You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা (কুমিল্লা) - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা (কুমিল্লা)

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা (কুমিল্লা) মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বুড়িচং উপজেলার অংশ ছিল। ১৯৭৮ সালে বুড়িচং উপজেলার উত্তর অংশ নিয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা গঠিত হয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদে বুড়িচং থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আমীর হোসেন নির্বাচিত হন। জাতীয় পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন এডভোকেট সিরাজুল হক। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষের শক্তি প্রবল ছিল।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা। উপজেলার উত্তর-পূর্ব সীমানা জুড়ে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও সালদা নদী। সালদা নদী উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। মুক্তিযুদ্ধের নানা পর্যায়ে সালদা নদী ছিল ব্যাপকভাবে আলোচিত। এর প্রভাব পড়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সর্বত্র। কারণ যুদ্ধের অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল এলাকাটি।
আমীর হোসেন এমপিএ-এর পরামর্শে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য এম এ মান্নান, বীর বিক্রম মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সিদলাই গ্রামের খাঁ বাড়ির মাঠে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেন। সেখানে স্কুল-কলেজের ছাত্র এবং যুবকদের ৪০ জনের একটি দলকে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এর পরেও কিছু দিন ক্যাম্পটি চালু ছিল। এছাড়া চান্দলা গ্রামেও মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপিত হয়েছিল। মুজিব বাহিনী-র কমান্ডার নাজমুল হাসান পাখির নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রুপটি অপারেশনের পর মাঝে-মাঝে আশপাশের গ্রামে চলে যেত। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা। মুজিব বাহিনীর এ গ্রুপটি চান্দলা সরকার বাড়ি এবং ভূঞা বাড়িতে পর্যায়ক্রমে অবস্থান করে এবং রাতের বেলা সুখেন্দু বিকাশ দে-র বাড়িতে গ্রামের যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় বুড়িচং থানার কমান্ডার ছিলেন মাহমুদুল হাসান। শেখ ফজলুল হক মণির নির্দেশনায় নাজমুল হাসান পাখিকে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার এবং নুরুল ইসলাম নুরুকে ডেপুটি কমান্ডার করে বুড়িচং এলাকার জন্য একটি দল গঠন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে এ উপজেলার মূল কেন্দ্র ছিল বুড়িচং। উপজেলার পূর্ব প্রান্ত ঘেঁষে রয়েছে ভারত সীমান্ত ও ঢাকা- চট্টগ্রাম রেল লাইন। আর পশ্চিম প্রান্তে চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়ক থাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আনাগোনা এখানে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই ছিল।
স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও নেজামী ইসলামী-র সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করে এবং বাঙালিদের হত্যা, নির্যাতন ও লুণ্ঠনে অংশ নেয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল রাজাকারদের সহায়তায় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নাইঘর গ্রামে আগুন দেয়। ফলে অনেক বাড়িঘর ও সহায়-সম্পদ নষ্ট হয়। ৩১শে মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ময়নামতি সেনানিবাস অভিমুখে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা সড়কে মাধবপুর বাসস্ট্যান্ডে জানু মিয়া নামে এলাকার বিশিষ্ট এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে। পথে তারা আরো অনেককে হত্যা করে। তারা দেবীদ্বারে শ্রীপুকুর পাড়ে এসে জনতা কর্তৃক অবরুদ্ধ হয়। সুবেদার আমির খানের নেতৃত্বে তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবেলা করার সময় পাকিস্তানি বাহিনী সিদলাই দক্ষিণ পাড়ায় বড়বাড়ির দুই ভাইয়ের এক ভাইকে ধরে নিয়ে যেতে থাকে। তখন অন্য ভাই আক্রমণ করে এক পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে। পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে ঘটনাস্থলে এক ভাই হাফিজ উদ্দিন শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনী ব্রাহ্মণপাড়ায় বেশ কয়েকটি গণহত্যা সংঘটিত করে। এর মধ্যে চান্দলা গণহত্যা, নাগাইস গণহত্যা ও বড়ধুশিয়া গণহত্যা উল্লেখযোগ্য। চান্দলা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি। এ গ্রামে স্থাপিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শিবির। গ্রামের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ছিল সনাতন ধর্মের। এজন্য বেশ কয়েকবার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চান্দলায় আক্রমণ করে গণহত্যা চালায়। প্রথমবার এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে উত্তর চান্দলায় পাকিস্তানি বাহিনী হামলা চালায়। গ্রামবাসীর অনেকে পানের বরজে আত্মগোপন করে বেঁচে যায়। চান্দলার কেতু পাল, বণিক পাড়ার উমেশ বণিক, মনমোহন কর, ফরিদ আহমদ ও আলী আজমসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মী পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে মনমোহন কর, উমেশ বণিক ও কেতু পাল পাকসেনা কর্তৃক হত্যার শিকার হন। দ্বিতীয়বার ১৬ই জুন পাকিস্তানি বাহিনী চান্দলা গ্রামের উত্তর- পশ্চিম দিকে প্রবেশ করে। পড়ন্ত বেলায় অনেকেই মাঠে থাকায় এদিক-ওদিক পালিয়ে যায়। পশ্চিম পাড়া মসজিদের মুসল্লিরা পালাতে পারেনি। হানাদাররা মসজিদে প্রবেশ করে খোয়াজ আলী, আবদুল গফুর ও শহীদ মিয়াকে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে। তৃতীয়বার সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে গ্রামের করিমপুর পাড়ার আবদুল মজিদের বাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনী আরো একটি গণহত্যা সংঘটিত করে। তারা কয়েকটি নৌকায় করে পুকুরের পশ্চিম পাড়ের বাড়িতে প্রবেশ করে নিরপরাধ মানুষদের ওপর গুলি করে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। লোকজন দৌড়ে এসে পুববাড়িতে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানে এসেও হামলা করে। যে যেখানে ছিল সেখানেই গুলি করে হত্যা করে। তাদের এ গণহত্যার শিকার হন নান্নু মিয়া, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল কুদ্দুস, আবদুল আজিজ ও মমতাজ উদ্দিন। পুকুরের পাড়ে দুটি গর্ত করে তাঁদের গণকবর দেয়া হয়।
২৭শে আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা আকস্মিকভাবে নাগাইস গ্রামে টহলরত পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ করলে ৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তারা নাগাইসের ওপর শেল নিক্ষেপ শুরু করে। একই সঙ্গে তারা জেট বিমান দ্বারাও শেল নিক্ষেপ করে। আতঙ্কিত গ্রামবাসী। বাড়িঘর ছেড়ে অন্য গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেয়। গোলাগুলির শেষ পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী ১৫ জন গ্রামবাসীকে আটক করে। আটককৃতদের তারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী বড়ধুশিয়া গ্রামের স্কুল মাঠে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
১লা অক্টোবর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বড়ধুশিয়া গ্রাম আক্রমণ করে। তারা বড়ধুশিয়া গ্রাম দখল করে গ্রামের প্রতিটি বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় এবং গণহত্যা চালায়। বড়ধুশিয়া গণহত্যায় ৪০ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় চান্দলা, বড়ধুশিয়া ও নাগাইসে গণকবর রয়েছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে কয়েকটি যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে চান্দলার যুদ্ধ, বড়ধুশিয়া বাজার অপারেশন ও সালদা নদী যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নাজমুল হাসান পাখি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় কয়েকজন প্রাক্তন সৈনিক ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বুড়িচংয়ে আড়াই মাস ধরে অবস্থান করেন। তাঁর গ্রুপ স্থানীয় জনগণের সহায়তায় এম্বুশ পেতে বড়ধুশিয়া গ্রামে টহলরত পাকিস্তানি বাহিনীকে উত্তর সিদলাইয়ের দর্পনারায়ণপুরে বাধাগ্রস্ত করে। সেখানে অনেক পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্য নিহত হয়।
২৫ ও ২৬শে আগস্ট চান্দলা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার মাওলানা সাহেবের বাড়ির পূর্বদিকে আলম বাড়ি, সূত্রধর বাড়িসহ সবকটি বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন। ২৫শে আগস্ট থেকে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। একনাগাড়ে ৪ দিন যুদ্ধ চলে। শেষদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায়। যুদ্ধে ৬ জন বেসামরিক মানুষ শহীদ হন।
সেপ্টেম্বর মাসে সুবেদার আবদুল ওহাবের কমান্ডে ‘কে’ ফোর্সের সাহসী যোদ্ধা সিপাহি সাফিল মিয়া, বীর উত্তম-সহ ৫০ জনের বাহিনী ও সুবেদার সামসুল হকের বাহিনী যৌথভাবে ভোররাতে চান্দলা গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। আক্রমণে একজন অফিসারসহ ১৬ জন পাকিস্তানি সেনা এবং ২৯ জন রাজাকার নিহত হয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা সাফিল মিয়া শহীদ হন। ব্রাহ্মণপাড়া থানার চান্দলার পাশেই সালদা নদী। এখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি গ্রুপ অবস্থান করে পার্শ্ববর্তী সালদা নদী ও অন্যান্য অঞ্চলে অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা ১৭ই নভেম্বর চান্দলায় পাকিস্তানি সৈন্যদের অবস্থানের ওপর গোলাবর্ষণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানি শিবিরে ৬ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা এখানে শত্রুর দুটি বাঙ্কার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেন|
মুক্তিযুদ্ধের সময় সুবেদার আবদুল ওহাব সম্পর্কে নানা কিংবদন্তি ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর ত্রাস। একের পর এক এম্বুশ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেন তিনি। তাঁর সশস্ত্র তৎপরতার মধ্যে মিরপুর-মাধবপুর এবং চান্দলার এম্বুশ ও অপারেশন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। চান্দলা গ্রামের পূর্ব সীমানা ঘেঁষে প্রবাহিত ঘুঘুর নদী ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর যাতায়াতের পথ। চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার ওহাবের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী গ্রুপ এখানে আসে। তাঁরা সালদা নদীতে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দলকে আক্রমণ করেন। এ আক্রমণে প্রায় ৭০ জন পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের অধিনায়ক কুখ্যাত মেজর বোখারী নিহত হয়।
বুড়িচং বাজারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এসে অত্যাচার, নির্যাতন ও লুটপাট করত। তাই মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করার জন্য ব্রাহ্মণপাড়া থানার বড়ধুশিয়া বাজারের পাশে এম্বুশ নেন। বেলা ১০টার দিকে বুড়িচং থানা থেকে এক প্লাটুন পাকিস্তানি সেনা বড়ধুশিয়া বাজারের দিকে আসতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের এম্বুশের মধ্যে এলে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এই আকস্মিক আক্রমণে ৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়। পক্ষান্তরে মুক্তিযোদ্ধা ল্যান্স নায়েক তৈয়ব আলী শহীদ হন।
২নং সেক্টরের অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম- সালদা নদী রেলস্টেশন এলাকার দায়িত্ব ক্যাপ্টেন গাফফারের ওপর অর্পণ করেন। ৮ই অক্টোবর পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তাঁর বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। গাফফার সালদা নদী রেলস্টেশন দখল করার জন্য পরিকল্পনা করেন। তিনি এক কোম্পানি সৈন্যকে ৪ প্লাটুনে বিভক্ত করে শত্রুর ওপর আঘাত হানতে প্রস্তুত করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯ই অক্টোবর সকালে তিনদিক থেকে পাকিস্তানি সেনা অবস্থানের ওপর আক্রমণ করা হয়। পাকিস্তানি সেনারা তাদের দুটি অবস্থান ছেড়ে অন্য দুটি স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে। সুবেদার বেলায়েত দ্রুত সালদা নদী অতিক্রম করে পাকিস্তানি সেনাদের পরিত্যক্ত বাঙ্কারে অবস্থান নেন। ফলে পাকিস্তানি সেনারা বাজার এলাকা থেকে সালদা নদীর রেলস্টেশনের সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলে এবং পেছনে সরে নয়নপুরে চলে যেতে বাধ্য হয়। সালদা নদী রেলস্টেশন মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পাল্টা আক্রমণ করেও রেলস্টেশন পুনর্দখল করতে পারেনি। ৮ই ডিসেম্বর ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- খাজা নিজামুদ্দিন ভূঁইয়া, বীর উত্তম (পিতা আ. লতিফ ভূঁইয়া, মালোপাড়া), আব্দুল বারেক, বীর বিক্রম (পিতা শাহনেওয়াজ, বাগড়া), এম এ মান্নান, বীর বিক্রম (পিতা মিল্লাত আলী, শিদলাই), মো. আব্দুল আজিজ, বীর প্রতীক (পিতা এম এ মজিদ, ষাটশালা), মো. রবিউল্লাহ, বীর প্রতীক (পিতা জাফর আলী, বড় ধুশিয়া) ও মোহম্মদ মকবুল হোসেন, বীর প্রতীক (পিতা আব্দুল আজিজ, সাহেবাবাদ)।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- খাজা নিজামুদ্দিন ভূঁইয়া, বীর উত্তম (৪ঠা সেপ্টেম্বর লুবাছড়া চা বাগান যুদ্ধে শহীদ), জহিরুল ইসলাম (পিতা সূর্যতালী সরকার, কান্দুঘর), শেখ আবদুল আউয়াল (পিতা শেখ আবদুল লতিফ, মকিমপুর), শেখ মোহাম্মদ গোফরান (পিতা শেখ আবদুল মান্নান, মিরপুর), মো. রফিকুল ইসলাম খন্দকার (পিতা সৈয়দুর রহমান খন্দকার, মকিমপুর), শাহবাজ খান (পিতা আবদুর রশিদ খান, মকিমপুর), মো. সামছুল হক খান (পিতা আজাদ উদ্দিন, মকিমপুর), আবদুল খালেক ফকির (পিতা ওয়াজউদ্দিন, টাকই), মোশারফ হোসেন (পিতা বজলুর রহমান খান, চান্দলা), মো. আয়েত আলী (পিতা মো. রেয়াছত আলী, পূর্ব চণ্ডীপুর), শফিউদ্দিন আহমদ (পিতা মিয়া ফাতের, মাধবপুর), আবদুস সহিদ (পিতা আবিদ আলী, শশীদল), আবদুর রহমান (পিতা কমরউদ্দিন, অলুয়া), মো. মোশারফ হোসেন (পিতা মোবারক হোসেন ভূঞা, নালা) ও সফিল মিয়া, বীর উত্তম- (পিতা আলতাব আলী, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি নামফলক রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা সড়কের মাধবপুর বাসস্ট্যান্ডে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে শহীদ জানু মিয়ার স্মরণে মাধবপুর বাসস্ট্যান্ডে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। [মামুন সিদ্দিকী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড