You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভালুকা থানা যুদ্ধ (ভালুকা, ময়মনসিংহ)

ভালুকা থানা যুদ্ধ (ভালুকা, ময়মনসিংহ) ৭ই ডিসেম্বর ভোর রাত থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। ৮ই ডিসেম্বর ভোররাতে পাকহানাদার বাহিনী গফরগাঁয়ের দিকে পালিয়ে যায়। ঐদিন ভালুকা হানাদারমুক্ত হয়। ভালুকামুক্ত যুদ্ধে ২৪ জন পাকসেনা ও ২২ জন রাজাকার নিহত এবং কয়েকশ রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
নভেম্বর মাসেই চারদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা সিডস্টোর ও মল্লিকবাড়ী পাকসেনা ক্যাম্প দখল করে নেন। এদুটি ক্যাম্পের পাকিস্তানি সৈন্যরা পালিয়ে ভালুকা থানা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। পাকবাহিনী চারদিক দিয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় ভালুকা থানা ঘাঁটিতে আটকা পড়ে। পাকবাহিনীর শক্তি পরখ করার জন্য মেজর আফসার বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে ২০শে নভেম্বর ভালুকা থানা পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণ করেন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা পরিকল্পিতভাবে ভালুকা থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানি কমান্ডার মো. খলিলুর রহমান তাঁর কোম্পানিসহ ধামশুর গ্রামে, কোম্পানি কমান্ডার চাঁন মিয়া এবং কোম্পানি কমান্ডার এমদাদুল হক দুলু কাঠালী গ্রামে, প্লাটুন কমান্ডার মনির উদ্দিন আহমেদ খারুয়ালী গ্রামে, প্লাটুন কমান্ডার এয়াকুব হায়দার ভাণ্ডার গ্রামে, অধিনায়ক মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ ধামশুর ও বর্তা গ্রামে অবস্থান নেন। ৭ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা ভোররাত থেকে ভালুকা থানায় আক্রমণ শুরু করেন, যা মধ্য রাত পর্যন্ত চলে। ৮ই ডিসেম্বর ভোররাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গফরগাঁওয়ের দিকে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে ২৪ জন পাকসেনা ও ২২ জন রাজাকার নিহত হয়। ৮ই ডিসেম্বর ভালুকা হানাদারমুক্ত হয়। পাকবাহিনীর পলায়নের খবর ছড়িয়ে পড়লে মেজর আফসার বাহিনী ভালুকা থানার দখল নেন। তাঁরা ভোরবেলা থানার ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন বাংঙ্কার ও থানার বিভিন্ন রুমে অবস্থানরত কয়েকশ রাজাকারকে দেখতে পান। তাদের আত্মসমর্পণ করানোর পর কয়েকটি রুমে বন্দি করে রাখা হয়। পরে চৌধুরী বাড়ি ও বিভিন্ন এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়া রাজাকারদের ধরে এনে থানায় জড়ো করা হয়। আটককৃত রাজাকারদের সংখ্যা ছিল ৬ শতাধিক। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তাদের মধ্যে ১৫০ জনকে কান কেটে ছেড়ে দেয়া হয়। অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়।
ভালুকা থানা ঘাঁটি আক্রমণে গুরুতপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মো. চাঁন মিয়া (ঝালপাজা), মো. কাশেম আলী (বান্দিয়া), এ কে এম বরকত উল্লাহ (কাঠালি), মো. সিরাজুল হক (কাঠালি), মো. নূরুল ইসলাম বিএ (কাচিনা), ডা. ওয়াইজউদ্দিন (মেদুয়ারী), মো. খুরশেদ আলম (মেদিলা), মো. ফয়েজ আহমেদ (ভাটগাঁও), আ. কুদ্দুছ (ভরাডোবা), খলিলুর রহমান (ধামশুর), বশির উদ্দিন (ডাকাতিয়া), নাজিম উদ্দিন (নন্দীপাড়া), নারায়ণ চন্দ্ৰ দেব (বাগাজান), সুলতান উদ্দিন (পনাশাইল), মজিবুর রহমান (পনাশাইল), সাইফুল ইসলাম (বাশিল), মনির হোসেন (ভরাডোবা), সুলতান উদ্দিন (মেদিলা), আমজাদ হোসেন (মল্লিকবাড়ী), শাহ আলী আকবর (ভালুকা), এমদাদুল হক দুলু (চান্দরাটি), আ. সবুর (বাটাজোড়), ডা. মাইন উদ্দিন (ডাকাতিয়া), ক্ষিতীশ চন্দ্র দাস (বিরুনিয়া), সজল চন্দ্ৰ দাস (বিরুনিয়া), আ. গফুর বিএ (ঝালপাজা), জহিরুল ইসলাম (গোয়ারী), তফির উদ্দিন (গোয়ারী), নূরুল ইসলাম (কুল্লাব), ইঞ্জিনিয়ার সুলাইমান আলী (মেদিলা) প্রমুখ। [মো. শফিকুল ইসলাম কাদির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!