You dont have javascript enabled! Please enable it! ভাটপাড়া কুঠি বধ্যভূমি (গাংনী, মেহেরপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

ভাটপাড়া কুঠি বধ্যভূমি (গাংনী, মেহেরপুর)

ভাটপাড়া কুঠি বধ্যভূমি (গাংনী, মেহেরপুর) মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়৷
গাংনী উপজেলার সঙ্গে ভারতীয় সীমান্তের সংযোগ ঘটেছে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী যশোর সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে সকল প্রতিরোধ ভেঙ্গে মেহেরপুরে প্রবেশের পর অতি দ্রুত জেলার সর্বত্র তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এরই অংশ হিসেবে তারা গাংনী উপজেলার উত্তর দিকে ভাটপাড়া গ্রামে ক্যাম্প স্থাপন করে। ভাটপাড়া ক্যাম্প ছিল পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র এবং বধ্যভূমি। ভাটপাড়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নির্যাতন-নিষ্ঠুরতা এবং লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস।
ইংরেজ শাসনামলে বাংলায় নীলচাষের প্রচলন হলে মেহেরপুরে নীলচাষ একটু বিলম্বে শুরু হয়। মেহেরপুরের স্রোতস্বিনী নদী ভৈরব, কাজলা ও মাথাভাঙ্গার দুই তীরে নীলকররা গড়ে তোলে নীলকুঠি। গাংনী থানার কাজলা তীরবর্তী বর্ধিষ্ণু গ্রাম ভাটপাড়ায় স্থাপিত নীলকুঠি ভাটপাড়া কুঠি নামে পরিচিত। নীলকরদের অত্যাচার-নির্যাতনের সাক্ষী এই ভাটপাড়া কুঠিতেই প্রায় দুশ বছর পর আর এক অত্যাচারী-নির্যাতনকারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের পর এতদঞ্চলের সাধারণ মানুষের ওপর নেমে আসে সীমাহীন নিপীড়ন। তারা মুক্তিকামী মানুষের ওপর নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায়। ভাটপাড়া কুঠি ক্যাম্প হয়ে ওঠে বাঙালির অশ্রুজলে সিক্ত বধ্যভূমি। মে মাসের প্রথমার্ধ থেকে ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পযন্ত নির্বিচারে এ বধ্যভূমিতে হত্যাকাণ্ড চলে। হানাদার বাহিনী স্থানীয় মানুষ এবং জেলার বাইরে থেকে বহু বাঙালি বন্দিকে ভাটপাড়া কুঠি ক্যাম্পে নিয়ে এসে কাজলাপাড়ে দাঁড় করিয়ে নিমর্মভাবে হত্যা শেষে তাদের মৃতদেহ কাজলা নদীতে নিক্ষেপ করে। হতভাগ্য সেসব শহীদদের সকলের নাম-পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় ৬ জনের নাম পরিচয় জানা গেছে। ১৫ই আগস্ট একই সঙ্গে তাদের হত্যা করা হয়। তারা হলেন- বামুন্দির হারেজ উদ্দীন বিশ্বাস (পিতা বুদুই বিশ্বাস) ও আবুল কাশেম (পিতা করিম উদ্দীন), সাহারবাটির উজির মালিথা (পিতা দিরাজতুল্লাহ মালিথা) ও এমলাক হোসেন (পিতা উকিল বিশ্বাস), চৌগাছার হাফিজ উদ্দীন বিশ্বাস (পিতা আজিজ উদ্দীন বিশ্বাস) এবং তার শ্যালক গাংনী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল হাশিম সরকার (পিতা জহিরুদ্দীন সরকার)। এ বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের কোনো স্মারক এ পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়নি। [রফিকুর রশীদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড