You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.01 | ভাড়াউড়া গণহত্যা (শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার) - সংগ্রামের নোটবুক

ভাড়াউড়া গণহত্যা (শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার)

ভাড়াউড়া গণহত্যা (শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার) সংঘটিত হয় ১লা মে। এতে ৫৪ জন মানুষ শহীদ ও ১১ জন আহত হন৷
১লা থেকে ২৯শে এপ্রিল পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের সংগ্রামী জনতা তীব্র প্রতিরোধের মাধ্যমে থানায় স্বাধীন বাংলার পতাকা সমুন্নত রেখেছিল। এ সময়ের মধ্যে একদিন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী, ব্রিগেডিয়ার পান্ডে, আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী প্রমুখ শ্রীমঙ্গলের প্রতিরোধ সংগ্রামীদের সঙ্গে দেখা করে তাদের অনুপ্রাণিত করেন। ২৮শে এপ্রিল সকালে মেজর কাজী নূরুজ্জামান এবং আওয়ামী লীগ নেতা ইসমত চৌধুরী শ্রীমঙ্গলে এসে জানান যে, পরিস্থিতি অনুকূল নয়। এদিন বেলা বারোটায় পাকবাহিনীর দুটি বিমান এলাকায় বোমা বর্ষণ করলে শ্রীমঙ্গলের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। ৩০শে এপ্রিল পাকসেনারা শ্রীমঙ্গল থানায় অনুপ্রবেশ ও সারা শহরে কারফিউ জারি করে।
মঙ্গু হাজরা নামে একজন চা-শ্রমিক ভারতীয় মিত্রবাহিনী-র সদস্যদের পথ দেখিয়ে মৌলভীবাজারের শেরপুরে নিয়ে গিয়েছিল। এ খবর স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা জেনে যায়। ফলে চা-শ্রমিকদের প্রতি তাদের মধ্যে ক্ষোভ জন্মে। এ কথা তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেও জানিয়ে দেয়। পরে মঙ্গু হাজরা শেরপুরের যুদ্ধে শহীদ হন।
১লা মে সকাল ১০টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশনের পূর্বদিকের রেললাইন ধরে পায়ে হেঁটে ১০-১২ জন পাকসেনা ভাড়াউড়া চা-বাগানে প্রবেশ করে। কালু নামে এক রাজাকার তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে। পাকসেনারা গ্রাম-পুলিশ অমৃত হাজরাকে পাঠিয়ে বাগানের শ্রমিকদের ডেকে আনে। হানাদাররা প্রথমে তাদের বাংকার খননের নির্দেশ দেয়। এজন্য তাদের পাঁচ গুণ বেশি মজুরি দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেয়। বাংকার খননের পর শ্রমিকদের বাগানের পশ্চিম প্রান্তে ভাড়াউড়া-শ্রীমঙ্গল সড়কের পাশে কালী মন্দিরের সামনে জড়ো করে। বেলা ১২-টার দিকে পাকসেনারা ব্রাশফায়ার করে নিরীহ চা-শ্রমিকদের হত্যা করে। এদিন মোট ৫৪ জন শ্রমিককে হত্যা করা হয়। ১১ জন আহত হন। পরে আগরতলা হাসপাতালে আহতদের কয়েকজনকে চিকিৎসা দেয়া হয়।
ভাড়াউড়া গণহত্যায় নিহতদের মধ্যে যাদের নাম সংগ্রহ করা গেছে, তারা হলেন— কুশো বাউরী, নিমাই তাঁতী, শম্ভু নায়েক, ছয়বল রিকিয়াছন, ছুটুয়া রিকিয়াছন, দরবারিয়া রিকিয়াছ, রঘুনন্দন রুহিদাস, মুরুলিয়া বড়াই, কানহিয়া ভর, ছিকনন্দন রুহিদাস, মহাবীর রিকিয়াছন, পবন তাঁতী, সোনাতন বুনার্জী, বাসু তাঁতী, হোছনী হাজরা, চিনিলাল হাজরা, গুরা হাজরা, কৃষ্ণ হাজরা, মহারাজ হাজরা, কুমার চান্দ তরিয়া, সমু মাঝি, নকুলা হাজরা, কালাচান্দ ঘাটুয়ার, সুখ নন্দন রিকিয়াছন, ইন্দ্র ভূঁইয়া, ফাগু হাজরা, রামলাল হাজরা, শিব মুড়া, চৈইত ভূঁইয়া, আগুন ভূঁইয়া, বুকই বেলি, রাজকুমার মাল, ফেব্রুয়া গৌড়, রামকৃষ্ণ গৌড়, রামচরণ গৌড়, জয়দেব কাহার, সঙ্গা কুর্মী, চুনি হাজরা, অমৃতা হাজরা, ক্ষুদিরাম হাজরা, বীরবল হাজরা, বিজু নারায়ণ গোয়ালা, রামদেও হাজরা, সংরা তুরিয়া, হরকু হাজরা ও রাম ছরুক হাজরা। বাগানের লেবার লাইনের প্রত্যেকটি পরিবারই কোনো-না-কোনো আপন জনকে এ হত্যাকাণ্ডে হারিয়েছিল। আহত অনেকে পরে শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করে মুত্যুমুখে পতিত হন। [চন্দনকৃষ্ণ পাল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড