ভীমরুলী গণহত্যা (ঝালকাঠি)
ভীমরুলী গণহত্যা (ঝালকাঠি) সংঘটিত হয় ৮ই জুন। ঝালকাঠি সদর উপজেলার অন্তর্গত এ গ্রামটি ছিল হিন্দু- প্রধান। স্থানীয় রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর লোকেরা পাকসেনাদের বোঝায় যে, এ অঞ্চলের সবাই হচ্ছে কাফের। তাই এ অঞ্চলের ওপর তাদের আক্রোশ ছিল বেশি। দালালদের প্ররোচনায় জুন মাসের প্রথম দিকে ঝালকাঠি সদর থেকে পাকসেনাদের একটি দল এখানে এসে লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সিরাজ সিকদারের নির্দেশে রেজায়ে সাত্তার ফারুক, সেলিম – শাহনেওয়াজ, ফিরোজ কবীর প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে তাদের প্রতিহত করেন। এরপর পাকবাহিনী অধিক লোকবল ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ৮ই জুন অতর্কিতভাবে ভীমরুলী গ্রামে হানা দেয়। তারা চারদিক থেকে গ্রামটি ঘিরে ফেলে শুরু করে ধ্বংসযজ্ঞ, লুটপাট, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ। হানাদার বাহিনী এদিন প্রায় একশটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং কমপক্ষে পঞ্চাশজন নারীকে ধর্ষণ করে। নরপশুদের পাশবিকতা থেকে বারো বছরের কিশোরী থেকে পঞ্চাশ বছরের প্রৌঢ়রাও রেহাই পাননি। হিংস্র হায়েনারা বিভিন্ন বাড়ি থেকে ২৮ জন নারী- পুরুষ ও শিশুকে ধরে এনে ভীমরুলী বাজারে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। এদিন তাদের হাতে প্রাণ হারান যোগেন্দ্ৰ নাথ খরাতী (কৃষক), রমণী হাওলাদার (ব্যবসায়ী), যোগেশ চন্দ্র হাওলাদার (ব্যবসায়ী), শিশু রঞ্জন দেউরী (ব্যবসায়ী), বিনোদিনী বেপারী (গৃহবধূ), যোগেন্দ্র নাথ সমাদ্দার (কৃষক), রামচন্দ্র হাওলাদার (ব্যবসায়ী), রাখাল চন্দ্র সমাদ্দার (কৃষক), সুনীল সমাদ্দার (কৃষক), অন্নদা হালদার (কৃষক), ভদ্র কান্ত বাড়ৈ (ব্যবসায়ী), নিরঞ্জন বাড়ৈ (ব্যবসায়ী), রাধানাথ হালদার (কৃষক), কালিচরণ মিস্ত্রী (কৃষক), গোপাল কৃষ্ণ মিস্ত্রী (ছাত্র), পার্বতী মিস্ত্রী (ব্যবসায়ী), নীরোদ বরণ হালদার (ব্যবসায়ী), অশ্বিনী কুমার মিস্ত্রী (কৃষক), হরচন্দ্র হালদার (কৃষক), শিরিশ চন্দ্র হালদার (ছাত্র), শরৎ চন্দ্র হালদার (ব্যবসায়ী), বিনোদ বিহারী হালদার (ব্যবসায়ী), অবিনাশ চন্দ্র হালদার (ব্যবসায়ী), স্বর্ণকুমার হালদার (কৃষক), কেশব লাল মিস্ত্রী (ব্যবসায়ী), জ্যোতিষ চন্দ্র খরাতী (শিক্ষক), সুরেন্দ্র নাথ মণ্ডল (গৃহস্থ) এবং অতুল চন্দ্ৰ মণ্ডল (ছাত্র)। এদিনের এই নৃশংস ঘটনার পর যারা প্রাণে বেঁচেছিলেন তারা ভিটে-মাটি ছেড়ে ভারতে চলে যান। দেশ স্বাধীন হলেও তাঁদের অধিকাংশই আর ফিরে আসেননি। [শ্যামল চন্দ্র সরকার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড