You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে ভালুকা উপজেলা (ময়মনসিংহ)

ভালুকা উপজেলা (ময়মনসিংহ) ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-এর বিপুল বিজয়ের পর থেকেই ভালুকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উত্তপ্ত হতে থাকে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ১লা মার্চ স্থগিত ঘোষণা করায় ভালুকার জনগণ বিক্ষোভ-প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর তা অগ্নিরূপ ধারণ করে। জনগণ বুঝতে পারে যুদ্ধ অনিবার্য। এডভোকেট মোস্তফা মতিন, থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে বি এম আসমত আলী, এম এ কাশেম, নূরুল ইসলাম, কুতুব উদ্দিন মাস্টার, মোহাম্মদ আলী মাস্টার, মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ, ডা. আব্দুল খালেক, শামছুল আলম, জিয়ারত চেয়ারম্যান, ছাত্রনেতা এ কে এম আবুল হোসেন মিলন (সভাপতি, ছাত্রলীগ), নূরুল ইসলাম (সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগ), গোলাম মোস্তফা, মতিউর রহমান খান প্রমুখের নেতৃত্বে ছাত্র-যুবকরা প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে। আর এভাবেই ভালুকায় রচিত হয় মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর ভালুকার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তৎপর হয়ে ওঠেন। ১লা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলন- চলার সময় ভালুকার প্রতিটি অঞ্চল থেকে ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাঠি ও বৈঠা নিয়ে মিছিল-মিটিং-এ যোগ দিত। এসব প্রতিবাদ সমাবেশে জ্বালাময়ী ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যের মাধ্যমে এডভোকেট মোস্তফা মতিন যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানান।
১৫ই এপ্রিলের পর ভালুকা থানা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ ভারতে গেলে নেতৃত্বের সংকট দেখা দেয়। এমতাবস্থায় ভালুকাবাসীর পাশে এসে দাঁড়ান মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ। ১৭ই এপ্রিল আফসার উদ্দিন আহমেদ মল্লিকবাড়ি গ্রামে খেলু ফকিরের বাড়িতে ৭ জন সদস্য নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন। এ-সময় তাঁদের হাতে ছিল ৮টি রাইফেল ও ৩০ রাউন্ড গুলি। আফসার উদ্দিন আহমেদ মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং-এর জন্য ভালুকা সদর, মল্লিকবাড়ি বাজার ও ডাকাতিয়া ইউনিয়নের ডালুয়া গ্রামে ক্যাম্প স্থাপন করেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে-দলে ছাত্র- যুবকরা এসে এসব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে থাকেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে-সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা পরিণত হন আফসার বাহিনীতে। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলোর সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন (অব.) হাবিলদার আব্দুল মোতালেব খান। তাঁর সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পলন করেন রমিজ উদ্দিন খান, পুলিশ সদস্য ইদ্রিস আলী, আ. করিম প্রমুখ। অস্ত্র-সহায়তা হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা মো. আবদুল হামিদ মিঞার কাছ থেকে একটি রাইফেল ও ৩১ রাউন্ড গুলি এবং চানপুর এলাকায় ইপিআরদের ফেলে যাওয়া ৭টি রাইফেল তাঁর বাহিনী গঠনে সহায়ক হয়েছিল।
জুন মাসের মধ্যেই আফসার বাহিনী- দেশের অভ্যন্তরে বড় আকার ধারণ করে। ময়মনসিংহ সদর দক্ষিণ ও ঢাকা সদর উত্তর এ বিশাল এলাকা নিয়ে ছিল এ বাহিনীর যুদ্ধাঞ্চল। আফসার উদ্দিন আহমেদ আগস্ট মাসের মাঝামাঝি আগরতলায় ৩নং সেক্টর কমান্ডার মেজর সফিউল্লাহ এবং তাঁর মাধ্যমে মিত্রবাহিনীর প্রধান সাথ সিং বাবাজির সঙ্গে দেখা করেন। ব্রিগ্রেডিয়ার সাথ সিং বাবাজী তাঁর সাহসিকতা, কর্মদক্ষতা ও সাফল্যের জন্য তাঁকে মেজর পদে অধিষ্ঠিত করেন। তাঁকে ময়মনসিংহ সদর দক্ষিণ ও ঢাকা সদর উত্তর এলাকার সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এ-সময় তিনি ৩নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর সফিউল্লাহর অধীন চার্লি কোম্পানির দায়িত্বে নিয়োজিত কর্নেল নুরুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগরতলায় যান। কর্নেল নুরুজ্জামান তাঁকে বাংলাদেশ সরকার-এর পক্ষ থেকে কিছু অস্ত্র ও অপরিসীম উৎসাহ- উদ্দীপনা দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে পাঠিয়ে দেন। সাড়ে চার হাজার মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আফসার বাহিনী গঠিত হয়। সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী তিনি তাঁর বাহিনীকে ৫টি ব্যাটালিয়নে ভাগ করেন। প্রতিটি কোম্পানিতে ছিল ৩টি প্লাটুন ও ৩টি সেকশন।
আর প্রত্যেক সেকশনে ছিলেন ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ আহাম্মদের নেতৃত্বে ভালুকায় মুজিব বাহিনী গঠিত হয়। এর টিম লিডার হন ছাত্রনেতা মতিউর রহমান খান, ডেপুটি লিডার বজলুল করিম। অন্য সদস্যরা হলেন নিজামুল করিম, নূরুল ইসলাম, প্রকৌশলী খলিলুর রহমান, কৃষিবিদ আবদুল মোতালেব, মোক্তার আলী, আবদুস সামাদ, মফিজউদ্দীন প্রমুখ। মতিউর রহমান খান ভারতের উত্তর প্রদেশের টান্ডুয়ায় যুদ্ধ এবং লিডারশিপ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
চারদিকে তখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের খবরাখবর প্রকাশের ব্যবস্থা ছিল সীমিত। এমতাবস্থায় বিভিন্ন যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কাহিনী প্রকাশ, মুক্তিপাগল মানুষের মাঝে যুদ্ধের খবর পৌঁছানো ও আমজনতার মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য এপ্রিল মাসে মেজর আফসার উদ্দীনের উদ্যোগে একদল মুক্তিযোদ্ধা ভালুকার ডাকাতিয়া ইউনিয়ন থেকে মুক্তিযুদ্ধা এস এ কালামের সম্পাদনায় হাতে লিখে প্রকাশ করেন জাগ্রত বাংলা – নামে একটি বুলেটিন। জাগ্রত বাংলা-র প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের মাধ্যমে একটি এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নিকট থেকে একটি সাইক্লোস্টাইল মেশিন পাওয়া যায়। এভাবে সাইক্লোস্টাইল মেশিনের মাধ্যমে জাগ্রত বাংলা-র ২য় থেকে ১১তম সংখ্যা প্রকাশ করা হয়।
২৫শে জুন পাকবাহিনীর সঙ্গে ভাওয়ালিয়াবাজু যুদ্ধের অল্প কিছুদিন পর আফসার ব্যাটালিয়ন স্মৃতি হাসপাতাল গড়ে ওঠে। মূলত যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য এটি মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ প্রতিষ্ঠা করেন। মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ওয়াইজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ৪ জন চিকিৎসক, ১০ জন সহকারী চিকিৎসক ও ৫ জন সেবিকা নিয়ে এ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা চলমান থাকে।
ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ময়মনসিংহ এলাকায় গড়ে ওঠা স্থানীয় বাহিনীসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল আফসার বাহিনী। বাহিনী প্রধান আফসার উদ্দিন আহমেদ(১৯২৩-১৯৯৩)। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর এপ্রিল মাসে মাত্র ৭ জন সদস্য নিয়ে আফসার বাহিনী গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা হয় প্রায় সাড়ে চার হাজার। ময়মনসিংহ দক্ষিণ এবং ঢাকা উত্তর নিয়ে গঠিত সাব-সেক্টরে এ বাহিনী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শতাধিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় এবং ৭৫০ বর্গমাইল এলাকায় মুক্তাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে। আফসার উদ্দীনের স্ত্রীসহ পরিবারের সকল সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
ভালুকায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে ছিলেন এডভোকেট মোস্তফা মতিন এমপিএ, থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে বি এম আসমত আলী, এম এ কাশেম, নূরুল ইসলাম ওরফে সোনা মিয়া, কুতুব উদ্দিন মাস্টার, মোহাম্মদ আলী মাস্টার, মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ, ডা. আব্দুল খালেক, শামছুল আলম, জিয়ারত চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগ নেতা এ কে এম আবুল হোসেন মিলন, নূরুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, মতিউর রহমান খান প্রমুখ।
ভালুকার মুক্তিযুদ্ধ মূলত আফসার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। এ বাহিনী মোট ৫টি ব্যাটালিয়নে বিভক্ত হয়ে এ এলাকার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। এ বাহিনীর প্রধান ছিলেন মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ। তাঁর অধীনে ভালুকা উপজেলার কমান্ডারগণ হলেন- মো. চান মিয়া (ঝালপাজা, ভালুকা), মো. আবদুল কুদ্দুছ খান (বরাইদ, ভালুকা), মো. আ. হাকিম (বাটাজোর, ভালুকা), শামছ উদ্দিন আহমেদ (বাটাজোর, ভালুকা), মো. কছিম উদ্দিন (পালগাঁও, ভালুকা), মো. নাজিম উদ্দিন (নন্দিপাড়া, ভালুকা), মো. ফয়েজ উদ্দিন (বাটগাঁও, ভালুকা), মো. আবদুল মজিদ (মেদিলা, ভালুকা), বশির উদ্দিন আহমেদ (ডাকাতিয়া, ভালুকা), মো. ওয়াহেদ আলী (বাটাজোর, ভালুকা), গাজী মো. নুরুল ইসলাম (কাচিনা, ভালুকা), মো. শামসুর রহমান বাটাজোর, ভালুকা), এমদাদুল হক দুলু (মামুদপুর, ভালুকা), মো. আলাউদ্দিন আহমেদ (বাটাজোর, ভালুকা), এম এম শামসুল হক (আংগারপাড়া, ভালুকা), আ. ছামাদ (ডাকাতিয়া, ভালুকা) এবং সহকারী কমান্ডাগণ হলেন- মো. কাজিম উদ্দিন, মো. মজিবুর রহমান (পনাশাইল, ভালুকা), মো. জবান আলী (তামাইট, ভালুকা), মজিবুর রহমান (ডুমনিঘাটা, ভালুকা), মো. খুরশেদ আলম (মেদিলা, ভালুকা), সিরাজুল হক (কাচিনা, ভালুকা), মো. হাতেম আলী (খুৰ্দ্দ, ভালুকা), মো. সিরাজুল হক (কাঠালী, ভালুকা), মো. আ. রশিদ (ধলিয়া, ভালুকা), মো. মকবুল হোসেন (ঝুলপাড়া, ভালুকা) এবং মো. আ. মোতালেব খান (নন্দিপাড়া, ভালুকা)।
ময়মনসিংহ শহরে জননেতা রফিক উদ্দিন ভূঁইয়ার বাসায় স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি গ্রুপ ভালুকার সিডস্টোর বাজারে অবস্থান নেয়। সুবেদার মেজর আনোয়ারের নেতৃত্বে তাঁরা সেখানে প্রতিরোধ ঘাঁটি স্থাপন করেন। কিন্তু পাকবাহিনীর ক্রমাগত আক্রমণের মুখে তাঁরা তাঁদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। ২৫শে এপ্রিল পাকবাহিনী ভালুকা উপজেলায় অনুপ্রবেশ করে এবং থানায় ক্যাম্প স্থাপন করে। পরবর্তীতে তারা ভালুকা সদরে চৌধুরী বাড়ি, মল্লিকবাড়ি বাজার ও সিডস্টোর বাজারে ক্যাম্প স্থাপন করে। এছাড়া ভালুকায় রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা ৪টি ক্যাম্প স্থাপন করে। সেগুলো হলো- রাজাকার কমান্ডার আতিকুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে ভালুকা থানা রাজাকার ক্যাম্প, ধামশুরের কমান্ডার বেলা খানের নেতৃত্বে ভালুকা থানা আলবদর ক্যাম্প, শান্তি কমিটির সভাপতি মো. আফতাব উদ্দিন চৌধুরী ওরফে চান মিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে চান মিয়া চৌধুরীবাড়ি রাজাকার ক্যাম্প এবং এপ্রিল মাসের শেষদিকে কমান্ডার হোসেন আলী মুন্সীর নেতৃত্বে মল্লিকবাড়ি বাজার রাজাকার ক্যাম্প।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে ভালুকায় শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। এর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে এবং পাকবাহিনীর পক্ষে ঘৃণ্য তৎপরতা শুরু করে। এখানকার শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্য সকলেই ছিল মুসলিম লীগ- দলভুক্ত।
মো. আফতাব উদ্দিন চৌধুরী ওরফে চান মিয়া চৌধুরী (পিতা আবেদ উল্লাহ সরকার, ধামশুর)-কে সভাপতি এবং মোজাম্মেল হক মেম্বরকে সাধারণ সম্পাদক করে ভালুকা উপজেলা শান্তি কমিটি গঠিত হয়। শান্তি কমিটির উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হলো- আ. গণি মেম্বর, আ. ওয়াহাব খান, মৌলবী তোরাব আলী প্রমুখ। রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর মধ্যে কুখ্যাত ছিল- কমান্ডার আতিক উল্লাহ চৌধুরী ও আমানউল্লাহ চৌধুরী (পিতা আফতাব উদ্দিন চৌধুরী ওরফে চান মিয়া চৌধুরী), ধামশুরের দোয়েল খান ও বেলা খান, মফিজ মল্লিক, কানকাটা আবু ছায়েদ (বাশিল), কানকাটা কালু (মেদুয়ারি), ডা. জমশেদ আলী (ভালুকা), মল্লিকবাড়ির হোসেন আলী মুন্সী, হেকমত, হাফিজ উদ্দিন, আবুল, আহাম্মদ আলী প্রমুখ। উল্লেখ্য যে, ৮ই ডিসেম্বর ভালুকা হানাদারমুক্ত হওয়ার পর প্রায় ৬০০ রাজাকার আলবদর ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে ১৫০ জনের কান কেটে দেয়া হয়।
পাকিস্তানি বাহিনী তাদের স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় ভালুকায় ৩টি গণহত্যার ঘটনা ঘটায়। সেগুলো হলো- বিরুনিয়া গণহত্যা, কংশেরকুল গণহত্যা – এবং কাইচান গণহত্যা। ১৭ই নভেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকার বেলা খান ও মফিজ মল্লিকের সহযোগিতায় বিরুনিয়া গ্রামে গণহত্যা চালায়। এ-সময় তারা শতাধিক বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে।
১৭ই নভেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকার বেলা খান ও মফিজ মল্লিকের সহযোগিতায় বিরুনিয়া গ্রামে গণহত্যার সঙ্গে একই সময় কংশেরকুল গ্রামে গণহত্যা চালায়। এ-সময় তারা গ্রামের অনেকগুলো বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং লুণ্ঠন করে।
১৭ই নভেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকার বেলা খান ও মফিজ মল্লিকের সহযোগিতায় বিরুনিয়া গ্রামে গণহত্যার পাশাপাশি একই সময় কাইচান গ্রামে গণহত্যা সংগঠিত করে। তারা গ্রামের অনেকগুলো বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে।
১৭ই নভেম্বর মাহমুদ গ্রামের হানিফা শেখ, মো. মোরশেদ আলী, প্রসাদপুর গ্রামের শর্মিলা সাহা (পিতা জগদীশ সাহা), মো. নূরুল ইসলাম সরকার (পিতা ইমান আলী সরকার) প্রমুখ হানাদার বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
মুক্তিযুদ্ধকালে কুখ্যাত রাজাকার আতিক উল্লাহ চৌধুরী, বেলা খান ও দোয়েল খানের নেতৃত্বে রাজাকাররা ধামশুর গ্রামে মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের বাড়ি, খারুয়ারী গ্রামে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে বি এম আছমতের বাড়ি, মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল ইসলামের বাড়ি, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজের বাড়ি, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আ. মান্নানের বাড়ি, চান্দের আটি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা এমদাদুল হক দুলুর বাড়ি, কংশেরপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আ. হাই-এর বাড়ি, মল্লিকবাড়ি গ্রামের আবদুল খালেকের বাড়ি, হাজী জুবেদ আলী সরকারের বাড়ি এবং মল্লিকবাড়ি বাজারে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। মল্লিকবাড়ির কুখ্যাত রাজাকার হোসেন আলী মুন্সী, হেকমত মিয়া, হাফিজ উদ্দিন, আহমদ আলীর সহযোগিতায় পাকবাহিনী মেদিলা, মল্লিকবাড়ি গ্রামে লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ এবং গণধর্ষণ চালায়। রাজাকার ডা. জমশেদ আলীর সহযোগিতায় হানাদার বাহিনী এলাকার কেরামতের স্ত্রী ও সামাদকে হত্যা করে এবং কাঠালী গ্রামের হাজী হোসেন আলীর বাড়ি, মল্লিকবাড়ি গ্রামের খেলু ফকিরের বাড়ি, ভালুকা গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের বাড়িতে লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগ করে। রাজাকার বেলা খান এবং মফিজ মল্লিকের সহযোগিতায় হানাদাররা কংশেরকুল গ্রামের কাদ্দা (পিতা ব্রজনাথ)-কে হত্যা করে এবং শ্রীনাথ বর্মণের বাড়ি ও বিনোদ বাবুর বাড়ি লুণ্ঠন এবং তাতে অগ্নিসংযোগ করে। পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পগুলোই ছিল তাদের নির্যাতনকেন্দ্র এবং বন্দিশিবির। এসব ক্যাম্পে তারা মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন ধরে এনে নির্যাতন এবং হত্যা করত। অনেক সময় বন্দিদের নিকট থেকে মুক্তিপণ আদায় করত এবং স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় নারীনির্যাতন চালাত। হানাদার বাহিনীর মল্লিকবাড়ি ক্যাম্প ছিল উপজেলায় অন্যতম বধ্যভূমি। মে মাসে ক্যাম্প স্থাপনের পর বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক নিরীহ নারী-পুরুষকে ধরে এনে ধর্ষণ, নির্যাতন এবং হত্যা করে পার্শ্ববর্তী ইন্দিরায় (কুয়া) ফেলে দিত। ৭ই অক্টোবর আফসার বাহিনীর আক্রমণে পাকবাহিনী মল্লিকবাড়ি ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। তখন এই বন্দিশিবিরে ৪ জন নারীর লাশ পাওয়া যায়। এছাড়া মল্লিকবাড়ির রেজম মিয়া, নয়নপুর গ্রামের ডা. নীল কমল বর্মণের দুই ছেলে অনিলচন্দ্র বর্মণ ও নিহালচন্দ্র বর্মণকে হত্যা করে একই ইন্দিরায় ফেলা হয়। মুক্তিযুদ্ধে আফসার বাহিনীর সদস্যরা শতাধিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁরা ভালুকা থানার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় ৪০টি যুদ্ধে অংশ নেন। এর মধ্যে ভাওয়ালিয়াবাজু যুদ্ধ, সিডস্টোর যুদ্ধ, চানপুর যুদ্ধ মামারিশপুর যুদ্ধ ভালুকা থানা যুদ্ধ, মল্লিকবাড়ি পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণ চান্দেরাটি যুদ্ধ এবং পারাগাঁও যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। ২৫ ও ২৬শে জুন ভাওয়ালিয়াবাজু নামক স্থানে পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে আফসার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৯শে জুলাই মধ্যরাতে মেজর আফসার উদ্দীনের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা সিডস্টোর বাজার পাকবাহিনী ঘাঁটি আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে ৩ ঘণ্টা যুদ্ধের পর দিশেহারা হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গোপনে সিডস্টোর বাজার থেকে পলায়ন করে। এ-যুদ্ধে ২৩ জন পাকসেনা নিহত ও ৯ জন আহত হয়। ২০শে নভেম্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মামারিশপুর যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে ৫ জন পাকসেনা নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। অপরপক্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং কয়েকজন আহত হন। ১০ই সেপ্টেম্বর মল্লিকবাড়ি পাকসেনা ক্যাম্প থেকে একদল পাকসেনা চাঁদপুর গ্রামে লুটপাট করতে এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে ২ ঘণ্টাব্যাপী এ-যুদ্ধে ৭ জন পাকসেনা নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা অনিল সাংমা শহীদ হন। ৭ই ডিসেম্বর অধিনায়ক আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে কোম্পানি কমান্ডার চাঁন মিয়া, টু-আই-সি মুজিবর, প্লাটুন কমান্ডার আ. গফুর মাস্টারসহ মুক্তিযোদ্ধাদের ৩২ সদস্যের একটি দল ভোররাতে পাকবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি ভালুকা থানা আক্রমণ করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ-যুদ্ধে ২৪ জন পাকসেনা ও ২২ জন রাজাকার নিহত হয়। রাতের অন্ধকারে হানাদার বাহিনীর অবশিষ্ট সদস্যরা ভালুকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৮ই ডিসেম্বর ভালুকা থানা হানাদারমুক্ত হয়। ১৪ই ডিসেম্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের পারাগাঁও যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের ২য় পুত্র কমান্ডার নাজিম উদ্দিন আহমেদ ও ডাকাতিয়া আউলিয়া চালার গফুর সরকারের ২য় পুত্র মুন্নেছ আলী পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। ৭ই নভেম্বর মল্লিকবাড়ি পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণ হয়। এতে পাকসেনারা টিকতে না পেরে ভালুকা থানা ক্যাম্পে পালিয়ে যায়। ১২ই নভেম্বর চান্দেরাটি যুদ্ধ হয়। এতে ১১ জন পাকসেনা ও ৯ জন রাজাকার নিহত হয়। অপরপক্ষে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়া ২১শে মে আফসার বাহিনীর সদস্যরা দুবার ভালুকা থানা আক্রমণ করে ১৬টি রাইফেল, ৩০টি বেয়নেট ও সহস্রাধিক রাউন্ড গুলি হস্তগত করেন। ২৩শে জুন তাঁরা পারুলদিয়া নদীপথে পাকবাহিনীর দোসর কিছুসংখ্যক পুলিশ আটক করে বেশ কয়েকটি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেন। ২৯শে জুন আফসার বাহিনীর একদল মুক্তিযোদ্ধা ভালুকা থানায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ১৭ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করেন। ৪ঠা আগস্ট ডাকাতিয়া ইউনিয়ন আংগারগারা বাজারে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। ১৫ই আগস্ট ভয়াবহ ঘাটে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। ৪ঠা সেপ্টেম্বর ভরাডোবায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। ১০ই সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পারুলদিয়া বাজারে হানাদার বাহিনীর খাদ্য ও রসদ আটক করেন। ৭ই সেপ্টেম্বর ধামশুর গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। ১০ই সেপ্টেম্বর বাকশী নদী ও ব্রিজের পাড়ে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীকে আক্রমণ করেন। ১৫ই সেপ্টেম্বর কুমারঘাট, মুচারঘাট ও নিঝুরীতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। ১৮ই সেপ্টেম্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বান্দিয়ার যুদ্ধ হয়। এদিনই মুক্তিযোদ্ধারা রাজৈ বাজারে হানাদার বাহিনীকে আক্রমণ করেন এবং হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁদের পনাশাইল বাজার যুদ্ধ হয়। ২৫শে সেপ্টেম্বর বয়রার ঠেক হানাদার ও রাজাকার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ২১শে সেপ্টেম্বর ও ১লা অক্টোবর পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের রবাইদে যুদ্ধ হয়। ১লা অক্টোবর বাজুয়া ঝোড়ায়, ৩রা অক্টোবর তালাবে, একই দিন বাঘেরপারায়, ৫ই অক্টোবর বিরুনিয়ায়, ৮ই অক্টোবর কুল্লাবে, ১৩ই অক্টোবর মেদুয়ারীতে রাজাকাদের সঙ্গে, ২৫শে অক্টোবর ধনিয়া গ্রামে এবং ২৭শে অক্টোবর রাজৈ পনাশাইল খালপাড়ে যুদ্ধ হয়। ২৮শে অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা ভালুকা পাকসেনা ঘাঁটি আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ৯ জন পাকসেনা ও ৬ জন রাজাকার নিহত হয়। ২রা নভেম্বর রাজৈ গ্রামে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ, ১৭ই নভেম্বর ভাণ্ডাব যুদ্ধ, ১২ই নভেম্বর চান্দেরাটি যুদ্ধ (৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ), ১৬ই নভেম্বর সাতেঙ্গা যুদ্ধ, ২রা ডিসেম্বর কাঁঠালী বড় রাস্তা যুদ্ধ, ৩রা ডিসেম্বর ভাওয়ালিয়া বাজার যুদ্ধ এবং ৪ঠা ডিসেম্বর বাশিল যুদ্ধ হয়। ১৩ই ডিসেম্বর মধুপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে পলায়নরত পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ৮ই ডিসেম্বর ভালুকা উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন- আব্দুল্লাহ, বীর প্রতীক (পিতা কাদের মিয়া, তামাইট)।
ভালুকা উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মো. নাজিম উদ্দিন (পিতা মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ, ধামশুর), আব্দুল মান্নান (পিতা তাহের আলী, মল্লিকবাড়ি), ডা. শমসের আলী (পিতা হাজী রমজান আলী, পাড়াগাঁও), মোমতাজ উদ্দিন খান (পিতা হাফেজ খান, বান্দিয়া), অনিল সাংমা (পিতা মনিন্দ্র মারাক, মল্লিকবাড়ি), আব্দুল খালেক (পিতা আ. ছামাদ, তাটগাঁও), আব্দুল জব্বার পাশা (পিতা এয়াকুব আলী মুন্সী, ভালুকা), মো. শামছুল হক ফকির (পিতা কুতুব আলী ফকির, কাঠালী), মো. সিরাজুল হক মোল্লা (পিতা সূর্যত আলী মোল্লা, কাঠালী), আমজাত আলী মুন্সী (পিতা মেহের আলী মুন্সী, কাঠালী), মো. শামছুদ্দিন মণ্ডল (পিতা হোসেন আলী মণ্ডল, বরাইদ), মতিউর রহমান আকন্দ (পিতা ময়েজ উদ্দিন আকন্দ, ধামশুর), মো. মিজানুর রহমান মিজান (পিতা নবাব আলী, আসকা), মো. আসাদুজ্জামান মীর (পিতা বদরুজ্জামান মীর, আসকা), আহেদ আলী ক্বারী (পিতা গফুর আলী, আসকা), মফিজ উদ্দিন খান (পিতা আমির খান), মো. আজিম ইউদ্দিন শেখ (পিতা হাসমত আলী শেখ, মল্লিকবাড়ি), মো. বেলায়ত হোসেন (পিতা সোবেদ আলী শেখ, কাঠালী), মোহাম্মদ আলী শেখ (পিতা ইসমাইল শেখ, ভায়াবহ), মো. তমর উদ্দিন (পিতা আমের আলী, কাইচান), আ. সোবান মল্লিক (পিতা আজগর আলী মল্লিক, উথুরা), আ. সালাম (পিতা আহাম্মদ আলী মুন্সী, ডাকাতিয়া), খোরশেদ আলম (পিতা জোহায়ের তালুকদার, ডাকাতিয়া), এ কুদ্দুস (পিতা আহাম্মেদ আলী, ডাকাতিয়া), মো. সাদেক আলী মিয়া (পিতা সুমেদ আলী, ডাকাতিয়া), মো. সরাফত আলী (পিতা আশ্রাফ আলী, ডাকাতিয়া), মো. তমিজ উদ্দিন (পিতা সফির উদ্দিন, বিরুনীয়া), মো. মুন্নেছ আলী (পিতা আব্দুল গফুর, আউলিয়াচালা), মো. মফিজ উদ্দিন পকু (পিতা কালিয়া মুন্সী, ধামশুর), মো. ডা. আ. সামাদ (পিতা সাফী মণ্ডল, ভান্ডাব), সফির উদ্দিন মুন্সী (পিতা সাফী মণ্ডল, ভান্ডাব), মো. রেজাউল করিম (পিতা ডা. আ. সামাদ, ভান্ডাব), মো. আবু বকর সিদ্দিক (মনোহরপুর), মো. আনোয়ার হোসেন (মল্লিকবাড়ি), মো. কামরুল আলম (মেদিলা), মো. নিজাম উদ্দিন খান (আসকা), পরিমল শীল (মেদিলা) ও মো. তমিজ উদ্দিন (কাঠালী)।
ভালুকা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ঢাকা- ময়মনসিংহ সড়কের পাশে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি দৃষ্টি নন্দন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। মল্লিকবাড়ি বাজারে মল্লিকবাড়ি বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। ডালুয়া গ্রামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। আংগাগারায় মুক্তিযোদ্ধাদের নামসহ একটি সুউচ্চ স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। ডাকাতিয়ায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা উচ্চ বিদ্যালয়, মল্লিকবাড়িতে শহীদ নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, বরাইদে শহীদ শামছুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, মামারিশপুরে মেজর আফসার উদ্দিন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভালুকা থেকে গফরগাঁও পর্যন্ত সড়কের নামকরণ শহীদ নাজিম উদ্দিন সড়ক, ভালুকা থেকে মল্লিকবাড়ি পর্যন্ত সড়কের নাম শহীদ আ. মান্নান সড়ক, ভরাডোবা থেকে উথুরা পর্যন্ত সড়কের নাম শহীদ মন্তাজ সড়ক, বিরুনীয়া মোড় থেকে মাহমুদপুর ঘাট পর্যন্ত সড়কের নাম শহীদ সিরাজুল হক মোল্লা সড়ক, বিরুনীয়া বাজার থেকে কাইচান পর্যন্ত সড়কের নাম শহীদ তমর উদ্দিন সড়ক এবং বিরুনীয়া বাজার থেকে বারানদী পর্যন্ত সড়কের নাম শহীদ তমিজ উদ্দিন সড়ক করা হয়েছে। [মো. শফিকুল ইসলাম কাদির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!