You dont have javascript enabled! Please enable it!

ব্রাহ্মণশাসনের যুদ্ধ (ঘাটাইল, টাঙ্গাইল)

ব্রাহ্মণশাসনের যুদ্ধ (ঘাটাইল, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ১০ই ডিসেম্বর। এতে দুজন পাকসেনা নিহত ও কয়েকজন আহত হয় এবং ২২ জন আত্মসমর্পণ করে। দুপুর ১২টার দিকে পাকবাহিনীর আরেকটি গ্রুপ ঘটনাস্থলে এলে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এতে একজন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর আহত হন। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের সামনে টিকতে না পেরে পশ্চাদপসরণ করেন।
ব্রাহ্মণশাসন টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার একটি গ্রাম। ঘাটাইল থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এর অবস্থান। ১০ই ডিসেম্বর – আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম-এর নির্দেশে হাবিবুর রহমান, বীর বিক্রম (জাহাজমারা হাবিব নামে পরিচিত) কোম্পানির ১৫-১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকহানাদার বাহিনীর গতিরোধ করার জন্য মধুপুর-টাঙ্গাইল পাকা সড়কের ব্রাহ্মণশাসন গ্রামে অবস্থান নেন। মুক্তিযোদ্ধারা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মূল সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে পজিশনে থাকেন। পশ্চিম পাশে থাকেন সাধুর গলগণ্ডা গ্রামের সৈয়দ মজিবর রহমান, ব্রাহ্মণশাসনের হানিফ উদ্দিন, বীর ঘাটাইলের হোসেন আলী, কর্নার দেলোয়ার হোসেন, আনেহলার দেলোয়ার হোসেন, কাতরার আবু সাঈদ এবং কুচুটির মকবুল হোসেন। তাঁদের গ্রুপে ১টি এলএমজি, ১টি এসএলআর এবং প্রত্যেকের হাতে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও গ্রেনেড ছিল। রাস্তার পূর্ব পাশে মর্টার গ্রুপের অবস্থান।
পজিশনে থাকা অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা লক্ষ করেন উত্তর দিক থেকে পাকা রাস্তা ধরে ২০-২৫ জন হানাদার সেনা পায়ে হেঁটে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে আসছে। রেঞ্জের মধ্যে আসতেই মুক্তিযোদ্ধারা গুলি ছোড়েন। অতর্কিত এ আক্রমণে হানাদাররা আত্মরক্ষামূলক ফায়ার করতে-করতে ব্রাহ্মণশাসন কলেজে গিয়ে ওঠে। মর্টার গ্রুপ কলেজ টার্গেট করে শেল নিক্ষেপ করে। এমতাবস্থায় হানাদাররা কলেজ ছেড়ে পূর্ব দিকে পাহাড়ের রাস্তা ধরে পালিয়ে যেতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পিছু নিলে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গুলি বিনিময় হয়। এতে দুজন পাকসেনা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে না পেরে এক পর্যায়ে ২২ জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকারীদের স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে কাদেরিয়া বাহিনী-র মহানন্দপুর হেডকোয়ার্টার্সে পাঠিয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আবার যার-যার পজিশনে ফিরে আসেন। তখন বেলা দুপুর ১২টা। কয়েকটি জিপে করে পাকবাহিনীর আরো একটি গ্রুপ ধীরে-ধীরে টাঙ্গাইলের দিকে এগুচ্ছিল। পজিশনে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেন। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে প্রচণ্ড গুলি বিনিময় হয়। যুদ্ধে সৈয়দ মজিবর রহমান গুরুতর আহত হন। এমতাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের সামনে টিকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!