ভাঙ্গীডাঙ্গী গণহত্যা (ফরিদপুর সদর)
ভাঙ্গীডাঙ্গী গণহত্যা (ফরিদপুর সদর) সংঘটিত হয় ২১শে এপ্রিল। পাকসেনা ও তাদের দোসররা এ গণহত্যা সংঘটিত করে। এতে শতাধিক লোক প্রাণ হারায়। ভাঙ্গীডাঙ্গী গ্রামের প্রায় সবাই ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ২১শে এপ্রিল ফরিদপুর শহরের পতনের পর এ গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকে গ্রাম ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করে। তখন হাটে ঢোল পিটিয়ে সরকারি নির্দেশ প্রচার করে বলা হয় যে, হিন্দু-মুসলমান কারো কোনো ভয় নেই। সবাই নিশ্চিন্তে বাড়িতে থাকবে। সরকার তাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেবে। এটা প্রচারের পর অনেকেই বাড়ি ফিরে আসে।
এরপর শতাধিক পাকিস্তানি সেনা অতর্কিতে গ্রামটিতে হাজির হয়। তাদের সঙ্গে ছিল দোসর রাজাকারদের একটি বিরাট দল। এদের দেখে লোকজন যখন বাড়ি ছেড়ে এদিক- ওদিক ছুটছিল, তখন পাকিস্তানি সেনারা তাদের ধাওয়া করে। যাকে সামনে পায় তাকেই গুলি করে। গ্রাম থেকে পদ্মার পাড়ে যাওয়ার জন্য একটি খালের ওপর সাঁকো ছিল। ঐ সাঁকোর ওপর দিয়ে শতাধিক নরনারী ওপার যাচ্ছিল। তাদের ওপর ব্রাশ ফায়ার করলে অনেকে লাশ হয়ে খালে পড়ে। খালের পাড়ে ছিল কাশবন। অনেকে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। মেশিন গান দিয়ে তাদের ওপরও গুলি করা হয়। সব মিলে এদিন শতাধিক নারী-পুরুষ প্রাণ হারায়। অনেকে মারাত্মকভাবে আহত হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর পাকসেনা ও রাজাকাররা বাড়িগুলোতে ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এদিন ভাঙ্গীডাঙ্গীর পলায়নরত নারীদের বিহারি ও বাঙালি রাজাকাররা প্রথমে নদীর পাড়ে জড়ো করে রাখে। তারপর পাকিস্তানি সেনাদের কাছে তুলে দেয়। অসহায় নারীদের নিয়ে পৈশাচিক উন্মাদনায় মেতে ওঠে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকাররা। ভাঙ্গীডাঙ্গীতে নিহত অনেকের পরিচয় জানা যায়নি। যাদের পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন— বিজয় ভাঙ্গী (পিতা বারন ভাঙ্গী), জটাধর বিশ্বাস, রণজিৎ বৈরাগী (পিতা জীবন বৈরাগী), শ্রীনাথ ভাঙ্গী (পিতা অভয়চন্দ্র ভাঙ্গী), গোরাচাঁদ ভাঙ্গী (পিতা অভয় চন্দ্র ভাঙ্গী), সূর্যকুমার (পিতা শীতল), সবল কাজী (পিতা বিনয় কাজী), অমরচাঁদ চৌকিদার, গোপাল বেপারী (পিতা উমাচরণ বেপারী), উপেন্দ্রনাথ সরকার (পিতা কাঞ্ছিরাম সরকার), মুকুন্দ সরকার (পিতা গোপাল সরকার), ব্রজেশ্বর বিশ্বাস (পিতা রাসবিহারী বিশ্বাস), মাধব সরকার (পিতা মানিক সরকার), গটা বিশ্বাস (পিতা খগেন বিশ্বাস), কিরণ বিশ্বাস ওরফে গটা বিশ্বাস, জীবন বৈরাগী, নিশিকান্ত ওরফে নিবারণ ভাঙ্গী, উপেন সরকার (পিতা বাঞ্চারাম সরকার), লক্ষ্মীরানী সরকার (পিতা যোগেন্দ্রনাথ সরকার), রঞ্জিত বৈরাগী (পিতা জীবন বৈরাগী), প্রফুল্ল বিশ্বাস (পিতা কুঞ্জ বিশ্বাস), রাজকুমার সিংহ, নিতাই মাঝি (পিতা ফটিক মাঝি) এবং প্রমথ সাহা ভম্বল (পিতা কুটিলাল সাহা)। [আবু সাঈদ খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড