You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভিটিবাড়ি যুদ্ধ (মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ)

ভিটিবাড়ি যুদ্ধ (মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ২৬শে অক্টোবর। এতে একজন রাজাকার ঘটনাস্থলে নিহত হয়, ১৮ জন ধরা পড়ে এবং অন্যরা পালিয়ে যায়। ধৃত ১৮ জন রাজাকারকে হত্যা করে বরকি নদীতে ফেলে দেয়া হয়। রাজাকারদের ২৫টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার কেওড়াজানী ইউনিয়নের একটি গ্রাম ভিটিবাড়ি। মুক্তাগাছা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে এর অবস্থান। কোম্পানি কমান্ডার রফিজ উদ্দিন রেফাজের নেতৃত্বে ১০০ মুক্তিযোদ্ধার সমন্বয়ে গঠিত এক কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা ভারতের মেঘালয় প্রদেশের তুরা ট্রেনিং সেন্টার থেকে ট্রেনিং শেষে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য রওনা দেন। ২৩শে অক্টোবর ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার তন্তর নামক স্থানে আসার পর গাইডের ভুলের কারণে তাঁরা পাকবাহিনীর এম্বুশে পড়েন। সেখানে রেফাজ কোম্পানির ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এরপর কোম্পানি কমান্ডার বহু কষ্টে তাঁর অন্যান্য সহযোদ্ধাদের নিয়ে ২৬শে অক্টোবর রাতে ভিটিবাড়ি গ্রামে পৌঁছে ৩টি গ্রুপে ভাগ হয়ে ৩টি বাড়িতে অবস্থান নেন। কমান্ডারসহ ১টি গ্রুপ অবস্থান নেন আবদুল খালেক সরদারের বাড়িতে। গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের সংবাদ রাজাকাররা জানতে পারে। ভোরবেলা মুক্তিযোদ্ধরা খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় সংবাদ আসে যে, ময়মনসিংহ, মুক্তাগাছা ও ফুলবাড়িয়া থেকে সশস্ত্র রাজাকাররা এসে তাদের ঘিরে ফেলেছে। মুক্তিযোদ্ধারা তাৎক্ষণিক দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শত্রুদের মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নেন। রাজাকারদের দুটি গ্রুপ উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে গুলি ছুড়তে- ছুড়তে এগিয়ে আসতে থাকে। উত্তর দিক থেকে আসা রাজাকারদের গ্রুপটি মুক্তিযোদ্ধাদের রেঞ্জের মধ্যে আসতেই কমান্ডার রফিজ উদ্দিন রেফাজ, টুআইসি হাবিবুর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতের অস্ত্র গর্জে ওঠে। মুক্তিযোদ্ধাদের উপর্যুপরি আক্রমণে উত্তর দিকের রাজাকার গ্রুপটি উঁচু ধানক্ষেতের মধ্যে গিয়ে লুটিয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের অপর গ্রুপটি দক্ষিণ দিক থেকে আসা রাজাকার গ্রুপটিকে ধাওয়া করলে ভয়ে তারা পিছু হটে। অতঃপর মুক্তিযোদ্ধারা ধানক্ষেতটি ঘিরে ফেলেন। তাদের গুলিতে একজন রাজাকার ঘটনাস্থলে নিহত হলে অন্যান্য রাজাকারদের মধ্যে কেউ অস্ত্র ফেলে, কেউ অস্ত্রসহ উত্তর দিকে দৌড়ে পালাতে থাকে। অস্ত্র ফেলে যাওয়া রাজাকাররা পালিয়ে গেলেও ১৮ জন রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধারা হাতেনাতে ধরতে সমর্থ হন। পরবর্তীতে ধৃত ১৮ জন রাজাকারদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এলকাবাসী রাজাকারদের মৃতদেহগুলো বরকি নদীতে ফেলে দেয়। এ-যুদ্ধে ২৫টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
ভিটিবাড়ি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- রফিজ উদ্দিন রেফাজ (কোম্পানি কমান্ডার, বনবাংলা, মুক্তাগাছা), হাবিবুর রহমান (কোম্পানির টুআইসি, বনবাংলা, মুক্তাগাছা), সুভাস চন্দ্র রক্ষিত (মুজাটি, মুক্তাগাছা), মফিজুল ইসলাম খোকা (তারাটী চন্দবাড়ী, মুক্তাগাছা), আবদুল হাই আকন্দ (তারাটি, মুক্তাগাছা), রফিকুল ইসলাম বাবুল (ঈশ্বরগ্রাম, মুক্তাগাছা), মাহফুজুল ইসলাম খান ওরফে সেলিম (মোগলটুলা, মুক্তাগাছা), আবদুর রহিম বাদশা (মোগলটুলা, মুক্তাগাছা), আ ফ ম ইয়াহিয়া খান (মোগলটুলা, মুক্তাগাছা), জাহান আলী (তারাকান্দি, ময়মনসিংহ), এ বি সিদ্দিক (কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ সদর), আবদুল আজিজ (তারাটি, মুক্তাগাছা), মোসলেম উদ্দিন (যাত্রাটি, মুক্তাগাছা), ওয়াজ উদ্দিন (নন্দীবাড়ি, মুক্তাগাছা), রহমত আলী (পাড়াটঙ্গী, মুক্তাগাছা), আবদুল কাদের (নন্দীবাড়ি, মুক্তাগাছা), মহীউদ্দিন (বাসাটি, মুক্তাগাছা), মতিয়ার রহমান মতি (তারাটি, মুক্তাগাছা), রজব আলী (দাওগাঁও, মুক্তাগাছা), শামসুল ইসলাম (মোগলটুলা, মুক্তাগাছা), নরেন্দ্র চন্দ্র কর (গোবিন্দপুর, মুক্তাগাছা) প্রমুখ। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!