You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.17 | ভদ্রঘাট যুদ্ধ (কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

ভদ্রঘাট যুদ্ধ (কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ)

ভদ্রঘাট যুদ্ধ (কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৭ই জুন। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর এ-যুদ্ধে ১১ জন পাকসেনা নিহত ও ১৩ জন আহত হয়। এখানে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৩ জন গ্রামবাসী আহত হন।
১৭ই জুন ভোরে পলাশডাঙা যুবশিবির-এর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে। তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে জগৎগাতীর রাজাকার মজিবর মৌলভী। মজিবর মুক্তিযোদ্ধাদের খবর পাকিস্তানিদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। সূর্য ওঠার সময় হানাদাররা আসে। সে-সময় তিনটি দলে ভাগ হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শিবির পাহারা দিচ্ছিলেন। শিবিরে তখন লতিফ মির্জা, লুৎফর রহমান অরুণ, সোহরাব আলী সরকার, শফিকুল ইসলাম শফি, শাহজাহান আলী তারা, আব্দুস সামাদ, লুৎফর রহমান মাখন, খোরশেদ আলম, জহির উদ্দিন, কাইছা শামছু, আবদুর রশিদ, গোলাম মোস্তফা, হিরু, সুকুমার, দলিলুর রহমান দুলাল, আব্দুর হামিদসহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। পাহারারত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে লুৎফর রহমান অরুণ প্রথম পাকিস্তানিদের দেখে ফেলেন। তখন ৩০-৩৫ জন পাকিস্তানি সেনা সামনের দিকে এগিয়ে আসছিল। এ খবর অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের জানানো হয়। তাঁরা পজিশন নেন। হানাদাররা তাঁদের আওতার মধ্যে আসামাত্র লুৎফর রহমান অরুণ গুলিবর্ষণ শুরু করেন। পাকসেনারা পাল্টা আক্রমণ করলে যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ১১ জন পাকসেনা নিহত ও ১৩ জন আহত হয়। তখন তারা পিছু হটে ও কৌশল হিসেবে আত্মসমর্পণের ইশারা দেয়। এতে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাসে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েন। এ সুযোগে আবার হানাদাররা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করতে-করতে পিছু হটেন। এ-সময় তাঁরা কিছু অস্ত্র ফেলে আসতে বাধ্য হন। এ-যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও ৩ জন গ্রামবাসী আহত হন।
এ-যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধাদের উপলব্ধি হয় যে, এক জায়গায় স্থায়ীভাবে অবস্থান নেয়া নিরাপদ নয়। এরপর তাঁরা হানাদারদের আঘাত করেই অন্যত্র চলে যাওয়ার কৌশল গ্রহণ করেন। এতে দুধরনের সুবিধা হয়। প্রথমত, স্থায়ী অবস্থান না থাকায় রাজাকাররা তাঁদের অবস্থান জানতে পারত না। দ্বিতীয়ত, একেক সময় একেক জায়গায় আক্রমণ করায় পাকিস্তানিদের ধারণা হয় যে, মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় অনেক। তারা মনে করত প্রতিটি জায়গায় মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি আছে। এতে পাকসেনারা অস্থির হয়ে উঠত
এ-যুদ্ধ চলাকালে পাঙ্গাসী হাটে যাওয়ার সময় বৈন্যাকান্দি গ্রামের একজন পথচারী পাকিস্তানি হানাদারদের গুলিতে নিহত হন। খিদ্রাভদ্রঘাটের কাজলী বেগম তেরো দিনের শিশুকন্যা ফুলোরাকে নিয়ে বাড়ির পাশে পাটক্ষেতে লুকিয়ে ছিলেন। হানাদাররা কাজলী বেগমকে পাটক্ষেতে গুলি করে হত্যা করে। বিকেলে কাজলীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ফুলোরা তখনো পাটক্ষেতের আলের উপর কান্না করছিল। চার মাস পর ফুলোরা মারা যায়। [মাহফুজা হিলালী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড