ভাণ্ডারা গণহত্যা (বিরল, দিনাজপুর)
ভাণ্ডারা গণহত্যা (বিরল, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় এপ্রিল মাসের শেষদিকে। দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার এ গণহত্যায় ৮ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। দিনাজপুর শহরের ধারঘেঁষা পুনর্ভবা নদীর পশ্চিম প্রান্তে বিরল উপজেলার অবস্থান। এর উত্তর-পূর্বে কাহারোল ও উত্তরে বোচাগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে ভারত।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২৮শে মার্চ বাঙালি ইপিআর-রা দিনাজপুর ইপিআর হেডকোয়ার্টার্স দখল করে নেন এবং ১২ই এপ্রিল পর্যন্ত দিনাজপুর শহর মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে থাকে। ১৩ই এপ্রিল সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে একদল পাকসেনা দশ মাইল নামক স্থান থেকে মর্টার শেল নিক্ষেপ করতে-করতে দিনাজপুর শহরের দিকে অগ্রসর হয় এবং সন্ধ্যা নাগাদ শহর দখল করে নেয়। এরপর তারা পুনর্ভবা নদী পার হয়ে বিরল উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং স্থানীয় লোকজনদের নিয়ে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী তৈরি করে।
উপজেলা শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে তুলাই নদী নামে আরেকটি নদী আছে। এ নদী থেকে আরো ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে সীমান্তবর্তী পাকুড়া গ্রামে কিশোরীগঞ্জ বিওপি বা ইপিআর সীমান্ত চৌকি। ২৫শে এপ্রিল সকালে হঠাৎ মর্টার শেল নিক্ষেপ করতে-করতে পাকসেনারা পাকুড়া বিওপি-র দিকে অগ্রসর হয় এবং এক পর্যায়ে বিওপি লক্ষ করে গুলি ছুড়তে থাকে। ক্যাম্পে অবস্থানরত বাঙালি ইপিআর জওয়ানরাও পাল্টা আক্রমণ করেন। কিন্তু সংখ্যায় অল্প হওয়ায় তাঁরা টিকতে না পেরে ভারতের রাধিকাপুরের দিকে চলে যান। এ-সময় উভয় পক্ষে বেশকিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ভাণ্ডারা গ্রামটি ভাণ্ডারা ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় গ্রাম এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিরল থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে সীমান্তবর্তী স্থানে এর অবস্থান। পাকসেনারা তুলাই নদী অতিক্রম করার পরই গ্রামের অধিকাংশ হিন্দু জনতা ভারতে চলে যায়। এপ্রিলের শেষদিকে পাকসেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে অকস্মাৎ এ গ্রামে প্রবেশ করে ৮ জনকে হত্যা করে এবং একই স্থানে কবর দেয়। এ গণহত্যায় শহীদরা হলেন: হাজী মহিউদ্দিন (পিতা নাইমউদ্দিন), দিলচান মণ্ডল (পিতা আক্কেল মণ্ডল), মুসলিম মণ্ডল (পিতা দিলচান মণ্ডল), নয়নমনি (পিতা হাজী খয়ের মোহাম্মদ), নবীরউদ্দিন ডাউয়া (পিতা আজিমউদ্দিন), আজিমউদ্দিন (পিতা মজিরউদ্দিন), কয়ছর আলী (পিতা কছিমউদ্দিন) এবং জাহিরু দেবশর্মা (পিতা বংশী দেবশর্মা)। [এম এ কাফি সরকার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড