঞ্জ থানা থেকে ৬টি রাইফেল ও বুলেট সংগ্রহ করে প্রথমে চেড়িয়ারা করের বাড়িতে, পরে ওঘারিয়া চৌধুরী বাড়িতে এবং শেষে বিভিন্ন থানায় প্রশিক্ষণ শুরু করেন।
তাঁর সহযোগিতায় হাজীগঞ্জ থানা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। পরে তিনি হাজীগঞ্জ থানার ওসি-র পিস্তল, ২৬টি রাইফেল ও প্রচুর বুলেট সংগ্রহ করেন। তাঁর বাহিনী ৩ জন পাকসেনাকে হত্যা করে ৩টি রাইফেল ও কিছু বুলেট সংগ্রহ করে। কলিমউল্যা নিজে একজন দালালকে হত্যা করে মতলব থানার ১২টি রাইফেল, কিছু বুলেট এবং ৫০,০০০ টাকা সংগ্রহ করেন। তিনি কচুয়া থানার ১৬টি রাইফেল ও কিছু বুলেট এবং হাজীগঞ্জ স্টেশনের কাছে রেলব্রিজ থেকে অস্ত্রসহ ৮ জন রাজাকারকে ধরে আনেন। পরে আরো অনেক সংখ্যক রাজাকার প্রচুর বুলেট ও অস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। তিনি তাদের মধ্য থেকে ২৫ জনকে নিয়ে ‘আজাদ বাহিনী’ নামে একটি দল গঠন করেন।
পাঠান বাহিনী – ও ভূঁইয়া বাহিনী শুরু থেকেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে। কলিমউল্যা ভূঁইয়ার নেতৃত্বে রামগঞ্জ ও সোনাপুর ব্যাংক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এ অর্থের কিছু অংশ সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে ভাতা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া হয় এবং বাকি অর্থ ভারতে বাংলাদেশ সরকারের নিকট পাঠানো হয়।
এক সময় কলিমউল্যা ভূঁইয়ার অধীনে নিয়মিত সেনা ও ছাত্রসহ প্রায় ১৫০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, হাইমচর ও অন্যান্য স্থানে যতগুলো যুদ্ধ হয়, পাঠান বাহিনীর প্রধান সুবেদার জহিরুল হক পাঠান সব যুদ্ধেই কলিমউল্যা ভূঁইয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে যুদ্ধের পরিকল্পনা করেন। কলিমউল্যা ভূঁইয়া ছিলেন একজন সাধারণ সিভিলিয়ান। তা সত্ত্বেও তাঁর সাহস ও রণকৌশল ছিল অসাধারণ। এলাকার পথঘাট, বাড়িঘর, জনপদ সব ছিল তাঁর নখদর্পণে। মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য তিনি যুদ্ধের মাঠে বিপ্লবী গান গাইতেন। একবার তিনি ঠাকুর বাজারের এক ক্যাম্প থেকে ২৭ জন রাজাকারকে ধরে আনেন। তাদের বিচার করে ১০ জনকে ছেড়ে দেন এবং ১৭ জনকে হত্যা করে আয়নাতলী খালের পাড়ে মাটিচাপা দেন।
২৭শে আগস্ট লাকসাম থানার হাসনাবাদ বাজার যুদ্ধের পর স্থানীয় দালালদের প্ররোচনায় পাকসেনারা হঠাৎ এসে ওপি ডিউটি অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা সিপাহি আবুল হাসেম (ফরিদগঞ্জ)-কে গুলি করে হত্যা করে। এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সেদিন রাতেই কলিমউল্যা ভূঁইয়া চিতশী থেকে দুজন কুখ্যাত দালালকে ধরে এনে হত্যা করে লাশ পানচাইল গ্রামের মাথায় বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন। পরের দিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ১৫-১৬ খানা নৌকায় করে এবং রাস্তা দিয়ে মার্চ করে শতাধিক পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের এম্বুশে প্রবেশ করলে সেখানে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে প্রায় ৪০ জন পাকসেনা নিহত ও বহু আহত হয়। এ-যুদ্ধেও কলিমউল্যা ভূঁইয়া বীরত্বের পরিচয় দেন। [দেলোয়ার হোসেন খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!