You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভাদুরিয়া বাজার যুদ্ধ (নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর)

ভাদুরিয়া বাজার যুদ্ধ (নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় ৫ ও ৬ই ডিসেম্বর। এতে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৫৫ জন মিত্রবাহিনীর সদস্য শহীদ হন। অপরপক্ষে ৮২ জন পাকসেনা নিহত হয়। নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাদুরিয়া এলাকা মুক্ত করতে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীকে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে কঠিন যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয়। পাকবাহিনী ঘোড়াঘাটের বলাহার ও ডুগডুগিতে দুটি শক্তিশালী ঘাঁটি নির্মাণ করেছিল। ভাদুরিয়া বাজারেও তাদের একটি ঘাঁটি ছিল। এছাড়া ডাঙ্গাপাড়া, বিরামপুর, ফুলবাড়ী ও নবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে লিংক ক্যাম্প হিসেবে তৈরি করেছিল বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ঘাঁটি।
নভেম্বর মাসের শেষদিকে পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে। এরপর থেকে তারা যুদ্ধের কৌশল পাল্টিয়ে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে থাকে। তাদের আত্মরক্ষায় সুবিধা হয় এমন একটি জায়গাকে তারা বেছে নিতে স্থির করে। বেশ কয়েকমাস ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, হাকিমপুর, ফুলবাড়ী ও পার্বতীপুরে অবস্থান করার ফলে নবাবগঞ্জের ভাদুরিয়া বাজার ও এর ভৌগোলিক পরিমণ্ডলকে তাদের ডিফেন্সের জন্য সুবিধাজনক বলে মনে করে। তাই তারা ৩০শে নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করে ঘোড়াঘাটের বলাহার ও ডুগডুগি থেকে ভাদুরিয়ায় এসে বাজারের কাছে প্রচুর বাংকার খনন করে। এরপর ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে পাকসেনারা ডাঙ্গাপাড়া, বিরামপুর, ফুলবাড়ী ও নবাবগঞ্জের ছোট-ছোট ঘাঁটিগুলোকে সরিয়ে এনে ভাদুরিয়া বাজারকে কেন্দ্র করে একটি শক্ত ঘাঁটি নির্মাণ করতে থাকে। এ-খবর পেয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল পরের দিন ভাদুরিয়ার পশ্চিমে রত্নাদিঘি গ্রামের দিক দিয়ে এবং উত্তরে দাউদপুর গ্রাম থেকে ট্যাঙ্কসহ ভাদুরিয়ায় ঢুকতে থাকে। এ সময় ভাদুরিয়ায় থাকা পাকিস্তানি সেনাদের দলটি কোনো যুদ্ধ ছাড়াই ঘোড়াঘাটের ডুগডুগিতে চলে যায়। ভারতীয় সেনারা সেখানে সাদা পতাকা উড়িয়ে দিয়ে দাউদপুরে ফিরে আসেন। ঐদিন রাতেই পাকিস্তানি সেনারা আবার তাদের তৈরি বাংকারে চলে আসে এবং ভাদুরিয়ার হিন্দুপাড়ায় আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে ১৪-১৫টি হিন্দু পরিবার রাতেই ভারতে চলে যায়। এ খবর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর কাছে পৌঁছলে দাউদপুরে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাবাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখ মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী একত্রিত হয়ে রাত ৮টার পর পাকসেনাদের ভাদুরিয়া ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। গভীর রাত পর্যন্ত ভয়াবহ যুদ্ধ চলে। সে রাতে মিত্রবাহিনীর ৫৫ জন সদস্য এবং ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যুদ্ধের এ খবর মিত্রবাহিনীর কাছে পৌঁছলে পরের দিন ৬ই ডিসেম্বর হিলির ছাতনী দিয়ে ভারতীয় সেনারা পাকহানাদার বাহিনীর উপর শক্তিশালী আক্রমণ চালায়। উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। ঐ যুদ্ধে পাকবাহিনীর ৮টি ট্যাংক ধ্বংস এবং ৮২ জন সেনা নিহত হয়। যৌথ বাহিনী পাকবাহিনীর কাছ থেকে ভাদুরিয়াকে মুক্ত করে। অন্যদিকে ঐদিন দুপুরের মধ্যে পাকসেনাদের অন্যতম ঘাঁটি নবাবগঞ্জ থানা দখল করে নেয় মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনগণ। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে ৬ তারিখ নবাবগঞ্জ উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। [মাসুদুল হক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!