You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভদ্রঘাট-ধামকোল গণহত্যা (কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ)

ভদ্রঘাট-ধামকোল গণহত্যা (কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৪ই জুন। এতে ১৯ জন গ্রামবাসী নির্মম হত্যার শিকার হয়। গ্রামের ২০০টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। সিরাজগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে কামারখন্দ উপজেলার ২৭টি পাড়ার সমন্বয়ে একটি বৃহৎ গ্রাম ভদ্রঘাট। এটি কামারখন্দ থেকে প্রায় ৭ কিমি উত্তরে অবস্থিত। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে আবদুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে এ গ্রামে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির- নামে মুক্তিযুদ্ধের একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। এ সংগঠনের মাধ্যমে ছাত্র- যুবকদের রিক্রুট করে তাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। এখান থেকেই তাঁরা বাঘাবাড়ি প্রতিরোধযুদ্ধসহ বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালাতেন। পরবর্তীতে এ সংগঠনের মুক্তিযোদ্ধারা ‘লতিফ মির্জা বাহিনী’ নামে পরিচিত লাভ করে। পাকবাহিনীর কাছে এ সংবাদ অজানা থাকে না। ১৪ই জুন ভোরে পাকবাহিনীর একটি গ্রুপ সিরাজগঞ্জ থেকে এসে ভদ্রঘাটে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা জবাব দেন। তবে পাকবাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে তাঁরা পিছু হটেন। অতঃপর সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান কুখ্যাত দালাল মজিবর রহমান (জগৎগাতী, সিরাজগঞ্জ)-এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পাকবাহিনী ভদ্রঘাট-ধামকোল গ্রামে গণহত্যা চালিয়ে ১৯ জন সাধারণ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এদিন যারা গণহত্যার শিকার হন, তাদের মধ্যে ছিলেন— রাখাল চন্দ্র বসাক (পিতা ষষ্ঠী চন্দ্র বসাক, মধ্যভদ্রঘাট), জোতিন্দ্রনাথ বসাক (পিতা যুধিষ্ঠির চন্দ্র বসাক, মধ্যভদ্রঘাট), ছাদেক আলী শেখ (পিতা ছবের আলী শেখ, খিদ্রাভদ্রঘাট), জয়নাল আবেদীন (পিতা সাহেব আলী, খিদ্রাভদ্রঘাট), মছের উদ্দিন সরকার (পিতা ইউসুফ আলী সরকার, ধামকোল), মাদার বস সরকার (পিতা মছের উদ্দিন সরকার, ধামকোল), আব্দুর রশিদ সরকার (পিতা লুৎফর রহমান সরকার, ধামকোল), আছের উদ্দিন শেখ (পিতা পঁচা শেখ, ধামকোল), মতিয়ার রহমান ওরফে মোংলা (পিতা পঁচা শেখ, ধামকোল), ফজল শেখ (পিতা পঁচা শেখ ধামকোল), শাহজাহান আলী শেখ (পিতা আছের উদ্দিন শেখ, ধামকোল), কাফি মণ্ডল (পিতা ইউসুফ আলী মণ্ডল, ধামকোল), হবিবর রহমান হবি (পিতা সাধু সরকার, ধামকোল), রওশন আলী (উদয়কৃষ্ণপুর) প্রমুখ। একদিন পাঙ্গাসী হাটে যাওয়ার পথে বৈন্যাকান্দি গ্রামের একজন পথচারিকে পাকবাহিনী গুলি করে হত্যা করে। কাজলী বেগম নামে এক নারী হানাদারদের ভয়ে ১৩ দিনের শিশুকন্যা ফুলোরাকে নিয়ে বাড়ির পাশে পাটক্ষেতে লুকিয়ে ছিলেন। হানাদাররা পাটক্ষেতের আল দিয়ে যাওয়ার সময় ফুলোরা কেঁদে উঠলে তারা পাটক্ষেতে প্রবেশ করে সেখানেই কাজলী বেগমকে গুলি করে হত্যা করে। এতদঞ্চলের মাতব্বর মছের উদ্দিন সরকারকে দালাল মজিবর রহমানের ইন্ধনে পাকবাহিনী বাড়ি থেকে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে। গ্রামের ২০০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!