You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.10 | ভাদুরিয়া যুদ্ধ (ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

ভাদুরিয়া যুদ্ধ (ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর)

ভাদুরিয়া যুদ্ধ (ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় ১০-১২ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে সংঘটিত এ-যুদ্ধে উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয় এবং এক পর্যায়ে পাকবাহিনী পালিয়ে যায়। ভাদুরিয়া দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এটি ঘোড়াঘাট উপজেলার সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন হওয়ায় ভাদুরিয়া যুদ্ধ ঘোড়াঘাট উপজেলায় প্রভাব ফেলে।
ঘোড়াঘাট নবাবগঞ্জ, বিরামপুর ও হাকিমপুর লাগোয়া উপজেলা। হাকিমপুরের বিস্তীর্ণ পশ্চিমাঞ্চল ভারতীয় সীমান্তের সঙ্গে যুক্ত। ফলে উল্লিখিত ৪টি উপজেলার প্রতি হানাদার বাহিনীর শ্যেন দৃষ্টি ছিল। এর মধ্য দিয়েই মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ চালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতেন।
ভাদুরিয়ায় ১০ই ডিসেম্বর থেকে ১২ই ডিসেম্বর পর্যন্ত মিত্রবাহিনী এবং হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। নবাবগঞ্জ থেকে দশ কিমি দূরে ভাদুরিয়ায় মিত্রবাহিনীকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে হানাদার বাহিনী ওঁৎ পেতে ছিল। ১০ই ডিসেম্বর বিকেল ৩টার দিকে অগ্রসরমাণ মিত্রবাহিনীর একটি পদাতিক দল ভাদুরিয়া পৌঁছলে পেছন থেকে হানাদার বাহিনী তাদের আক্রমণ করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ বাঁধে। পরদিন উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি তীব্রতর হয় এবং তা ১২ তারিখ পর্যন্ত চলে। মিত্রবাহিনী বেপরোয়া বোমা বর্ষণ করে পাকবাহিনীর অবস্থান ধ্বংস করে দেয়। ফলে আত্মরক্ষার জন্য পাকবাহিনী পূর্বদিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ-যুদ্ধে উভয় পক্ষের বেশ ক্ষয়-ক্ষতি হয়। মিত্রবাহিনীর নিহত অনেক সেনার লাশ ভাদুরিয়া স্কুল মাঠ ও দাউদ পুর স্কুল মাঠে সাময়িকভাবে পুঁতে রাখা হয়। পরে দাউদপুর বাজারের বৈরাগী পাড়ায় দাহ করা হয়।
ভাদুরিয়ার সন্নিকটে দারোগার আমবাগানে পাকবাহিনী দ্বিতীয় স্তরে প্রতিরোধ গড়েছিল। কিন্ত মিত্রবাহিনীর উপর্যুপরি গোলাবর্ষণ ও মুক্তিকামী বাঙালিদের আক্রমণে তারা পালাতে বাধ্য হয়। মিত্রবাহিনী হানাদার বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর পর্যন্ত এলাকা শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হয়। [মো. ওসমান গনী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড