You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভালুকজান ব্রিজ বধ্যভূমি (ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ)

ভালুকজান ব্রিজ বধ্যভূমি (ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ) এখানে পাকহানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় ট্রাক ভর্তি করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাধারণ মানুষজনকে ধরে এনে ব্রিজের ওপর হত্যা করে আখিলা নদীতে ফেলে দিত। মুক্তিযুদ্ধকালে কয়েকশ মানুষ তাদের এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
ফুলবাড়িয়া উপজেলায় আখিলা নদীর ওপর নির্মিত ভালুকজান ব্রিজ। ৭১-এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের নীরব স্বাক্ষী এ ব্রিজ। উপজেলা সদরের ভালুকজান এলাকায় কে আই সিনিয়র মাদ্রাসায় গড়ে ওঠে পাকবাহিনীর ক্যাম্প। এলাকার রাজাকারআলবদরদের সহায়তায় ক্যাম্পে ধরে নিয়ে নিরীহ মানুষদের নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার করা হতো। মে-জুন মাসে এলাকায় পাকবাহিনীর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। পার্শ্ববর্তী এলাকার নানা জায়গা থেকে পাকবাহিনী নির্বিচারে মানুষজন ট্রাকভর্তি করে ভালুকজান ব্রিজে নিয়ে এসে হত্যা করে আখিলা নদীতে ফেলে দিত। একদিনেই ১৩ জনকে হত্যা করে ভালুকজান ব্রিজ থেকে ফেলে দেয়া হয়। রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় পাকবাহিনী এ জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এলাকার মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধাদের ভাষ্যমতে, ভালুকজান বধ্যভূমিতে কয়েক শত লোককে হত্যা করা হয়। ভালুকজান বধ্যভূমিতে হত্যার শিকার ৩১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মো. ইসমাইল হোসেন মাস্টার (পিতা মানিক সরকার, ভবানীপুর, ফুলবাড়িয়া), মো. অছিম উদ্দিন মোল্লাহ (পিতা হাজী জান মামুদ মোল্লাহ, সোয়াইতপুর, ফুলবাড়িয়া), মো. আব্দুল করিম (পিতা কমর উদ্দিন মণ্ডল, বেতবাড়ী, ফুলবাড়িয়া), মো. আব্দুর রশিদ নসু (পিতা কাজিম উদ্দিন, বেতবাড়ী, ফুলবাড়িয়া), মো. আব্দুল খালেক পাঞ্জু (পিতা জাবেদ আলী, বেতবাড়ী, ফুলবাড়িয়া), মো. নওসের আলী (পিতা ফয়েজ উদ্দিন, বেতবাড়ী, ফুলবাড়িয়া), মো. দুলাল মিয়া (দেওপাড়া, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল), মো. আব্দুল খালেক (এনায়েতপুর, ফুলবাড়িয়া), মো. মমতাজ আলী (পিতা ওমর আলী, সোয়াইতপুর, ফুলবাড়িয়া), মো. শহীদ পাঞ্জাব আলী, গুপ্ত বৃন্দাবন, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল), মো. সাহেদ আলী (পিতা জনু বেপারী, হোরবাড়ী, ফুলবাড়িয়া), মো. বানু মিয়া (পিতা কছিম শেখ, শিবরামপুর, ফুলবাড়িয়া), মো. আরজ আলী (পিতা সাহেদ আলী মণ্ডল, শিবরামপুর, ফুলবাড়িয়া), মো. ছাবেদ আলী (পিতা হাজী মহর আলী, রামনগর, ফুলবাড়িয়া), সুরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (পিতা বিদ্ধানন্দ, রামনগর, ফুলবাড়িয়া), মো. আলতাফ আলী (পিতা মানুল্লাহ, ভালুকজান, বাক্তা, ফুলবাড়িয়া), মো. তালেব আলী (পিতা মানুল্লাহ, ভালুকজান, বাক্তা, ফুলবাড়িয়া), মো. সেকান্দর আলী (পিতা মানুল্লাহ, ভালুকজান, বাক্তা, ফুলবাড়িয়া), মো. হাতেম আলী (পিতা এহিন আলী মুন্সি, উত্তর আন্ধারিয়াপাড়া, ফুলবাড়িয়া), রেপতি ঋষি (পিতা পেয়াজি সরকার ঋষি, ফুলবাড়িয়া বাজার ঋষি পাড়া, ফুলবাড়িয়া), গেনেন্দ্ৰ ঋষি (পিতা মনিন্দ্র ঋষি, ফুলবাড়িয়া বাজার ঋষি পাড়া, ফুলবাড়িয়া), মংলা ঋষি (পিতা দগেশ্বর ঋষি, ফুলবাড়িয়া বাজার ঋষি পাড়া, ফুলবাড়িয়া), গগন ঋষি (পিতা তেমা ঋষি, ফুলবাড়িয়া বাজার ঋষি পাড়া, ফুলবাড়িয়া), উমেশ ঋষি (পিতা গিরিশ ঋষি, ফুলবাড়িয়া বাজার ঋষি পাড়া, ফুলবাড়িয়া), মনিন্দ্র ঋষি (পিতা যাদব ঋষি, ফুলবাড়িয়া বাজার ঋষি পাড়া, ফুলবাড়িয়া), জিনেষ ঋষি (পিতা মনিন্দ্র ঋষি, ফুলবাড়িয়া বাজার ঋষি পাড়া, ফুলবাড়িয়া), কালীপদ ঋষি (পিতা কালাচান ঋষি, ফুলবাড়িয়া বাজার ঋষি পাড়া, ফুলবাড়িয়া), মো. রিয়াজ উদ্দিন (পিতা রোস্তম আলী, বাদীহাটি, ফুলবাড়িয়া), অভিনাশ চন্দ্ৰ দে (পিতা যুগেন্দ্র চন্দ্র দে, নাওঁগাঁও, ফুলবাড়িয়া), বলরাম কর্মকার (পিতা সুধন্য কর্মকার, নাওঁগাঁও, ফুলবাড়িয়া) ও রমেশ চন্দ্র দে (পিতা হরেন্দ্র চন্দ্র দে, নাওঁগাঁও, ফুলবাড়িয়া)। ভালুকজানে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। এছাড়া ফুলবাড়িয়া উপজেলায় পাকহানাদারদের হাতে মোট ১২১ জন নিহতের তালিকা পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ৯৬ জনের নামসহ একটি ফলক ও স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। [শফিকুল ইসলাম কাদির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!