You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.08 | ভবানীপুর গণহত্যা (আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) - সংগ্রামের নোটবুক

ভবানীপুর গণহত্যা (আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

ভবানীপুর গণহত্যা (আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংঘটিত হয় ৮ই ডিসেম্বর। এতে ২৫ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়। আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি গ্রাম ভবানীপুর। ঘটনার দিন দুপুর ১টার দিকে পাকবাহিনী একই সঙ্গে তালশহর এবং আশুগঞ্জ ক্যাম্প থেকে ভবানীপুর গ্রামে আক্রমণ করে। তালশহর থেকে আসা পাকবাহিনী ভবানীপুর গ্রামে গিয়ে প্রথমেই এ গ্রামের আবছার মিয়ার ছেলে আ. জলিলকে তাদের বাড়ির পুকুর পাড়ে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তারা সরকার বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে হাজি আ. হামিদকে গুলি করে হত্য করে। আ. হামিদ তখন জোহরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। একই সময় হানাদার বাহিনী আ. হামিদের দুই ছেলে আ. গণি ও আ. মিলন, নাতনি ডলি (আ. গণির মেয়ে)-সহ একই পরিবারের ৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এ-সময় আ. হামিদের পুত্রবধূ (আ. গণির স্ত্রী) হাসিনা বেগম ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। এরপর পাকবাহিনী ভবানীপুর গ্রামে আরো ২০ জনকে হত্যা করে। তাদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন- মাওলানা আ. রহমান, আ. মন্নাফ, আবু মিয়া, আহম্মদ আলী, আ. রহমান, সোনা মিয়া, আ. লতিফ, আ. গফুর ফুলবানু, ইয়াসিন বেগম, স্বপ্না বেগম ও হাসেনা বেগম। এছাড়া তারুয়া গ্রামের অজ্ঞাতনামা একজন। হানাদাররা ভবানীপুরে আ. হামিদের বাড়িসহ বহু বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য, ভবানীপুরের পাশের গ্রাম আড়াইসিধায় আওয়ামী লীগ নেতা আ. হামিদ তার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। এ খবর পাকবাহিনীর কাছে পৌঁছার পর তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আড়াইসিধার আ. হামিদের বাড়িতে আক্রমণ চালাতে এসে পথিমধ্যে ভুলক্রমে ভবানীপুরের আ. হামিদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ গণহত্যার পর ভবানীপুরসহ আশপাশের সমস্ত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফলে লাশ দাফন করার মতো কেউ ছিল না। পরদিন ৯ই ডিসেম্বর আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষ এসে ২০টি লাশ বিভিন্ন বাড়ি থেকে তুলে এনে ভবানীপুর গোরস্থানে একত্র করে। কয়েকশত লোক নিহতদের জানাজা পড়ার জন্য জমায়েত হলে সকাল ১১টার দিকে হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, পাকবাহিনী আবার আক্রমণ করতে আসছে। তখন উপস্থিত জনতা যে যেদিকে পারে পালাতে থাকে। এরপর পাকবাহিনী সেখানে না আসায় আশপাশে লুকিয়ে থাকা ২০- ২৫ জন মানুষ দ্রুত ভবানীপুর গোরস্থানে কোনোরকমে লাশগুলো দাফন করে। [আমির হোসেন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড